সোমবার , ২১ অক্টোবর ২০২৪ | ৩রা পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. আইন আদালত
  3. আর্ন্তজাতিক
  4. এক্সক্লুসিভ
  5. কৃষি ও কৃষাণ
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রিকেট
  8. গল্প-সাহিত্য
  9. চাকুরি
  10. জাতীয়
  11. জেলার খবর
  12. টালিউড
  13. টেনিস
  14. তথ্য-প্রযুক্তি
  15. ধর্ম ও ইসলাম

ডেঙ্গু ও প্লাটিলেট প্রসংগে কিছু কথা

প্রতিবেদক
admin
অক্টোবর ২১, ২০২৪ ৩:২৭ অপরাহ্ণ

ডাঃ এ, বি, এম, কামরুল হাসান  (দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম)
😱 ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট নিতে হয় কেন আর কখন এবং  খরচ কেমন ?
👉 রোগীর শরীরে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণেই রক্তের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।
👉 সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর জন্য রক্ত চেয়ে দেয়া পোষ্টের সংখ্যা জানান দেয় পরিস্থিতি কতোটা জটিল রূপ নিয়েছে। মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণেই রক্তের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।
👉 মানুষের রক্তে তিন ধরনের ক্ষুদ্র রক্তকণিকার মধ্যে সবচেয়ে ছোটটি প্লাটিলেট। যাকে বাংলায় অণুচক্রিকা বলা হয়। অণুচক্রিকার উৎপাদন হয় অস্থিমজ্জায়।
👉 প্লাটিলেট রক্ত জমাট বাঁধতে ও রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সাহায্য করে।
👉 একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরের প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ পর্যন্ত।
👉 এই পরিমাপের চাইতে প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। ফলে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি দেখা দেয়।
👉 রক্তে প্লাটিলেট কমতে শুরু করাকে চিকিৎসা শাস্ত্রে বলা হয় থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়া।
😱 প্লাটিলেট কমে যাওয়া কেন বিপজ্জনক?
👉 কেবল ডেঙ্গু নয়, আরও নানা রোগে রক্ত সংক্রমণে  প্লাটিলেটের সংখ্যা কমতে পারে। তবে, প্লাটিলেট এক লাখের নীচে নেমে গেলে তাকে জটিল পরিস্থিতি বলে ধরে নেওয়া যায়।
👉 প্লাটিলেটের সংখ্যা ২০ হাজারের নিচে নেমে এলে কোনও প্রকার আঘাত ছাড়াই রক্তক্ষরণ হতে পারে।
👉 রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা ১০ হাজারের নিচে নামা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।এসময় শরীরের যে কোনও জায়গা থেকে অনবরত রক্তপাত হওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকি থাকে।
😱 প্লাটিলেট কমে গেলেই কি রক্ত নিতে হয়?
👉 প্লাটিলেট কমে গেলেই যে রক্ত নিতে হবে এমনটা নয়।
👉 “কেননা ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্লাটিলেট কমে যাওয়াই একমাত্র সমস্যা নয় বরং শরীরের রক্তরস কমে যাওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়াও পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে। সেক্ষেত্রে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিলে রোগীকে সারিয়ে তোলা সম্ভব। এক্ষেত্রে রক্ত দেয়ার প্রয়োজন নাও হতে পারে,”
👉 “বেশিরভাগ ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট দেয়ার কোন প্রয়োজন হয় না। রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যায় খুব কম সময়ের জন্য – হয়তো দুই তিন দিন। এরপর নিজে থেকেই প্লাটিলেট বাড়তে থাকে। তাই আমরা ঢালাওভাবে রক্ত নেয়ার পরামর্শ দেই না।”
👉 “এমন রোগীও আছে ১০ হাজার প্লাটিলেট নেমেছে, তাও লাগেনি। রোগী ভালো হয়ে গিয়েছেন। যদি রোগীর রক্তক্ষরণ বেশি হয়, রক্তরস কমে যায়, হিমোগ্লোবিন কমে যায়, প্রেশার কমে যায় তাহলেই রক্ত দেয়ার কথা আবশ্যকীয় ” ।
👉 আবার অনেক সময় প্লাটিলেটের সংখ্যা বেশি থাকলেও এর কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারণে রোগীর অবস্থার অবনতি হতে পারে।
👉 সেক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়লে দেরী না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন ।
👉 ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। তবে এনএসওয়ান নামে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু হয়েছে কি না দ্রুত বোঝা যায়।
👉 বত’মানে জ্বর হওয়ার  তিন থেকে পাঁচদিনের মধ্যে এই পরীক্ষাটি করানো উচিত ।
👉 এছাড়া রক্তের সিবিসি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) পরীক্ষা করার মাধ্যমে প্লাটিলেটের সংখ্যা নিরূপণ করা যায়।
👉 পরীক্ষায় প্লাটিলেট কম এলেই যে রোগীকে প্লাটিলেট দিতে হবে এমনটি নয় । সাধারণত চিকিৎসকরা রোগীর বয়স, স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বুঝেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
👉 সাধারণত এক ইউনিট  র‍্যান্ডোম প্লাটিলেটের জন্য চার – ছয়জন দাতার থেকে রক্ত নিতে হয়। এক ইউনিট প্লাটিলেট দিলে ২০-৩০ হাজার কাউন্ট প্লাটিলেট বাড়তে পারে।
আর এফেরেটিক প্লাটিলেট এর জন্য একজন ডোনার থেকেই শুধু প্লাটিলেট সংগ্রহ করা হয়। যেখানে ডোনার সপ্তাহে ২ বার বা বছরে ২৪ বার পয’ন্ত প্লাটিলেট দিতে পারেন, যদি ডোনার সক্ষম থাকেন।
কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন এফেরেটিক প্লাটিলেট মেশিন
👉 প্লাটিলেট সঞ্চালন বেশ ব্যয়বহুল ও জটিল পদ্ধতি। বাংলাদেশের সব হাসপাতালে রক্ত থেকে প্লাটিলেট পৃথক করার এই যন্ত্রটি নেই।
বত’মানে বেশ কিছু সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে এই যন্ত্রটি আছে।
আমার কম’স্থল দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এ প্রায় এক বছর থেকে এই সেবা দিয়ে আসছি।
👉 খরচ :
সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সাথে
র‍্যান্ডোম ডোনার (৪-৬) এর জন্য প্রতি ডোনার ৩৫০ টাকা / প্রায় ১৫০০-১৮০০ টাকা।
এফেরেটিক প্লাটিলেট (কীট সাপ্লাই সাপেক্ষে) ২৪০০- ২৬০০ টাকা।
অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালে ৩০০০০- ৪০০০০ টাকা খরচ লাগে।
👉 এ কারণে ঘরে ডেঙ্গু রোগী থাকলে আগে থেকেই আশেপাশের কোন হাসপাতালে প্লাটিলেট সঞ্চালনের ব্যবস্থা আছে সে বিষয়ে খোঁজ রাখতে হবে।
👉 সাধারণত ডেঙ্গু জ্বর জটিল রূপ নিলে বা রক্তক্ষরণ দেখা দিলে সেটাকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বলা হয়। এক্ষেত্রে রক্ত নেয়ার প্রয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
👉 বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য থাকে।
👉 প্রথমত প্লাটিলেট এক লাখের নিচে থাকবে, রক্তের হেমাটোক্রিট বা পিসিভি অর্থাৎ প্যাকড সেল ভলিউম বেড়ে যাবে, রক্তনালী থেকে রক্তরস বেরিয়ে আসার সমস্যা দেখা দেবে।
😱 কখন রক্ত নিতে হয়?
👉 ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে মূলত রোগীর রক্তনালীগুলোর দেয়ালে যে ছোট ছোট ছিদ্র থাকে, সেগুলো বড় হয়ে যায়। এতে রক্তনালীর দেয়াল ভেদ করে রক্তের জলীয় উপাদান বা রক্তরস নালির বাইরে বের হয়ে আসে।
👉 একে প্লাজমা লিকিংও বলা হয়। এতে রোগীর পেটে–বুকে পানি জমতে পারে। সেইসাথে রোগীর রক্তচাপ কমতে থাকে।
👉 প্লাটিলেট কমার চাইতে, রক্তচাপ কমে যাওয়া ডেঙ্গু রোগীর জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ।
👉 প্লাটিলেট কমে যাওয়াসহ এমন আরও কয়েকটি কারণে রোগীর মস্তিষ্ক, কিডনি, হৃদপিণ্ডেও রক্তক্ষরণের আশঙ্কা থাকে। এমনকি হেমারেজিক শকের কারণে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ নিতে হবে।
👉 “যদি আমরা দেখি যে অ্যাকটিভ ব্লিডিং হচ্ছে এবং প্লাটিলেট ২০ হাজারের নীচে নেমে এসেছে, তাহলে আমরা রোগীর পরিস্থিতি বুঝে রক্ত নেয়ার পরামর্শ দেই।
👉 তবে ডেঙ্গু রোগীর মূল সমস্যা প্লাটিলেট কমে যাওয়া নয়। এখানে আশঙ্কার জায়গা হল রোগীর রক্তচাপ কমে যাওয়া। কারণ প্রেশার কমে গেলে শরীরে অক্সিজেনের অভাব হয়। এতে বিভিন্ন অঙ্গ সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।”
👉 এসব জটিলতার পাশাপাশি যদি রোগীর রক্তচাপ অনেক কমে যায়, হৃৎস্পন্দন বাড়ে, হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কমে যায় সেইসাথে অন্যান্য জটিলতা দেখা, তবেই রক্ত দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
👉 যেসব লক্ষণ দেখলে রক্ত নিতে বলা হয়,
      তার মধ্যে রয়েছে –
* প্লাটিলেট কমে যাওয়ার লক্ষণ।
* ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ। ত্বকে বেগুনি রঙের ক্ষত দেখা দিবে।
* শরীরে লাল বা কালো র‍্যাশ দেখা দেয়।
* মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া।
* মুখ, মাড়ি বা নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে।
* প্রস্রাব বা মলের সঙ্গে রক্তপাত। কালো রঙের নরম পায়খানা হওয়া।
* ক্ষতস্থান থেকে বা কোথাও কাটলে অনেকক্ষণ ধরে রক্তপাত হওয়া।
* অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ ও শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়।
👉 প্লাটিলেট হল রক্তের একটি ক্ষুদ্র কণিকা।
😱  যেসব খাবারে প্লাটিলেট বাড়ে:
👉 ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে সুষম খাবারের পাশাপাশি তরল জাতীয় খাবার খাওয়ানোর প্রয়োজন ।
তবে কিছু খাবার রয়েছে যা খেলে রক্তে কমে যাওয়া প্লাটিলেট আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এমন পাঁচটি খাবার হল:
১. মিষ্টি কুমড়া এবং এর বীজে থাকা ভিটামিন ‘এ’ রক্তে প্লাটিলেট তৈরিতে সাহায্যে করে। তাই ডেঙ্গু রোগীর রক্তে প্লাটিলেট কমে গেলে মিষ্টি কুমড়া খেতে পারে।
২. লেবুর রসে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়ায়।এছাড়া শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। তাই ডেঙ্গু রোগীকে প্রচুর লেবু শরবত খাওয়ানো উচিত।
৩. আমলকীতেও রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট । আমলকী খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং প্লাটিলেট ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করে।
৪. রক্তের যেকোনো সংক্রমণ দূর করতেও অ্যালোভেরা খুবই উপকারী। নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস পান করলে রক্তের প্লাটিলেট বাড়ে।
৫. ডালিম ফলে প্রচুর আয়রন রয়েছে। যা রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে এবং শরীরের দুর্বলতা দূর করতে খুবই ভালো কাজ করে। তাই রোগীর রক্তে প্লাটিলেট বাড়াতে তাকে নিয়মিত ডালিমের জুস খেতে দিন।
👉 মালয়েশিয়ার গবেষণা প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজির এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পেঁপে পাতার রস এবং পাকা পেঁপের জুস ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর রক্তে কমে যাওয়ার প্লাটিলেটের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
👀 সবুজ শাকসবজি, ভিটামিন সি যুক্ত ফল বা তাজা ফলের রস, সেইসাথে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, প্রোটিন, ভিটামিন কে, ই সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এক্ষেত্রে প্যাকেটজাত খাবার এবং অতিরিক্ত মসলাদার খাবার এড়িয়ে যাওয়া উচিত ।
——————————————————–
এই স্বাস্থ্যসেবা ফিচারটি লিখেছেন………………………
ডাঃ এ, বি, এম, কামরুল হাসান 
সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
ট্রান্সফিঊশন মেডিসিন বিভাগ
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর।

সর্বশেষ - রাজনীতি