আব্দুস সালাম, হেড অব নিউজ (দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) বাংলাদেশ রেলওয়ের জমিতে বৈধভাবে স্থাপিত দোকান উচ্ছেদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ বি এম জিয়াউর রহমান জিয়া রেলওয়ে ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেন্ডেন্ট এবং সহকারী ভূমি কমিশনার এম এ রাজ্জাকের নেতৃত্বে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) দিনাজপুর রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কর্মচারীদের দিয়ে নিয়মবহির্ভূত ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে, কোনো নোটিশ ছাড়াই দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে মেসার্স পৃথিবী বুক স্টল নামীয় বৈধ দোকান ঘরটি উচ্ছেদ করা হয়েছে। রেলওয়ে জমি ব্যবস্থাপনার নীতিমালা অনুযায়ী, বৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার পূর্বে প্রয়োজনীয় নোটিশ এবং আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক হলেও, এই ক্ষেত্রে তা লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ীরা।
রেলওয়ে উচ্ছেদ আইনের প্রাসঙ্গিক ধারা ও নীতিমালা রেলওয়ে জমির ব্যবস্থাপনা এবং উচ্ছেদ প্রক্রিয়া পরিচালিত হয় রেলওয়ে আইন, ১৮৯০ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন ও নীতিমালার অধীনে। রেলওয়ে আইন, ১৮৯০ (জধরষধিুং অপঃ, ১৮৯০): এই আইনের ধারা ১২২ অনুসারে, রেলওয়ে জমিতে অবৈধ দখল বা স্থাপনা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অধিকার রয়েছে জমি পুনরুদ্ধারের জন্য অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করার। তবে, আইনের স্পষ্ট নির্দেশনা হলো, উচ্ছেদের আগে দখলকারীদের লিখিত নোটিশ দেওয়া আবশ্যক।
রেলওয়ে জমিতে অবৈধ স্থাপনা থাকলে, উচ্ছেদের আগে সাধারণত ৭-১৫ দিনের নোটিশ দেওয়া হয়। এই নোটিশের মাধ্যমে দখলকারীদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু, এ বি এম জিয়াউর রহমান জিয়া রেলওয়ে ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেন্ডেন্ট এবং এম এ রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, তারা কোনো ধরনের নোটিশ প্রদান না করে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বৈধ দোকান উচ্ছেদ করেছেন। উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার সময় যদি কোন বৈধ স্থাপনা থাকে, তা সরিয়ে নেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া জরুরি।
রেলওয়ে ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, ২০২০: বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী, রেলওয়ের অপারেশনাল কাজে ব্যবহৃত ভূমি কোনো অবস্থাতেই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হওয়ার কথা নয়। স্টেশন এলাকা, ট্রেনের ট্র্যাক এবং পার্কিং এলাকায় দোকান বা স্থাপনা স্থাপন সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। অথচ এসব স্থানে অবৈধ দোকানপাট বসিয়ে বৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণরূপে নীতিমালা বিরোধী।
রেলওয়ের উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার সময় ব্যক্তিগত ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নীতিমালা লঙ্ঘনের ঘটনা নতুন নয়। রেলওয়ের জমি ব্যবস্থাপনার স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও, ক্ষমতাধর কর্মকর্তারা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছেন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অবৈধভাবে বৈধ দোকান উচ্ছেদের এই ঘটনা শুধু রেলওয়ে আইনের লঙ্ঘন নয়, বরং রেলওয়ে ব্যবস্থাপনা নীতিমালারও সম্পূর্ণ বিরোধী। ব্যবসায়ীরা ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়েছেন এবং দ্রুত আইনি প্রতিকার প্রত্যাশা করছেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মেসার্স পৃথিবী বুক স্টলের স্বত্বাধিকারী নূর ইসলাম নয়ন রেলওয়ে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন। এতে তিনি ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন এবং উচ্ছেদ কার্যক্রমে জড়িত কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।