(দিনাজপুর২৪.কম) রাজধানীর চকবাজারে দেবীঘাটে চারতলা ভবনে আগুনের ছয়জন নিহত হওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার বরিশাল হোটেল মালিক মো. ফখর উদ্দিনের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সাত দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে আজ মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম এ রিমান্ডের আদেশ দেন।
রিমান্ড শুনানিকালে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের কাছে আদালত জানতে চান, ‘আগুনে পুড়ে যে ছয়জন লোক মারা গেল, তাদের কি দোষ ছিল?’ তবে আইনজীবীরা আদালতের এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি।
গত ১৫ আগস্ট চকবাজারের পলিথিন ও প্লাস্টিক কারখানার অগ্নিকাণ্ডে ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার ভোরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার শুভ্যাডা এলাকার জিয়ানগর থেকে ফখর উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার এসআই রাজীব কুমার সরকার আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, মালিক রানা ওই ভবনে কোনো অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখেননি। মানুষের জীবন ও মালামাল ধ্বংস হতে পারে জেনেও অধিক মুনাফা লাভের আশায় ভবনে প্ল্যাস্টিক ও প্ল্যাস্টিক জাতীয় মালামাল গুদামজাত করার জন্য গোডাউন ওহোটেল ভাড়া দেয়। হোটেল মালিক ফখর উদ্দিন অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না রেখে মানুষের জীবন ও মালামাল ধ্বংস হতে পারে জেনেও অধিক মুনাফা লাভের আশায় ব্যবসা পরিচালনা করেন। দুই আসামির অবহেলা ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ কাজের জন্য জীবন বিপন্নের শামিল। তাদের অবহেলার কারণে আগুনের ঘটনা ঘটে ওই খাবার হোটেলে। এতে ছয়জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
মামলার ঘটনায় প্রকৃতপক্ষে ভবনের মালিক ও হোটেল মালিক কতটুকু অবহেলা ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ কার্যকলাপ করেছে, কেন অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখা হলো না এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কার কী ভূমিকা ছিল, মূলত কী কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল—এসব বিষয়ে জানার জন্য আসামির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা প্রয়োজন।
আজ আসামিপক্ষে আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তারা বলেন, ‘ফখর উদ্দিন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। তিনি রুটি, পুরির দোকান চালান। লাকড়ি, কমার্শিয়াল গ্যাস দিয়ে দোকান চালান। ছোট একটি হোটেলের মালিক।’
তখন বিচারক জানতে চান, ‘মারা যাওয়া ছয়জন লোকের কী দোষ ছিল? না, তারা নিজে নিজে মারা গেছে। এ ঘটনায় তাকে জামিন দিলে সমাজে কী বার্তা যাবে।’
তখন আইনজীবী বলেন, ‘যে ধারায় মামলা করা হয়েছে তা জামিনযোগ্য।’ তখন বিচারক বলেন, ‘সমাজের লোক বলবে, ছয়জন লোক মারা গেল আর আদালত আসামিকে জামিন দিয়ে দিলো। জামিনযোগ্য ধারা হলেও এখন জামিন দিতে পারব না।’
সেখানে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রাজীব কুমার বলেন, ‘দোকানে অগ্নিনির্বাপনের যন্ত্র নেই। ওই দোকানের গ্যাস সিলিন্ডার ব্ল্যাস্ট হয়ে আগুন লেগেছে। ২৪ ঘণ্টায় সিলিন্ডার জ্বালিয়ে রাখে। আস্তে আস্তে গরম হয়ে ব্ল্যাস্ট হয়েছে।’
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ফখর উদ্দিনের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে এক দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এর আগে গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার পর ওই ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসে ১০টি ইউনিট। পরে ভেতর থেকে ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত রুবেলের বড় ভাই মো. আলী চকবাজার থানায় মামলা করেন। -অনলাইন ডেস্ক