(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) চলতি ট্রেন তো মিলবেই। সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ১৬টি ঈদ স্পেশাল ট্রেন চালাবে রেলওয়ে। ঈদযাত্রায় ১৪ দিনে প্রায় ৩৫ লাখ যাত্রী ভ্রমণ করবেন ট্রেনে। প্রতিদিন ভ্রমণ করবেন আড়াই লাখ। ইতোমধ্যে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩৭৮টি যাত্রীবাহী ট্রেন। যার মধ্যে ১২৫টি আন্তঃনগর ট্রেনও ছুটবে। শনিবার সপ্তাহব্যাপী ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। ৩ এপ্রিল থেকে অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীরা নাড়ির টানে গ্রামে ফিরবেন। অপরদিকে ঈদ ফেরত যাত্রীরা ৩ এপ্রিল থেকে ফিরতি টিকিট কাটবেন। এবারও শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করছে রেল। শনিবার ৯ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট কাটতেও লাখ লাখ মানুষ অনলাইন অ্যাপে হিট করেছেন।
শনিবার বিকালে রেলওয়ে মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, শুধু ঈদে নয়, স্বাভাবিক সময়েও ট্রেনে যাত্রীদের চাপ সবচেয়ে বেশি থাকে। আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী টিকিট দিতে না পারলেও ঈদ উপলক্ষ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টায় অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ করব। প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) ও স্যারের (রেলপথমন্ত্রী) নির্দেশনায় ১৬টি ঈদ স্পেশাল ট্রেন এবং শতাধিক অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করেছি। ঈদযাত্রায় ১৪ দিন স্পেশাল ট্রেনও চলবে। প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ যাত্রী ভ্রমণ করবেন ট্রেনে। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন চালাতে রোলিং স্টকসহ মাঠপর্যায়ে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সরদার সাহাদাত আলী আরও বলেন, নির্ধারিত টিকিটের বিপরীতে লাখ লাখ মানুষ অনলাইন অ্যাপে হিট করেছেন। টিকিট ক্রয় এবং অনলাইনে চেষ্টা করতে গিয়ে নিশ্চয়ই সাধারণ মানুষের অতিরিক্ত অর্থ খরচ হচ্ছে। এক সময় মানুষ টিকিট কাটতে ২-৩ দিন পর্যন্ত দিন-রাত স্টেশন কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করতেন। অর্থ খরচ করে স্টেশনে আসতে হতো। এখন কোনো দুর্ভোগই নেই। অনলাইন ব্যবহারে কিছু অর্থ খরচ হলেও মানুষ টিকিট পেয়ে খুশি। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী টিকিট দিতে পারলে আমরাও খুশি হতাম। সরকার একের পর এক রেলপথ ও ট্রেনের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। রেলে আমূল পরিবর্তন আসছে। ট্রেনের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে যাত্রী পরিবহণও বাড়বে।
রেলওয়ে অপারেশন ও পরিবহণ দপ্তর সূত্র বলছে, এবারই প্রথম ট্রেনের টিকিট ওটিপির (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) মাধ্যমে কাটা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত টিকিট কালোবাজারির কোনো অভিযোগ উঠেনি। অগ্রিম টিকিট কাটার কয়েকদিন আগে বেসরকারি সংস্থা ‘সহজ ডটকম’র সঙ্গে সম্পৃক্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয় টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে। অপারেশন দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, পূর্বের ঈদযাত্রায় শত শত মানুষ রেল ভবন পর্যন্ত চলে আসতেন-বিশেষ ব্যবস্থায় অগ্রিম টিকিট পেতে। সম্প্রতি রেলভবন গেট হয়ে সাধারণ মানুষের প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে। টিকিটসংক্রান্ত বিষয়ে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।এদিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সরওয়ার বলেন, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী টিকিট দেওয়া সম্ভব না হলেও প্রতিদিনই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছে। টিকিট রেখে দেওয়ার কোনো সিস্টেম নেই। কাউন্টার থেকে কোনো অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। আমরা এখন প্রস্তুতি নিয়েছি কী করে যাত্রীদের নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া যায়। স্টেশন চত্বর থেকে শুরু করে গেট ও প্ল্যাটফর্মে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রবেশপথে তিন স্তরবিশিষ্ট বাঁশের অস্থায়ী বেড়া দেওয়া হয়েছে। ৪টি সারি দিয়ে যাত্রীরা স্টেশনে প্রবেশ করবেন। টিকিটধারী যাত্রীরা যাতে সহজে বাড়ি ফিরতে পারেন, সেই জন্যই এই ব্যবস্থা।
জানা যায়, ঈদযাত্রায় যাত্রীদের সুবিধার্থে কমলাপুরসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে স্কাউট সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। একই সঙ্গে রেলওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী এবং বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা স্টেশন এবং ট্রেনে সতর্কাবস্থায় থাকবেন। স্টেশন এবং ট্রেনে থাকবে প্রাথমিক চিকিৎসার বন্দোবস্তও। এবার ঈদযাত্রায় ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলা ট্রেনগুলোও ছুটবে যাত্রী নিয়ে।
ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস বলেন, এবার কমলাপুর রেল স্টেশন কিংবা স্টেশনের বাইরেও কোনো টিকিট কালোবাজারি চোখে পড়েনি। টিকিট কালোবাজারির কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। রেলওয়ে পুলিশ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। ৩ এপ্রিল ঈদযাত্রা শুরু হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে স্টেশন এবং ট্রেনে রেল পুলিশের সঙ্গে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করবেন। যাত্রীরা যাতে কোনো অপরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে খাবার না খান এবং সন্দেহজনক ব্যক্তি চোখে পড়লে পুলিশকে খবর দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, রেলপথমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা মাঠপর্যায়ে প্রতিদিনই পরিদর্শন করছি। রেলপথ, রেলওয়ে ব্রিজসহ স্টেশন, স্টেশন আউটার পরিদর্শনের আওতায় আনা হয়েছে। এ অঞ্চলের বিভিন্ন সেকশনে অতিরিক্ত ইঞ্জিন ও কোচ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোনো ট্রেনের চাকা কিংবা ইঞ্জিন বিকল হলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই তা মেরামত করে ট্রেন চালু করা হবে।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল হোসেন বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে এ অঞ্চলে ১০০ ইঞ্জিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ট্রেন চালক, গার্ডসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে-যার যার দায়িত্ব যেন শতভাগ পালন করেন। মাঠপর্যায়ে দায়িত্বরত রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) পার্থ সরকার জানান, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে রেলপথ একাধিকবার পরিদর্শন করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে আমাদের লোক দায়িত্বে থাকবে। ইঞ্জিন-কোচ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা আশা করছি ঈদযাত্রায় যাত্রীরা নির্বিঘ্নে ট্রেন ভ্রমণ করতে পারবেন।