স্টাফ রিপোর্টার (দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশত বছর, অথচ এখনও নির্ধারিত হয়নি দিনাজপুর জেলা শত্রুমুক্ত হয়েছিল কবে! তাই বরাবরের মতো এবারও সম্মিলিতভাবে হানাদার মুক্তদিবস পালিত হচ্ছে না। অথচ দেশের কোন জেলা বা কোন অঞ্চল কবে মুক্ত হয়েছিল, এর রয়েছে সঠিক দিনক্ষণের ইতিহাস। সেসব এলাকাও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে থাকে। তবে দিনাজপুর জেলার এমন পরিস্থিতিতে হতাশ সংশ্লিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও ইতিহাসবিদরা। তারা বলছেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এবং ইতিহাসকে সমুন্নত রাখতে পর্যালোচনা ও গবেষণার মাধ্যমে সঠিক দিনক্ষণ নির্ধারণ করা এখন সময়ের দাবি।
কারও মতে, ১৫ ডিসেম্বরে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে পাকসেনারা সৈয়দপুরে চলে যায়। আবার কারও মতে, ১৪ ডিসেম্বরেই পাকসেনারা চলে যায়। সেই সময়ের দিনাজপুর জেলা জয়বাংলা বাহিনীর প্রধান এবং মুজিব ব্রিগেড ও বিএলএফ’র সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম তালুকদার বলেন, আমরা গেরিলাযোদ্ধারা জেলা শহরে প্রবেশ করেছিলাম ১৫ ডিসেম্বরে। সঙ্গে ছিলেন মিত্রবাহিনীর সদস্যরা। জেলা শহরে প্রবেশের আগে আমরা অবস্থান নিয়েছিলাম ঐতিহ্যবাহী কান্তনগর মন্দির এলাকায়। সেখানে রাতে আমাদেরকে লক্ষ্য করে মর্টার সেল নিক্ষেপ করেছিল পাকসেনারা। ওই সময়ে মিত্রবাহিনীর সদস্যরা আমাদেরকে আগাম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে যুদ্ধ হবে না এমন একটি সমঝোতার প্রক্রিয়া চলছে। তাই আমাদেরকে সম্মুখ বা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হয়েছিল। আমরা যখন দিনাজপুরে প্রবেশ করি এরপরে জেলা শহরে কোন পাক হানাদারদেরকে দেখিনি। আমার মতে, মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা যেতে পারে ১৫ ডিসেম্বরকে। একেকজন মুক্তিযোদ্ধা একেকদিক দিয়ে জেলায় প্রবেশ করেছে, যার কারণে যে যেভাবে দেখেছে সেটি সঠিক। তবে এই বিতর্কের অবসান ঘটাতে সকলকে সম্মিলিতভাবে আলোচনার মাধ্যমে সঠিক ইতিহাস উন্মোচনে একটি সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন।
মুক্তিযুদ্ধের আরেক সংগঠক মকবুল হোসেন বলেন, আমরা ছিলাম মুক্তিযোদ্ধা। আর এখন সকলেই নেতা সাজতে চায়। তাই সম্মিলিতভাবে একটি সিদ্ধান্ত হোক এটি কেউই চায় না। তবে আমার মতে, দিনাজপুর হানাদারমুক্ত হয়েছিল ১৫ ডিসেম্বরে, ১৪ ডিসেম্বরেও জেলায় পাকহানাদার বাহিনীর সদস্যরা ছিল এবং তারা একে একে জেলা ত্যাগ করছিল। সেই হিসেবে ১৪ ডিসেম্বর নয়, ১৫ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয়েছিল দিনাজপুর। সম্মিলিতভাবে সঠিক ইতিহাস উন্মোচন হোক, এটা আমরা সবাই চাই। তবে এটি সম্ভব বলে মনে হয় না, এখন তো সবাই মুক্তিযোদ্ধা, সবাই নেতা। আমাদের মতো সংগঠকদের মূল্য কতটুকু।
দিনাজপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কাজ করছেন দিনাজপুর সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাসুদুল হক। তিনি বলেছিলেন, আমি অনেক মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা বলেছি যারা দেশকে মুক্ত করার জন্য জীবন বাজি রেখে বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেছেন। তাদের অনেকের মতে ১৪ ডিসেম্বর আবার অনেকের মতে ১৫ ডিসেম্বর দিনাজপুর মুক্ত হয়েছিল। তবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস উন্মোচন করতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কোন দিনে এই জেলা শত্রুমুক্ত হয়েছিল সেটি উন্মোচন করা সময়ের দাবি। এখনই যদি এই উদ্যোগ গ্রহণ করা না হয় তাহলে দেরি হয়ে যাবে। আমি অনেক মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়েছি এবং সেগুলো লিপিবদ্ধ করেছি। অনেক লেখা প্রকাশনাও হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে দিনাজপুর জেলা মুক্ত দিবসটি পালিত হোক এটা আমরা সবাই চাই।’