(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন আপাতত কোন দিকে যায় তা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে আপিল বিভাগ থেকে আন্দোলনকারীদের দাবির পক্ষে কোনো আদেশ এলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে- এমন ধারণা ছিল সবার। কিন্তু হয়েছে ঠিক উল্টোটা। বুধবার (১০ জুলাই) কোটা বাতিলে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের ওপর আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থা জারি করলেও খুশি নন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
ইতোমধ্যে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে কোটা সংস্কারে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। ফলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে জড়ো হচ্ছেন নির্ধারিত স্পটে। সড়কে যান চলাচল বন্ধ রেখে বসে বসে স্লোগান আর গান-কবিতায় মাতিয়ে রাখছেন আন্দোলনকারীরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যত জোরদার হচ্ছে রাজধানীর মানুষের ভোগান্তি তত বাড়ছে৷ বিশেষ করে নারী-শিশু ও বয়স্ক মানুষ পড়েছেন বেশি দুর্ভোগে৷
আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ঢাকায় যেসব জায়গায় অবরোধ করার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল সকাল থেকে খুব একটা শিক্ষার্থীদের চাপ ছিল না সেখানে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি বদলে গেছে। বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। এতে ওইসব এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বকশিবাজার মোড় ও চানখারপুল মোড়ে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করায় এর প্রভাব পড়েছে পুরান ঢাকার অলিগলিতে।
অন্যদিকে পল্টন মোড়-জিপিওতে সড়কে বসে আন্দোলন করায় গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকা, মতিঝিলে ছড়িয়ে পড়েছে যানজট। মানুষজন পড়েছেন ভোগান্তিতে।
এছাড়া শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, ফার্মগেট, বাংলামোটর, আগারগাঁও, মহাখালী, বনানী এলাকায় শিক্ষার্থীরা সড়কে বসে পড়ায় ভোগান্তি দেখা দিয়েছে বিমানবন্দরের দিকে যাওয়া যাত্রীদেরও।
এদিকে আপিল বিভাগের আদেশের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি, এটা আমাদের নির্বাহী বিভাগের কাছে দাবি। কিন্তু হাইকোর্ট যেগুলো করছে পেছানো, স্থগিত করা, এক মাস দুই মাস এক সপ্তাহ, এইগুলো প্রহসনের চরম মাত্রা।’
হাইকোর্টের রায় নিয়ে আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে বসব, সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
আপিল বিভাগের রায় ঘোষণা সময় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কোটার বিষয়ে একটা জাজমেন্ট হয়ে গেছে। আন্দোলন যারা করছে তা অ্যাপ্রিসিয়েট করা যায় না। রাস্তায় শ্লোগান দিয়ে আদালতের রায় বন্ধ করা যাবে না৷ আন্দোলনকারীদের উস্কিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাচ্চাদের ভুল বোঝানো হচ্ছে। টেলিভিশনে অনেকেই কথা বলছেন। শিক্ষকদের উচিত তাদের বোঝানো।
উচ্চ আদালতের রায়ের পর সংবাদ সম্মেলন করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। তিনিও শিক্ষার্থীদের আদালতের ওপর আস্থা রেখে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি। তারা পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাজধানীজুড়ে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সাদা পোশাকে আছেন গোয়েন্দা সদস্যরাও।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপস) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, পুলিশ সব সময় সব কাজের জন্য প্রস্তুত থাকে। আমরা কী কাজ করব না করব সেটা পরে পরিস্থিতি অনুযায়ী দেখা যাবে। এজন্য আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আছে। এটা পরবর্তী সিদ্ধান্ত। এখন পর্যন্ত আমরা আমাদের জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন আছি।-নিউজ ডেস্ক