(দিনাজপুর২৪.কম) ডলার বিক্রি করে বাজারে মার্কিন মুদ্রার জোগান ঠিক রাখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া রিজার্ভের পতন ঠেকাতে আমদানি কমানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসবের পরও রিজার্ভ ঠিক রাখতে পারছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ডলার বিক্রি করে বাজার থেকে ৩৬ হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এতে করে মুদ্রাবাজারে তারল্য সঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের।
এদিকে নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরও চলতি অর্থবছরের শুরুতে বেড়েছে আমদানি। অপরদিকে সেপ্টেম্বরে কমেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। এর মধ্যে কয়েকটি বিদেশি ব্যাংক বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর ঋণসীমা কমিয়ে দিয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশ ব্যাংককে ডলার বিক্রি বাড়াতে হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৩৭৫ কোটিরও বেশি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। ফলে বাজার থেকে উঠে এসেছে ৩৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যেভাবে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক, সে হারে ডলারের সংস্থান তৈরি করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এ কারণে চাহিদা মেটাতে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোও বাড়তি লাভের আশায় ডলার কিনছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ডলার বিক্রির সমপরিমাণ টাকা নিয়ে নেওয়া হয়। এতে করে বেশকিছু ব্যাংক নগদ অর্থ সঙ্কটে ভুগছে।’
এ অবস্থা চলতে থাকলে ঋণ প্রদান ও বিনিয়োগে অচলাবস্থা তৈরি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী, যা করার কথা তাই করা হচ্ছে। এতে কোনো ব্যত্যয় হচ্ছে না। কেউ ডলার কিনতে চাইলে নগদ টাকা দিয়েই কিনতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভের পতন ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি কমানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আমদানি বেড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। অপরদিকে প্রথম দুই মাস রেমিট্যান্স বাড়লেও গত সেপ্টেম্বরে ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে রফতানি কমেছে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ।
মঙ্গলবার কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ১০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়। সোমবার বিক্রি করে আরও ৯ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৩৭৫ কোটিরও বেশি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর বিপরীতে বাজার থেকে উঠে এসেছে ৩৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৬ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন বা তিন হাজার ৬৫৫ কোটি ডলার। গত বছরের একই দিন রিজার্ভ ছিল চার হাজার ৬২৪ কোটি ডলার। এর মানে এক বছরে কমেছে প্রায় ১০ বিলিয়ন বা এক হাজার কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ব্যাংকগুলোর কাছে ৯৬ টাকা দরে ডলার বিক্রি করছে। চলতি অর্থবছরের এ সময় পর্যন্ত ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি বছরের শুরুর দিকেও প্রতি ডলারের দর ছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। এ কয়েক মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকই প্রতি ডলারের দর ১০ টাকা ২০ পয়সা বাড়িয়েছে।
আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিক্রি করা দরের কাছাকাছি ব্যাংকগুলো বেচাকেনা করত। এখন ডলারের দামে ব্যবধান অনেক বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় রফতানি ও রেমিট্যান্সে ৯৯ টাকা দর বেঁধে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনতে পারছে। -ডেস্ক রিপোর্ট
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।