(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। তবে সবার নজরে মাত্র ইন্ডিয়া জোটের ফলাফল। ২৮ বছরের জোটকে টেক্কা দিচ্ছে এক বছর আগে গড়া এই জোট। বিশেষ করে এবারের নির্বাচনে নজর কেড়েছে কংগ্রেসের ফলাফল। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও বড় দল যারা প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে বসেছিল, তারাই আবার ফিনিক্স পাখির মতো উঠে দাঁড়িয়েছে।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে ১০০ আসনে একাই জয় পেয়েছে বারবার ভারত শাসন করা কংগ্রেস। শেষবার কংগ্রেস ভোটের নিরিখে তিন সংখ্যা পার করেছিল ২০০৯ সালে। সেই বছর ২০৬ আসনে জয়ী হয়েছিল কংগ্রেস। দ্বিতীয়বারের জন্য তৈরি হয়েছিল মনমোহন সিংয়ের সরকার।
বিগত দুটি লোকসভা নির্বাচনেই বিজেপি যেখানে দারুণ ফল করেছিল, সেখানেই ক্রমাগত অবনতি হয়েছিল কংগ্রেসের। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মাত্র ৪৪টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস, ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৫২টি আসন পেয়েছিল ঐতিহ্যবাহী দলটি। সে বছর কংগ্রেসের কাছে আরও বড় ধাক্কা ছিল আমেঠী আসন হারানো। ওই আসন থেকে হেরে যান রাহুল গান্ধী।
২০১৪ সাল থেকে কংগ্রেসের যে পতন হয়েছিল, তার প্রধান কেন্দ্রই ছিল হিন্দিবলয়। গুজরাট থেকে রাজস্থান, বিহার থেকে ঝাড়খণ্ড, মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ- সর্বত্র বয়েছিল মোদি ঝড়। ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৩৩৬টি আসনেই জয়ী হয়েছিল বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ। বিজেপি একাই ২৮২ আসন পেয়েছিল। উত্তর প্রদেশে মাত্র দুটি আসনেই জিতেছিল কংগ্রেস। আমেঠী ও রায়বরেলী।
২০১৯ সালে বিজেপির জয়ের পথ আরও মসৃণ হয়। বিজেপি একাই পেয়েছিল ৩০৩ আসন। জোটসঙ্গীদের নিয়ে ৩৫৩ আসনে জয়ী হয়ে কেন্দ্রে ফের ক্ষমতায় ফেরে এনডিএ। সেখানেই কংগ্রেস আরও ধাক্কা খায়। আমেঠীতে রাহুলের হার সেই কাটা ঘায়ে আরও নুনের ছিটে ছিল।
তবে যে হিন্দি বলয় থেকে ভোট হারিয়েছিল কংগ্রেস, ২০২৪ সালের নির্বাচনে সেখানেই আবার ধীরে ধীরে উত্থান হয়েছে কংগ্রেসের। পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতে কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। তেলঙ্গানা ও কর্নাটকে শাসক দল হওয়ার সুবিধাও কিছুটা হলেও পেয়েছে কংগ্রেস। যদিও সেখানে আসন সংখ্যার হারে এগিয়ে বিজেপিই। বিহারে যেখানে তিনটি আসনে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস, সেখানেই কেরলে ১৪টি আসনে জয়ী। মোদির গড় গুজরাটেও একটি আসন ছিনিয়ে নিতে পেরেছে কংগ্রেস। পাঞ্জাবেও তুলনামূলকভাবে ভালো ফল কংগ্রেসের। রাজ্যের শাসক দল আম আদমি পার্টি যেখানে তিনটি আসন পেয়েছে, সেখানেই কংগ্রেস সাতটি আসনে জয়ী হয়েছে।
এদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো বিজেপির একার পক্ষে সরকার গঠন অসম্ভব হওয়ায় এই সুযোগ নিতে চাইছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইন্ডিয়া। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং মল্লিকার্জুন খড়গে বলেছেন, তারা জোটের বৈঠকে চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডিইউ) বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন।কংগ্রেসের একসময়ের মিত্র নাইডু ও নীতীশের দল এবার বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট থেকে লড়ছে। তবে তাদের দুইজনের দল এমন পরিমাণ আসন পেয়েছে যে, যারাই সরকার গঠন করতে চাইবেন তাদেরকেই প্রয়োজন হবে নাইডু আর নীতীশের।
মঙ্গলবার বিকেলে দিল্লিতে ২৪ নম্বর আকবর রোডে এআইসিসি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে দুজনেই বরং ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইন্ডিয়া জোটের অন্য শরিকদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেই তারা এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে রাহুল গান্ধীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এনডিএ (বর্তমান আকারে) যদিও গরিষ্ঠতা পেয়ে গেছে, সেই জোটের একাধিক শরিক কিন্তু আগে কংগ্রেসেরও রাজনৈতিক সঙ্গী ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস কি বিরোধী আসনে বসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে না কি তারাও সরকার গড়ার জন্য চেষ্টা চালাবে?
জবাবে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘আমরা আমাদের ইন্ডিয়া জোটের অন্য শরিকদের সঙ্গে শিগগির আলোচনায় বসব। আমার ধারণা, সেই বৈঠক আগামীকাল (বুধবার) অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রশ্নগুলো নিয়ে সেখানে আলোচনা হবে এবং এর উত্তর খোঁজা হবে। আমরা আমাদের জোট শরিকদের মর্যাদা দিই এবং তাদের মতামত না নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
আরও নির্দিষ্ট উত্তরের জন্য চাপাচাপি করা হলে রাহুল গান্ধী শুধু বলেন, ‘ইন্ডিয়া জোট এ ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেবে তারাও সেই অনুযায়ীই চলবেন।’
তবে একই প্রশ্নের জবাবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের উত্তর ছিল আরও ইঙ্গিতপূর্ণ। কারণ তার কথায় আভাস ছিল, কংগ্রেস এখন ‘নতুন রাজনৈতিক সঙ্গী’ খোঁজার চেষ্টা করবে।
হিন্দিতে প্রশ্নের জবাব দিয়ে খাড়গে বলেন, ‘যতক্ষণ না আমরা জোটের শরিকদের সঙ্গে এবং নতুন শরিকদের সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করছি... যে কীভাবে আমরা একযোগে কাজ করতে পারি ও গরিষ্ঠতা পেতে পারি, ততক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।’
খাড়গে বলেন, ‘আমি যদি এখনই সব কৌশল ফাঁস করে দেই, তাহলে প্রধানমন্ত্রী মোদি তো সতর্ক হয়ে যাবেন।’
ফলে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের কথাবার্তা থেকে আভাস মিলেছে, তারা আপাতত সব রাস্তাই খোলা রাখতে চাইছেন এবং প্রেসিডেন্টের কাছে সরকার গড়ার দাবি জানানোর সম্ভাবনা নাকচ করে দিচ্ছেন না। শেষ পর্যন্ত নীতিশ ও নাইডুর সমর্থনে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট দিল্লির ক্ষমতার মসনদে আবার আসিন হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। -নিউজ ডেস্ক