(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে হয়েছে অনিয়ম এবং দুর্নীতি এমন অভিযোগ করেছেন সাধারণ প্রার্থী এবং শিক্ষার্থীরা। অন্তবর্তীকালীন সরকার সারাদেশে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পরও এখনো হাবিপ্রবিতে চাকুরিরত আছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ না করলে কঠোর আন্দোলনে যাবেন বলে হুশিয়ারী দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন কিসের স্বার্থে এ রকম নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যরা হাবিপ্রবিতে চাকুরিতে এখনো বহাল থাকে?
এদিকে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) সাম্প্রতিক সময়ে নবম ও দশম গ্রেডে বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ৬ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ মোট ১৬ জন এতে নিয়োগ পান। শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যিালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলেন। শিক্ষার্থীরা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি জানান। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে হলসমূহ খুলে দেয় প্রশাসন। পরে ১৮ আগস্ট থেকে শুরু হয় অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম। তবে আলোচিত নিয়োগপ্রাপ্তদের অনেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন না বলে জানা গেছে। এরমধ্যে গত রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) নিয়োগপ্রাপ্তদের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে এলে শিক্ষার্থীরা তাকে জুতার মালা পরিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ কারিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়া করেন।
গণমাধ্যমসূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পাস ছাড়া করা মো. রাব্বি শেখ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ফিল্ড এক্সটেনশন অফিসার ছাত্রলীগের সহসভাপতি পদে ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, নবম ও দশম গ্রেডে ছাত্রলীগের পরিচয়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের কয়েকজন নিয়মিত অফিসে আসছেন না। তবে তাদের সংখ্যা সম্পর্কে রেজিস্ট্রার অফিস নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নিয়োগ পাওয়া ছাত্রলীগের পরিচয় ব্যাবহার, অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ থাকা মোট ১৬ জনের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দিয়েছে নিয়োগ বঞ্চিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত ১৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীরা এই অভিযোগ প্রদান করেন।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাকিব নামের একজনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা ও সততার ভিত্তিতে সব কিছু পরিচালিত হওয়া উচিত। সাম্প্রতিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা শিক্ষার্থীদের জন্য হতাশাজনক। দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে যখন প্রভাবশালীরা জায়গা করে নেয়, তখন প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হয়। অবিলম্বে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা হোক, যাতে প্রকৃত মেধাবীরা তাদের ন্যায্য জায়গা ফিরে পায়।’
নিয়োগ বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের অভিযোগে ফিল্ড এক্সটেনশন অফিসার শেখ শাহ আসাদুল্লাহ সালেহীন সৌরভ, ফিল্ড এক্সটেনশন অফিসার মো. জাকির হোসেন, মো. রাব্বি শেখ, খালেদা আক্তার, মেডিকেল অফিসার শাহ ওয়াদফা আলম, সেকশন অফিসার মে. ইলিয়াস কাঞ্চন, মো. শফিকুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মো. রাসেল ইসলাম, উপসহকারী খামার তত্ত্বাবধায়ক তানভীর আবেদীন, মো. শাহ আলম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহরিয়ার জাহান, মোখলেসুর রহমান, মোরশেদুল ইসলাম রনি, কৌশিক ঘোষ, তাসকিনা জাহান এবং সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা সালমান তাইফের নাম উল্লেখ করা হয়।
জানা যায়, চাকরিপ্রাপ্ত এসব প্রার্থীদের মধ্যে শাখা ছাত্রলীগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন এমপি মন্ত্রীদের প্রভাবে চাকরি নিয়েছেন বলে অভিযোগে বলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এম কামরুজ্জামানের হাত ধরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি নেন। তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে ড. এম কামরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর জানান, যারা অফিসে আসছেন না তাদের নিয়ে আমরা একটা রিপোর্ট তৈরি করছি। তারা কেন আসছেন না, কতদিন আসছেন না, এতে কী ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে সবগুলো বিষয় নিয়ে আমরা পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরির জন্য সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দিয়েছি।
চাকরি প্রার্থীদের পক্ষ থেকে দেয়া অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপাচার্যের দায়িত্ব পালনকারী প্রফেসর ড. হাসান ফুয়াদ। তিনি বলেন, এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজন রয়েছেন চিহ্নিত। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে তারা আসছেন না। শিক্ষার্থীরা ১৬ জনের নাম উল্লেখ করেছেন, আমরা তাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখব। তবে তাদের চূড়ান্ত নিয়োগ দিয়েছে রিজেন্ড বোর্ড। তাই বিষয়টি সেখান থেকে নিষ্পত্তি হতে হবে।
এদিকে সদ্য হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) প্রথম প্রো ভাইস- চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন হাবিপ্রবির এগ্রোনমি বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মো. শফিকুল ইসলাম সিকদার। সাধারণ প্রার্থীরা ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রো ভাইস- চ্যান্সেলরের নিকট নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের যারা হাবপ্রবিতে বিভিন্ন ট্রেডে চাকুরিতে যোগদান করেছেনে তারা তা অবিলম্বে বাতিল চান।