(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) গেলো রমজানজুড়ে ভোক্তাদের ভুগিয়েছে নিত্যপণ্যের দাম। সেই রেশ কাটেনি ঈদের পরে, এখনও। বরং সপ্তাহ ব্যবধানে নিত্যপণ্যের বাজার হয়ে ওঠেছে আরও অস্থির। এতে চাপ বাড়ছে মধ্যবিত্তের সংসারে।
আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ছুটির দিনে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, আগানগর এবং রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও হাতিরপুল কাঁচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে দাম বেড়েছে মাছ-মাংস, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের। বিক্রেতারা জানান, ঈদের পর এখনও পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য না আসায় দেখা দিয়েছে সরবরাহ সংকট। এতে কিছুটা বেড়েছে দাম। তবে এটি সাময়িক। সরবরাহ বাড়লেই, দাম কমতে শুরু করবে। আর ক্রেতারা বলেন, রোজার আগে থেকেই বাড়ছে পণ্যের দাম। রোজায় সেটি আর চড়েছে। কিন্তু ঈদের পর সেই দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চাপ বাড়ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের সংসারে।
আলতাফ আহেমেদ নামে একজন বেসরকারি চাকরিজীবি বলেন, যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তাতে মধ্যবিত্তদের সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়দিন পর জায়গা-জমি বিক্রি করে খেতে হবে।
আরেক ক্রেতা জয় বিশ্বাস বলেন, সরকারের উচিত এখনই নিত্যপণ্যের দামের লাগাম টেনে ধরা। শুধু পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেই হবে না, সেটির বাস্তবায়ন করতে হবে।
এদিকে, ১৮ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) বোতলজাত সয়াবিন ও খোলা পাম তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। ঊর্ধ্বগতির বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির এ ঘোষণা যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে নিরুপায় ভোক্তাদের ওপর। ভোক্তারা বলেন, এমনিতেই সব পণ্যের দাম বেশি। তার ওপর আবার বাড়ানো হলো সয়াবিন তেলের দাম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে সংসার চালানোই দায়।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৬৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৮১৮ টাকা। আগে এটির দাম ছিল ৮০০ টাকা। আর পাম অয়েলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩৫ টাকা। তবে ২ টাকা কমেছে খোলা সয়াবিন তেলের দাম। বিক্রি হবে ১৪৭ টাকায়। তবে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না ভোজ্যতেল। রাখা হচ্ছে বাড়তি দাম। খুচরা বিক্রেতারা জানান, ডিলার পর্যায় থেকে ঘোষণার আগেই দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে বাজারেও বেড়েছে দাম।
এদিকে, সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়েছে শাক-সবজির দাম। বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৬০-৭০ টাকা, করলা ৫০-৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, শসা ৩০-৪০ টাকা ও লতি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি পেঁপে ৩৫-৪০ টাকা, খিরাই ৩০-৪০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, টমেটো ৩৫-৪০ টাকা ও পটল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়।
আর প্রতিকেজি আলু ৫৫ টাকা, কহি ৩০-৪০ টাকা, ঝিঙে ৭০-৮০ টাকা, কাকরোল ১২০ টাকা ও চিচিঙ্গা ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি পিস লাউয়ের জন্য ৪০-৫০ টাকা ও প্রতি ডজন লেবুর জন্য গুনতে হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা।
দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচেরও। পাইকারিতে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায় ও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। এছাড়া বাজারে লালশাকের আঁটি ১৫ টাকা, পাটশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, কলমি ১৫ টাকা ও পালংশাক ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে দাম বেড়েছে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। আর কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতি কেজি দেশি রসুন ১৬০-১৭০ টাকায় ও আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়। আদা আগের বাড়তি দামেই ২০০ থেকে ২২০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে। স্বস্তির খবর নেই মাছের বাজারেও। চড়া বেশিরভাগ চাষের ও দেশি মাছের দাম। বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে মাছের সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে। বাজারে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০-২৩০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০-২২০ টাকা, চাষের শিং ৫০০ টাকা, চাষের মাগুর ৫৫০ টাকা ও চাষের কৈ বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকায়। আর আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ও আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি কেজি দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ থেকে টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা ও ৬০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়।
কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী হরিপদ বলেন, বাজারে মাছ তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কমছে না দামও।
এদিকে ঈদের আগে হঠাৎ চড়ে যাওয়া মাংসের দামেও নেই সুখবর। দাম সামান্য কমলেও এখনও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামেই। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ২২০-২৪০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৮০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০-৭০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়।ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে মুরগি নেই। তাছাড়া বেড়েছে মুরগির উৎপাদন খরচ। যার প্রভাবে বাড়ছে দাম। কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের মুরগি বিক্রেতা রিপন বলেন, মুরগির খাবার খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এতে পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও।
অন্যদিকে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতিকেজি খাসির মাংস এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
বিক্রেতারা বলেন, কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে গরু বিক্রি করছেন না খামারিরা। এতে সরবরাহ ঘাটতিতে দাম বেড়েছে গরুর। ফলে বাড়ছে দামও। গরুর দাম না কমলে সামনে দাম আরও বাড়বে।
নিত্যপণ্যের অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়। আর বিক্রেতারা বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে। -নিউজ ডেস্ক