আব্দুস সালাম, হেড অব নিউজ (দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) ধানের জেলা দিনাজপুরে এখনো কার্যকর হয়নি চালের বস্তায়, ধানের জাত ও মিলগেটের দাম লেখার বিষয়ে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা। ১৪ এপ্রিল থেকে এটি কার্যকরের কথা থাকলেও বাজারে যেসব চাল বিক্রি হচ্ছে তাতে লেখা নেই ধানের জাত ও মিলগেটের দাম।
দিনাজপুর খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী এটি বাস্তবায়ন করার কথা বললেও মিল মালিকরা বলছেন- চাল উৎপাদনের নতুন মৌসুম শুরু না হওয়া পর্যন্ত এটি পুরোপুরি কার্যকর করা সম্ভব নয়।
বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মিল মালিকদের গুদাম থেকে বাণিজ্যিক কাজে চাল সরবরাহের আগে চালের বস্তার ওপর উৎপাদনকারী মিলের নাম, জেলা ও উপজেলার নাম, উৎপাদনের তারিখ, মিলগেটের দাম এবং ধান বা চালের জাত উল্লেখ করার নির্দেশনা জারি করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বস্তার উপর উল্লেখিত এসব তথ্য ১৪ এপ্রিল থেকে পুরোপুরি কার্যকরের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু ধানের জেলা দিনাজপুরে এটি এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি।
মঙ্গলবার দিনাজপুরের প্রধান চালের বাজার বাহাদুরবাজারের বিভিন্ন চালের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, একটি বস্তার গায়েও লেখা নেই চালের জাত বা মিলগেটের দাম।
বাজারের চাল বিক্রেতারা জানান, মিল মালিকদের কাছে তারা ধানের জাত ও মিলগেটের দাম লেখা সম্বলিত চালের বস্তা পাননি। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে চাল বিক্রিতে সুবিধা হবে বলে জানালেন বাজারের চাল বিক্রেতারা।
বাহাদুর বাজারের হোসেন আলি, রফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য চাল বিক্রেতারা জানান, আমরা শুনেছি- এখন থেকে চালের বস্তায় ধানের জাত, মিলগেটের দাম, উৎপাদনের তারিখ, উৎপাদনকারী মিলের নাম উল্লেখ থাকবে। এটা মিল মালিকদের কাজ; কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত মিল মালিকদের কাছে যেসব চাল কিনে এনে বিক্রি করছি, সেসব চালের বস্তায় এমন তথ্য লেখা নেই।
এসব চাল বিক্রেতা জানান, এটি করলে আমাদের জন্য ভালো হবে। কারণ মিল মালিকরা চালের দাম বাড়ানোর পর বাজারে দাম বেড়ে গেলে আমাদেরই দোষারোপ করা হয়; কিন্তু বস্তার গায়ে যখন চালের মিলগেটের দাম উল্লেখ থাকবে- তখন আর আমাদের দোষ হবে না। আমরা নির্দিষ্ট লাভ রেখেই চাল বিক্রি করতে পারব।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন চালের দোকানদার আশংকা প্রকাশ করে বলেন, এটি মিল মালিকরা বাস্তবায়ন করবে বলে মনে হয় না।
এদিকে মিল মালিকরা বলছেন, চাল তৈরির মৌসুম এখন প্রায় শেষ। নতুন মৌসুম শুরু না হওয়া পর্যন্ত এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইকবাল চৌধুরী দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, আর বস্তার গায়ে ধানের জাত ও মিলগেটের দাম লিখার জন্য প্রিন্টিং মেশিনও সংগ্রহ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যেহেতু আমরা একটি মৌসুমের প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি, তাই নতুন মৌসুম অর্থাৎ বোরো মৌসুমের ধান উঠা শুরু হলে এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
চালের বাজারের এমন চিত্র এবং মিল মালিকদের এমন কথার পরও দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসেন দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন অন্য কথা। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এই পরিপত্র পাওয়ার পরই এটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে দিনাজপুরের মিল মালিকরা এটি বাস্তবায়ন করেছে বলে জানান তিনি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কামাল হোসেন আরও বলেন, কোনো মিল মালিক এটি বাস্তবায়ন না করলে নেওয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা।
উল্লেখ্য, ধানের জেলা দিনাজপুরে প্রতিবছর চাল উৎপাদন হয় ১৫ লাখ মেট্রিক টন। এই জেলয় অটোরাইসমিল রয়েছে আড়াই শতাধিক। এছাড়াও সেমি অটো রাইস মিল রয়েছে পাঁচ শতাধিক এবং হাসকিং মিল রয়েছে প্রায় এক হাজার।