(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) জুনের প্রথম সপ্তাহে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় আসার পরদিন থেকে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। জুলাইয়ে এসে সেই বিক্ষোভের মাত্রা বেড়ে যায়।
এক পর্যায়ে অচল হয়ে পড়ে পুরো রাজধানী। সংঘাত ছড়ায় সারা দেশে। রাজধানী ঢাকার যেসব এলাকায় বেশি সংঘাত হয় তার মধ্যে অন্যতম যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া। মৃত্যু হয় বেশ কজনের। হানিফ ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী কাজলা পাড়ের দুটি টোল প্লাজা পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
ভয়ে-আতঙ্কে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ পুরো এক সপ্তাহ ছিলেন ঘরবন্দী। শুক্রবার রাতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তবে মানুষের মধ্যে এখনও আতঙ্ক রয়ে গেছে। সেই সঙ্গে রয়ে গেছে ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন।
সরেজমিনে যাত্রাবাড়ী,কাজলা ও শনির আখড়া এলাকা ঘুরে ও এসব এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
শনির আখড়ায় কথা হয় আতিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি এই এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত ভ্রাম্যমাণ দোকানে জুস বিক্রি করেন। আতিকুর রহমান বলেন, ৮ দিন পরে দোকান খুলেছি। গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কে ভয়ে ৮ দিন ঘর থেকে বের হইনি। খুব কষ্টে দিন কাটিয়েছি। এখনও ৫টায় পুলিশ দোকান বন্ধ করতে বলে। আমরা নির্ভয়ে ব্যবসা করতে চাই।
একই এলাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী রুবেল মিয়া বলেন, কয়েকদিন যে কী আতঙ্কে দিন পার করেছি বলে বোঝাতে পারব না। ১৯ ও ২০ জুলাই এক মুহূর্তের জন্যও নিচে নামিনি। এই দুইদিন শুধু বিস্কুট ও পানি খেয়ে থেকেছি। সহিংসতার কথা মনে হলে এখনও ভয় করে। তবে সেনাবাহিনী থাকার ফলে আতঙ্ক কেটে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করছে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন কাজলা এলাকার বাসিন্দা গোলাম ইয়াছিন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, পুরো এক সপ্তাহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘরবন্দি ছিলাম। বাইরে বের হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি ছিল না। বাসার জানালা দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছি। কয়েকটা দিন খুব ভয়ে পার করেছি। আমরা তো এই সহিংসতা-হানাহানি দেখতে চাই না। আমরা বসবাসের জন্য নিরাপত্তা চাই, নিরাপদ পরিবেশ চাই।
যাত্রাবাড়ী এলাকার কাঠ ভাঙানো মিলের কর্মচারী শহিদুল ইসলাম বলেন, সহিংসতার কারণে আমাদের কারখানা বন্ধ ছিল। কারণ কোনো নিরাপত্তা ছিল না। বৃহস্পতিবার থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। তবুও মনের মধ্যে ভয় কাজ করছে।
লন্ড্রি ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, এক সপ্তাহ পর গতকাল কাজ শুরু করেছি। সহিংসতার কয়েকদিন খেয়ে না খেয়ে দিন কাটিয়েছি। কারণ দোকান খোলার কোনো উপায় ছিল না। -নিউজ ডেস্ক