(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে আগামীকাল মঙ্গলবার (২১ মে) দেশের ১৫৬ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ২৪টি উপজেলায় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। বাকিগুলোতে সরাসরি ব্যালটে ভোট নেওয়া হবে। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
এই ধাপে ১৫৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও আদালতের নির্দেশে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাই দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬ উপজেলায় ভোটের লড়াই চলবে।
ইতোমধ্যে এসব উপজেলায় ভোটগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি সেরেছে নির্বাচন কমিশন। এই পর্বে ১৩ হাজার ১৬টি কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে। এরমধ্যে দুর্গম ও উপকূলীয় অঞ্চল বিবেচনায় ৩০টি উপজেলার ৬৮৫ কেন্দ্রে সোমবারই (২০ মে) ব্যালট পাঠানো হয়েছে। বাকিগুলোতে মঙ্গলবার সকালে ব্যালট পৌঁছবে।
নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসি। ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য। গতবারের তুলনায় এবার ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে আশা করছেন নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টরা।
দ্বিতীয় ধাপের এই নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২২ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে সাতজন চেয়ারম্যান, আটজন ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাতজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। রাউজান ও কুমিল্লা আদর্শ সদর– এই দুই উপজেলায় তিনটি পদেই একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে এসব উপজেলায় ভোট করার প্রয়োজন পড়ছে না।
এই পর্বে ১৩ হাজার ১৬টি কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ ৯১ হাজার ৫৮৯টি। ভোটার তিন কোটি ৫২ লাখ চার হাজার ৭৪৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক কোটি ৭৯ লাখ পাঁচ হাজার ৪৬৪ জন এবং নারী এক কোটি ৭২ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭ জন। হিজড়া ভোটার ২৩৭ জন।
এই ধাপে মোট এক হাজার ৮২৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬০৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৯৩ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের জন্য তফসিল হয়েছিল ১৬১ উপজেলার। স্থগিত, ধাপ পরিবর্তন ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার ভোট হবে ১৫৬ উপজেলায়।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, রোববার রাত ১২টা থেকে ২২ মে রাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। আর ২০ মে দিবাগত রাত ১২টা থেকে ২১ মে রাত ১২টা পর্যন্ত ট্যাক্সিক্যাব, পিকআপ, মাইক্রোবাস ও ট্রাক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, যানজট নিরসন ইত্যাদি প্রয়োজনে বাস্তবতার নিরিখে ও স্থানীয় বিবেচনায় উল্লিখিত যানবাহন ছাড়াও যে কোনো যানবাহন চলাচলের ওপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। তবে নির্বাচনি এলাকায় রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী/তাদের নির্বাচনি এজেন্ট, দেশি/বিদেশি পর্যবেক্ষকদের (পরিচয়পত্র থাকতে হবে) ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য।
তাছাড়া, নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত দেশি/বিদেশি সাংবাদিক (পরিচয়পত্র থাকতে হবে), নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক এবং কিছু জরুরি কাজ যেমন-অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য উল্লিখিত যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর ও জরুরি পণ্য সরবরাহসহ অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবে।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার সুবিধার্থে উচ্চ পর্যায়ের একটি মনিটরিং সেল থাকবে কমিশনে। এই সেলে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রতিনিধিদেরও রাখা হয়। সেলটির নেতৃত্বে থাকবেন স্মার্টকার্ড তথা আইডিইএ-২ এর প্রকল্প পরিচালক আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সায়েম।
আইন-শৃঙ্খলা সমন্বয় ও মনিটরিং সেলটিতে জননিরাপত্তা বিভাগ, পুলিশ সদর দপ্তর, বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব আনসার ও ভিডিপির প্রতিনিধি এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের প্রতিনিধি থাকবেন।
নির্বাচন উপলক্ষে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতকরণে আইন-শৃঙ্খলা সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডের সমন্বয় সাধন ও সুসংহতকরণের লক্ষ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইন-শৃঙ্খলা সেলও গঠন করা হয়েছে।
ষষ্ঠ উপজেলা ভোটে দেশের মোট ৪৯৫ উপজেলার মধ্যে নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫ উপজেলায় চার ধাপে ভোট হচ্ছে এবার। পরে মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বাকিগুলোয় ভোটের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপের ১৩৯ উপজেলায় ভোট হয় ৮ মে। এসব উপজেলায় গড়ে ৩৬ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পড়ে।
এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২২টি, দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি, তৃতীয় ধাপে ২৪ ও চতুর্থ ধাপে দুটি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি; বাকিগুলোয় ব্যালট পেপারে ভোট হবে।
২১ মে দ্বিতীয় ধাপের পর ২৯ মে তৃতীয় ধাপে ও ৫ জুন চতুর্থ ধাপের ভোট রয়েছে। -নিউজ ডেস্ক