(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলি সীমান্তে ভারতীয় পাসপোর্টধারী এক যাত্রীর পণ্য আটককে কেন্দ্র করে সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্য ও কাস্টমসে দায়িত্ব পালনরত আনসার সদস্যের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। বিজিবি সদস্যের কলার ধরার অভিযোগে দুই আনসার সদস্যকে তুলে নিয়ে যাওয়ার তিন ঘণ্টা পর ফেরত দিয়েছে বিজিবি। তবে এই ঘটনাকে ভুল বোঝাবুঝি বলে দাবি করেছে বিজিবি। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে দাবি আনসার কর্মকর্তার।
বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুর আড়াইটায় ভারতীয় এক পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ কসমেটিকস, শাড়ি কাপড়সহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। জিরো পয়েন্ট গেটের সামনে মালামালগুলো কাস্টমস চেকিং অফিসে আনার সময় বিজিবি ও আনসার সদস্যদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে বিজিবি সদস্যের কলার ধরার অভিযোগে নায়েক সুবেদার একরামুলের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন বিজিবি সদস্য কাস্টমসে প্রবেশ করে আনসার সদস্য পরিতোষ চন্দ্র ও ফরিদ হোসেনকে চেংদোলা করে জিরো পয়েন্ট বিজিবির পোস্টে তুলে নিয়ে যান।
খবর পেয়ে কাস্টমস সহকারী কমিশনার নার্গিস পারভীন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এর পরপরই উপস্থিত হন জয়পুরহাট ২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল নাহিদ নেওয়াজ। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে কাস্টমস ও বিজিবি কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক বসে। এ সময় সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয় এবং অভিযুক্ত বিজিবি ও আনসার সদস্যদের ঘটনার সূত্রপাত নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর আটক করে রাখা দুই আনসার সদস্যকে কর্মকর্তাদের সামনে হাজির করা হয়।
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনে দায়িত্বপালনকারী আনসার সদস্য মনিজরুল বলেন, ভারত থেকে পাসপোর্ট যাত্রীরা বিভিন্ন মালামাল নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে দেশে আসছে। সেই মালামাল নিয়ে আসার পর আমাদের কাস্টমসের স্যারেরা বলেন, সবগুলো এখানে রাখেন। আমাদের সিপাহিরা যাবে, তারপর সেই মালামাল নিয়ে কাস্টমসে যাবে- এমন কথাবার্তা চলছে। এর মধ্যেই আমার সহকর্মী পরিতোষের সঙ্গে বিজিবি সদস্যদের কি হলো- সঙ্গে সঙ্গে তার কলার চেপে ধরে। এ সময় দুই বাহিনীর সদস্যদের মাঝে দ্বন্দ্ব শুরু হলে আমি বলি, এখানে তো আমরা আমরাই গণ্ডগোল করার দরকার নেই। এর মধ্যে ওখান থেকে মালামাল সব উধাও হয়ে যায়। আমরা কাস্টমসে চলে আসি। এরপর বিজিবি সদস্যরা কাস্টমস অফিসের ভেতরে ঢুকে আমাদের দুই সদস্যকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। এ সময় বুট দিয়ে মারছে, এমনকি অস্ত্র তাক করছিল।
হাকিমপুর উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা মেহেরুন আকতার বলেন, আমরা একটি মেসেজ পেয়েছিলাম, দুই আনসার সদস্যকে বিজিবি সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে। মেসেজ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে হিলি কাস্টমসে এসে সিসিটিভির ফুটেজে দেখি, চারটি ব্যাগ ছিল সেটি তারা নিয়ে আসতে চাচ্ছিল। কিন্তু বিজিবি সদস্যরা বলছিল, এটা নিয়ে যাওয়া যাবে না। পরে বিজিবি সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে দুই আনসার সদস্যকে কাস্টমস থেকে তুলে নিয়ে যায়। আজকের ঘটনাটি একেবারে অশোভনীয় হয়ে গেছে। একটা বাহিনীর জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর। এটা হওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়।
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা কামাল পাশা বলেন, ওই ভারতীয় যাত্রীর মালামাল যখন আমরা কাস্টমসে নিয়ে আসার সময় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিজিবি ও আনসার সদস্যের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির তৈরি হয়েছিল। সেই কারণে দুই বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। বিষয়টি জানার পর আমরা আনসারের কর্মকর্তাকে জানাই। সেই সঙ্গে জয়পুরহাট ২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ককে জানানো হয়। ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আমাদের অফিসে সংরক্ষিত ছিল। সে কারণে দুই বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়ে সেই ফুটেজ পর্যালোচনা করেন। বিষয়টি নিয়ে তারা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেছেন। দুই বাহিনী অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছে।
জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল নাহিদ নেওয়াজ বলেন, কাস্টমসের একটি আইটেম নিয়ে তাদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সেটার সঙ্গে আনসার সদস্যরাও ছিল। বিষয়টা নিয়ে আমরা কাস্টমস ও আনসারসহ সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। বিজিবি, আনসার ও কাস্টমস সবাই একসঙ্গে এখানে কাজ করে এবং ভবিষ্যতেও করবে। -নিউজ ডেস্ক