(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) সরকারি কর্মচারীদের জন্য ঘোষিত ৫ শতাংশ বিশেষ ভাতার আদেশ পুনর্বিবেচনা এবং নবম পে-স্কেল, রেশনিং পদ্ধতি চালুসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারি দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ। দাবি আদায়ে মানববন্ধন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা।
শুক্রবার (৩ মে) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
বৈষম্য দূর করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের এ ঘোষণায় প্রজাতন্ত্রের ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারিরা চরমভাবে হতাশ ও ক্ষুব্ধ। সরকারের দেওয়া ৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা বর্তমান বাজার ব্যবস্থার সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধায় ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারিদের বৈষম্য আরও বৃদ্ধি হয়েছে। ১১-২০ গ্রেডের অধিকাংশ কর্মচারিদের মূল বেতন বিশ হাজার টাকার নীচে, তাদের আগামী ৪/৫ বছরেও বিশেষ সুবিধা সর্বনিম্ন এক হাজার টাকার উর্দ্ধে উঠবে না। অথচ ১-৯ গ্রেডের কর্মচারিদের এ সুবিধা চত্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আমরা এ ধরণের বিশেষ সুবিধা চাইনি। আমরা চেয়েছি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারিদের মূল বেতন বৃদ্ধি। যাতে কর্মচারিরা পরবর্তীতে এর সুবিধা পেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, যেখানে গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারি ভাইদের বেতন ২০২৩ সালে আট হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার করা হয়েছে। সেখানে সরকারি কর্মচারীদের সর্বনিম্নগ্রেড ৮ হাজার ২৫০ টাকা। এটি অত্যন্ত অমানবিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
এ অবস্থায় সরকারের দেওয়া ৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা পুনঃবিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বর্তমান সময়ের মুদ্রাস্ফীতির সাথে সংগতি রেখে তা মূল বেতনের সাথে সংযোজন ও সকল ভাতা যুগোপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন সরকারি কর্মচারীরা। একইসঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে বৈষম্যমুক্ত ৯ম পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে তারা।
সাত দফা দাবিসমূহ:
১. পে-কমিশন গঠন করে ৯ম পে স্কেল বাস্তবায়ন করতে হবে। পে-স্কেল বাস্তবায়নের পূর্বে অন্তবর্তীকালীন কর্মচারীদের জন্য ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান করতে হবে।
২. রেশনিং পদ্ধতি চালুসহ ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা অনুযায়ী ১০ ধাপে বেতন স্কেল নির্ধারণসহ পে-কমিশনে কর্মচারী প্রতিনিধি রাখতে হবে।
৩. সচিবালয়ের ন্যায় সকল দফতর, অধিদফতরের পদনাম পরিবর্তনসহ ১০ম গ্রেডে উন্নীত করণ এবং এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রনয়ণ করতে হবে।
৪. টাইম স্কেল সিলেকশন গ্রেড পূণর্বহাল সহ বেতন জ্যেষ্ঠতা পূনঃবহল, বিদ্যমান গ্রাচুইটি/আনুতোষিকের হার ৯০ শতাংশের পরিবর্তে ১০০ শতাংশ নির্ধারণ ও পেনশন গ্রাচুইটি ১ টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
৫. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের আপীল বিভাগের রায় বাস্তবায়নসহ সহকারী শিক্ষকদের বেতন নিয়োগ বিধি-২০১৯ এর ভিত্তিতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ ও অধস্তন আদালতের কর্মচারিদের বিচার বিভাগীয় সহায়ক কর্মচারি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৬. প্রাথমিক শিক্ষার দপ্তরী কাম প্রহরীসহ আউট সোর্সিং পদ্ধতি বাতিল পূর্বক উক্ত পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত ও উন্নয়ন খাতের কর্মচারীদের রাজস্বখাতে স্থানান্তর করতে হবে। ব্লক পোষ্টে কর্মরত কর্মচারীসহ সকল পদে কর্মরতদের পদোন্নতি বা ৫ বছর পর পর বেতন ছেলের উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে।
৭. বাজারমূল্যের উর্দ্ধগতি ও জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সমন্বয় পূর্বক সকল ভাতাদি পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। চাকুরীতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়স সীমা ৬২ বছর নির্ধারণ করতে হবে।
আগামী ৯ মের মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে ১০ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন, ১২ মে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া আগামী ২১ মে রাজধানীর আগারগাঁও, ২৯ মে মহাখালী ও ৫ জুন সেগুনবাগিচায় আঞ্চলিক সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারি দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ। এর পরেও দাবি বাস্তবায়ন না হলে পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।