(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় জামিনের পর গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে একে একে বের হয়ে আসছেন বিডিআর সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে একে একে কারাগার থেকে জামিনে বের হচ্ছেন তারা। এই কারাগারের বিভিন্ন ইউনিটে থাকা ১২৬ জন বন্দির মধ্যে ইতোমধ্যে ৩৮ জন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
বন্দীদের মুক্তির খবরে কারাফটকে ভিড় করেছেন স্বজনেরা। কারাগারের বিডিআর সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিতে দেখা গেছে পরিবারের সদস্যদের। এসময় সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মুক্তি পাওয়া বিডিআর সদস্যরা তাদের হারানো চাকরি ফিরে পাওয়া এবং পুনর্বাসনে সরকারি সহযোগিতা কামনা করেছেন।
কারাসূত্রে জানা গেছে, কাশিমপুর-১ থেকে ২৬ জন, কাশিমপুর-২ থেকে ৮৯ জন ও কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে ১৩ জন মুক্তি পাচ্ছেন।
কারাফটকে কথা হয় জামিনে মুক্তি পাওয়া গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী এলাকার বিডিআর সদস্য মামুনের সঙ্গে। তিনি জানান, যৌবনের শুরুতে চাকরি করতেন বিডিআরে। মাত্র তিন বছর চাকরি জীবন শেষে তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় ২০০৯ সালে গ্রেপ্তার হন তিনি। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর কেটেছে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। জেল জীবনের শুরুতে তার স্ত্রী ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। কারাগারে যাওয়ার পর খবর পান তার মেয়ে হয়েছে। দীর্ঘদিন পর মুক্তি পেয়ে কারাফটকে বাবা মেয়ের মিলন এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি করে।
শুধু মামুন নয়, তার মতো ১২৬ জন বন্দির জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় কেটেছে কাশিমপুর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে।
কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মুক্তির জন্য ১৬৮ জনের তালিকা হাতে পেয়েছে তারা।
এ ব্যাপারে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, আদালতের সব কাগজপত্র যাচাই বাছাইয়ের পর তাদেরকে মুক্তি দিতে শুরু করি।
এর আগে মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) ১৭৮ জন বিডিআর জোয়ানের জামিনের বিষয়টি মিডিয়ায় জানান ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত রোববার হত্যা মামলায় নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালত থেকে খালাসপ্রাপ্তরা বিস্ফোরক আইনের মামলায় জামিন পান। কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালত শুনানি শেষে তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
বুধবার সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার শাহাদাত হোসেন জানান, ১৭৮ বিডিআর জোয়ানের জামিন নামা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দফতরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। সে ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরও ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন।
অন্যদিকে, হাইকোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়। ২০১০ সালে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজও শুরু হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি উঠেছে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এই হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার। -নিউজ ডেস্ক