(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) বগুড়া সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু ও তার সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ফাঁড়িতে এসে যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাদের পিটিয়ে এমপির ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রোববার (৭ এপ্রিল) দিবাগত গভীর রাতে বগুড়া সদর ফাঁড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
মারধরে আহত জেলা যুবলীগের উপ-প্রচার সম্পাদক জিহাদুশ শরীফ পরাগ (৪৮) বর্তমানে শহরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওই সময় জেলা যুবলীগের সদস্য শিহাব উল আলম আদনান নামে আরেকজন হামলার শিকার হন। তবে তার আঘাত গুরুতর নয়।
পরবর্তীতে এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার বিকেলে বগুড়া শহরের সাতমাথায় জেলা যুবলীগের নেতা-কর্মীরা মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। রোববার রাতে বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রঞ্জুর সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ দিয়ে ঘটনার সূত্রপাত।
আহত যুবলীগ নেতা ও স্থানীয়রা জানায়, রোববার রাত ১১টার দিকে শহরের সাতমাথায় জিলা স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাজাহানপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রঞ্জু। এ সময় সাতমাথা থেকে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় আবীর নামে এক তরুণ তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। রাকিবুল উঠে দাঁড়িয়ে আবীরের মোটরসাইকেলের চাবি কেড়ে নেন। সেখানে তাদের মধ্যে হালকা বাগবিতণ্ডা হয়। পরে মোটরসাইকেলের চাবি ফেরত দেন রাকিবুল। এ সময় আবীরকে ‘মদ্যপ’ বলেন তিনি। এতে আবীর ক্ষিপ্ত হয়ে তার বন্ধুদের ফোন দিলে সংসদ সদস্য রিপুর ছেলে প্রতীত আহসান দলবল নিয়ে সেখানে আসেন।
তারা আসার পর সেখানে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পুলিশ বিষয়টি সমাধানের জন্য ছাত্রলীগ নেতা রঞ্জু, যুবলীগ নেতা পরাগ এবং আদনানসহ তাদের সঙ্গে থাকা চাকরিজীবী রঞ্জন নামে আরেক যুবক এবং অন্য পক্ষের আবির ও এমপির ছেলেসহ ইউপি চেয়ারম্যান মিল্টনকে সদর ফাঁড়িতে ডেকে নিয়ে যান।
আবীর বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার পীরব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসিফ মাহমুদের ছেলে এবং সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসানের ছেলে প্রতীত আহসানের বন্ধু।
রাকিবুল ইসলাম বলেন, তখনও জানতাম না সে কে। পরে শুনেছি শিবগঞ্জ উপজেলার পিরব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ছেলে সে। এরপর এমপির ছেলে মোটরসাইকেলে কিশোর গ্যাংয়ের ১৫-২০ জনকে নিয়ে এসে আমাকে ঘিরে মারধর শুরু করে। এ সময় যুবলীগের নেতা পরাগ ভাই ও আদনান আমার সঙ্গে ছিলেন। পরে টহল পুলিশ এসে আমাদের দুই পক্ষকে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। ওই সময় পুলিশ না নিয়ে গেলে আরও ভয়াবহ ঘটনা ঘটত।
কিন্তু এরপরের ঘটনা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন শাজাহানপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। রাকিবুল বলেন, তিনি একজন আইনপ্রনেতা ও আমাদের অভিভাবক। অথচ তিনি ফাঁড়িতে এসে কোনো কিছু যাচাই না করে তার লোকজন দিয়ে পরাগ ভাই, আদনানকে মারধর করেন। আমাকে বিনা কারণে ফাঁড়িতে আটকে রাখা হয়। পরে রাত ৩টা থেকে ৪টার দিকে জেলা যুবলীগের সভাপতি পোদ্দার লিটন দাদা এসে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
যুবলীগের সভাপতি পোদ্দার লিটন জানান, রাতে রাকিবুল আদনানকে পুলিশের কাছে থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসা হয়।
যুবলীগ নেতা পরাগ বলেন, এমপি ফাঁড়িতে আসছেন জেনে আমি তাকে রিসিভ করতে এবং তাকে ঘটনাটি জানানোর জন্য ফাঁড়ির অফিস কক্ষ থেকে বের হই। কিন্তু কোনো কথা হওয়ার আগেই তার লোকজন আমার ওপর হামলা করে। তারা এমপির সামনেই আমাকে এলোপাথারি মারপিট করে। পাইপ, লাঠি দিয়ে হাতে, পিঠে ও মাথায় মারছে তারা। এ সময় জেলা যুবলীগের সদস্য আদনানকেও মারপিট করা হয়।
সোমবার বিকেলের মানবান্ধনে বগুড়া জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মাইসুল তোফায়েল কোয়েল বলেন, সদর আসনের এমপির উপস্থিতিতে যুবলীগ নেতাদের ওপর হামলা হয়েছে। এটি ন্যাক্কারজনক। আমরা হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি। এর মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তী কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে।
বগুড়া জেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক জাকারিয়া আদিল বলেন, পরাগ ভাই ২০-২৫ বছর ধরে যুবলীগের পদে আছেন। বগুড়ায় আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখতে তিনি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এমপির নির্বাচনী এজেন্টও ছিলেন তিনি। অথচ আজ তাকেই ফাঁড়িতে নির্যাতন করা হলো।
শহর যুবলীগের সভাপতি মাহফুজুল আলমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক উদয় কুমার বর্মনের সঞ্চালনায় এ সময় আরও বক্তব্য দেন জেলা যুবলীগের সহসভাপতি মাইসুল তোফায়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক মোশারফ হোসেন।
এ ঘটনার পরপর রোববার রাতে ফাঁড়িতে আসেন বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম এবং সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ। সে সময় বিষয়টি জানতে চাইলে তারা সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান।
সোমবার বিকেলে মানববন্ধন শেষে সাতমাথায় সদর ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) সুজন মিয়া বলেন, ফাঁড়ির ভেতরে কিছু হয়নি। পরাগ নিজে থেকে বাইরে গিয়েছিলেন। আর রাকিবুল, আদনান ওদের রাতে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এসব বিষয়ে বগুড়া সদর আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু জানান, এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। যা ঘটেছে, আমার অজ্ঞাতসারে ঘটেছে। ঘটনাটি দুঃখজনক। -নিউজ ডেস্ক