প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪, ১২:৫৯ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ আগস্ট ১, ২০২৪, ৮:৫৩ পূর্বাহ্ণ
(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ও নাশকতায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয় মতামত দেওয়ার পর বুধবার (৩১ জুলাই) রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির উদ্যোগ গ্রহন করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বুধবার রাতে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, সন্ত্রাস দমন আইনের-১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, জামায়াত শিবির চলমান পরিস্থিতি তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীদের সামনে রেখে তারা ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে। তাদের বিচারের মুখোমুখি করতেই রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, জামায়াত আগেই নিষিদ্ধ ছিল। জিয়াউর রহমান এসে তাদের আবার রাজনীতির অধিকারটা দিয়েছে। এদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলগুলো এবং এদেশের সুশীল সমাজ উভয়ই জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য অবিরাম বলে আসছিল। এটা জনগণের একটি দাবি ছিল।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ ধারায় বলা হয়েছে, “এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রহিয়াছে মর্মে যুক্তিসঙ্গত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে।” আইনে সন্ত্রাসী কাজের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি, সত্তা বা বিদেশী নাগরিক বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য জনসাধারণ বা জনসাধারণের কোনো অংশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার বা কোন সত্তা বা কোনো ব্যক্তিকে কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করার জন্য অন্য কোনো ব্যক্তিকে হত্যা, গুরুতর আঘাত, আটক বা অপহরণ করে বা করার চেষ্টা করে, এ ধরনের কাজের জন্য অন্য কারো সঙ্গে ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করে; অথবা অন্য কোনো ব্যক্তি, সত্তা বা প্রজাতন্ত্রের কোনো সম্পত্তির ক্ষতি করে বা করার চেষ্টা করে; অথবা ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করে; অথবা এ ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য, দাহ্য পদার্থ ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে বা নিজ দখলে রাখে, কোনো সশস্ত্র সংঘাতময় দ্বন্দ্বের বৈরি পরিস্থিতিতে অংশ নেয়, তাহলে তা ‘সন্ত্রাসী কাজ’ বলে গণ্য হবে। এ আইনে কোনো অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের জড়িত থাকার অভিযোগ করে আসছিলেন সরকারের মন্ত্রীরা। এমন পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪-দলীয় জোটের সভায় জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একমত হন ওই জোটের শীর্ষ নেতারা। জোটের বৈঠকে সিদ্ধান্তের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, আদালতের রায়ে নির্বাচন কমিশন ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে। জামায়াতের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষের আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। বাংলাদেশের গণপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকলে কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন না থাকলেও রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা এতোদিন নিষিদ্ধ ছিল না।
অন্যদিকে সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে মানবতা-বিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে তদন্ত সংস্থা ২০১৪ সালের মার্চ মাসে ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্র-পক্ষের প্রধান কৌঁসুলির কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর পর ১০ বছর পার হলেও সে বিচার এখনো শুরু হয়নি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায়ও কার্যকর করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। কিন্তু কয়েক বছর আগে সংশোধনী প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করা হলেও পরে সে বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংস্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার পর কোন ব্যক্তি জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে ফেসবুক কিংবা অন্য কোনভাবে প্রচারণা চালায় তখন তাকে আইনের আওতায় আনতে পারবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এছাড়া কোন ব্যক্তি যদি জামায়াতে ইসলামীকে আর্থিক সাহায্য করে তাহলে তাকেও আইনের আওতায় আনা যাবে।
কারণ, নিষিদ্ধ সংগঠনের পক্ষে প্রচারণা চালানো এবং তাদের আর্থিক সহায়তা করা দণ্ডনীয় হিসেবে বিবেচিত হয়। কোন সংগঠন নিষিদ্ধ হবার পর সেই সংগঠনের ব্যানারে কোন সভা-সমাবেশ কিংবা অন্য কোন ধরনের তৎপরতা চালানো যায়না।
জঙ্গি তৎপরতার কারণে এর আগে বাংলাদেশে ৯ টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত বছরের ৯ আগস্ট দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা পরিপন্থী এবং জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জঙ্গি দল জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক-২ শাখা এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। এর আগে জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি), শাহাদাৎ-ই আল-হিকমা, হিযবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আনসার আল ইসলাম এবং আল্লাহর দল-কে নিষিদ্ধ করে সরকার। -নিউজ ডেস্ক