(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) আগামী মাসে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। এ পর্যায়ে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা মূল্য ১০ থেকে ১২ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে। যদিও বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে কাজ করছেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে ভর্তুকি কমাতে এমনিতেই দাম বাড়াতে হতো। হঠাৎ করে ডলারের বিপরীতে টাকার দাম এক লাফে সাত টাকা কমে যাওয়ায় বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় আগামী মাস থেকে দাম সমন্বয়ের মাধ্যমে বাড়ানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দামও বাড়ানো হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পিডিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলে এখন যে মূল্যস্ফীতি আছে, তা আরও বাড়বে। প্রচণ্ড চাপে পড়বে সাধারণ মানুষ। সামগ্রিক অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সাধারণ মানুষকে না খেয়ে জীবনযাপন করতে হবে। তারা বলছেন, উৎপাদন পর্যায়ে খরচ কমানো এবং জ্বালানির সদ্ব্যবহার বাড়াতে পারলে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না।
বিদ্যুৎ ও পিডিবির দুই কর্মকর্তা জানান, টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে অনেকখানি। এ কারণে জাতীয় বাজেটের আগে মূল্য সমন্বয়ের মাধ্যমে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে কাজ চলছে। জানা গেছে, ডলারের বিপরীতে এক টাকা অবমূল্যায়ন হলে পিডিবির বার্ষিক ব্যয় ৪৭৪ কোটি টাকা বেড়ে যায়। এ হিসেবে সাত টাকার অবমূল্যায়নের বিপরীতে পিডিবির বার্ষিক খরচ ৩ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা বেড়ে যাবে। এজন্য জুনে বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। খুচরা ও পাইকারি বিদ্যুতের দাম কম-বেশি ১০ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। এখনো এটি চূড়ান্ত করা হয়নি।
এরই মধ্যে বিদ্যুতের দাম বছরে চার-পাঁচবার সমন্বয়ের কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গত শুক্রবার তিনি বলেন, এ খাতে ধীরে ধীরে ভর্তুকি তুলে দেওয়া হবে।
পিডিবির কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বব্যাপী ও দেশের নানামুখী সংকটে গত বছরগুলোতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সমানভাবে বিপাকে ফেলেছে সরকার ও গ্রাহকদের। ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৯ বার। শুধু গত দেড় বছরেরও কম সময়ে এ দাম বাড়ে চারবার। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রাহক পর্যায়ে ৩ টাকা ৭৩ পয়সায় থাকা ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম ১৪০ শতাংশ বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা ৯৫ পয়সা।
এর পেছনে কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আমদানিনির্ভর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত প্রায় পুরোপুরি ডলারকেন্দ্রিক। তেল, কয়লা, এলএনজি কিংবা ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি, বিদ্যুৎকেন্দ্রের দেনা, বিদেশি কোম্পানির পাওনা—সবই পরিশোধ হচ্ছে ডলারে। পাশাপাশি আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিতে গিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ভর্তুকিমুক্ত করাসহ নানা সংস্কারের পথে হাঁটতে হচ্ছে সরকারকে।
জানা গেছে, গত বছর দেশে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়েছে। আর এলএনজি আমদানি ও টার্মিনাল ভাড়া বাবদ খরচ হয়েছে সাড়ে ৩০০ কোটি ডলার। জ্বালানি খাতের ব্যয় মোট আমদানি ব্যয়ের ১৫ শতাংশ। ডলারের বিপরীতে ৭ টাকা অবমূল্যায়নের কারণে টাকার অঙ্কে খরচ বাড়বে ৬ শতাংশ।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ খাতে অযৌক্তিক ব্যয় কমাতে হবে। ট্যাক্স-ভ্যাটের মতো রাজস্ব খাত থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত মুক্ত রাখতে হবে। জ্বালানির দক্ষ ব্যবহার বাড়াতে হবে। এ ছাড়া কিছু নীতি সংস্কার করলে দাম না বাড়িয়েও ঘাটতি সমন্বয় সম্ভব। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় কমিয়ে আনলে দাম বাড়াতে হবে না।
সর্বশেষ সরকার নির্বাহী আদেশে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ায়। খুচরায় দাম সাড়ে ৮ শতাংশ এবং পাইকারিতে ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। এর আগে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়। ওই সময় আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে শূন্য থেকে ৫০ ইউনিটের দাম ৩ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৩৫ পয়সা, শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিটের দাম ৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৮৫ পয়সা, ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিটের দাম ৬ টাকা ১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৬৩ পয়সা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিটের দাম ৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৯৫ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের দাম ৬ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ৩৪ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের দাম ১০ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৫১ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের দাম ১২ টাকা ৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৩ টাকা ২৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন অধ্যাদেশ-২০২২ সংশোধনের কারণে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পায় সরকার। -নিউজ ডেস্ক