(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাতে নয়া দিল্লিকে ঢাকা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন। বাংলাদেশ অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না, অন্য কেউ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে তিনি এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্র সচিব জানান, সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। সেখানে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে দুই দেশই একমত হয়েছে।
সংখ্যালঘু নির্যাতনের কল্পিত অভিযোগ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, আমরা বলেছি, এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের মন্তব্য সমীচীন নয়। আমি এও স্মরণ করিয়ে দিয়েছি যে, বাংলাদেশ অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য থেকে বিরত থাকে এবং অন্যান্য দেশেরও একই ধরনের শ্রদ্ধাবোধ আমাদের প্রতি দেখানো উচিত।
জসীম উদ্দিন জানান, ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বক্তব্য পছন্দ করছে না অন্তর্বর্তী সরকার। এই বার্তা শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রিকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সংখ্যালঘুদের নির্যাতন নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে নেতিবাচক প্রচারণা হচ্ছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশের জুলাই আগস্ট বিপ্লব এবং বিপ্লব পরবর্তী সংখ্যালঘুদের প্রতি কথিত বৈরী আচরণ নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমে অপপ্রচার, মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তিকর বয়ান হচ্ছে। সে বিষয়ে আমরা ভারত সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি এবং এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি।
দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সঙ্গে সীমান্ত হত্যা সঙ্গতিপূর্ণ নয় জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আজকের বৈঠকে সীমান্ত হত্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড কাম্য নয় এবং দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সঙ্গে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
জসীম উদ্দিন বলেন, আমরা সবসময় বলেছি যে, সীমান্ত হত্যা যেন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়। তাদের দিক থেকে তারা বলেছে, সীমান্তে নানা ধরনের অপরাধ হয়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এসব অপরাধের সংযোগ আছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা বলেছি, আমরা কোনো অপরাধ সমর্থন করি না, একইসঙ্গে হত্যাকাণ্ডকেও সমর্থন করি না। কাজেই দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের যে কথা বলছি, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমাদের যে অঙ্গীকার এবং রাজনৈতিক যে অঙ্গীকার হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার, সেটার বিষয়ে তারা যেন শ্রদ্ধাশীল থাকে।
দুই দেশের বাণিজ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারত আমাদের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ভারতের সাথে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য বিদ্যমান ট্যারিফ, প্যারা-ট্যারিফ এর মত বাধাসমূহ দূর করার উপর আমরা গুরুত্ব আরোপ করেছি। আমরা ভারত থেকে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছি।
পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন বলেন, আপনারা জানেন যে বর্তমানে ভারতের সাথে জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ খাতে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা ভারত হতে বর্তমানে প্রায় দুই হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি। চলমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই সহযোগিতা বৃদ্ধি পেতে পারে। ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আনার বিষয়েও ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রতি বছর পর্যটন এবং চিকিৎসা উপলক্ষে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশি ভারত সফর করে। তাদের ভিসাপ্রাপ্তি সহজীকরণসহ অন্যান্য কনস্যুলার ইস্যু সহজীকরণের জন্য আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। যেসকল বাংলাদেশি নাগরিক ভারতের আদালতের দেওয়া সাজা বাংলাদেশে অথবা ভারতে ভোগ করছে, তাদের সাজা মওকুফের বিষয়ে ভারতের যথাযথ বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া, ভারতে আটক বাংলাদেশের জেলেদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। -ডেস্ক রিপোর্ট