(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে সেই দিনতারিখ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। বিএনপিসহ কোনো কোনো রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচনের রূপরেখা চাইছে। জামায়াতে ইসলামী শুরুতে নির্বাচনের তাগিদ না দিলেও কিছুদিন আগে দলটির আমির শফিকুর রহমান দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের দাবি জানান। তবে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের দিন-তারিখ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত কোনো ঘোষণা না এলেও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ চলতি বছরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনের আভাস দিয়েছেন।
এর মধ্যে গতকাল বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। সেখানে ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে পারে বলে ইঙ্গিত মেলে। এমন ইঙ্গিত পাওয়ার পর এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা তাদের আশ্বস্ত করেছেন।
যদিও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ওই দিনই তার ব্রিফিংয়ে বলেছেন ‘বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে যেন তাড়াতাড়ি নির্বাচন হয়। ঐকমত্য কমিশনের কাজই হবে এটা নিয়ে কাজ করা।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, তাদের কাছে আলোচনার সময় মনে হয়েছে যে নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির দাবি সরকারের কাছে গ্রাহ্য হয়েছে এবং এর পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কী কী হবে সেটি এখন সরকারকেই ঠিক করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘রোডম্যাপ ঘোষণার মাধ্যমে সরকার এটি পরিষ্কার করতে পারে। তাহলে বুঝতে পারব যে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে আমরা আগেই বলেছি স্বল্পমেয়াদে জরুরি সংস্কার বাস্তবায়নের পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত।’
নাম না প্রকাশ করার শর্তে সরকারের একজন উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের আগে কতটা সংস্কার করা প্রয়োজন আর নির্বাচনের পর কতটা হবে- সেটি নিয়ে ঐকমত্য তৈরি করাই হবে পরবর্তী ধাপের কাজ।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব গতকাল জানিয়েছেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম বৈঠকে বসবেন।
আজ ঢাকায় নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন এখন ভোটার হালনাগাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এর আগে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এরপর কী কী হতে যাচ্ছে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, তাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের সময় যেভাবে আলোচনা হয়েছে তাতে তাদের কাছে মনে হয়েছে যে ডিসেম্বরেই নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির যে দাবি সেটিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এখন সরকার ঠিক করবে কখন কী হবে। সংস্কার প্রস্তাব ও নির্বাচনি রোডম্যাপ- কোনটা কতটা এখন দরকার। কোনটা কখন কীভাবে হবে সেটি সরকারের রোডম্যাপ থেকে জানা যাবে।’
ওই বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সালাউদ্দিন আহমেদ ছাড়াও স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (অবসরপ্রাপ্ত) উপস্থিত ছিলেন।
যদিও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলছেন, নির্বাচনের সময় ঠিক করার পর সরকারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি ভালো ভোটার তালিকা করে সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়া, যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।
‘আর এ লক্ষ্যে যতটা সংস্কার দরকার সেটুকু করেই নির্বাচন আয়োজনে মনোনিবেশ করাই পরবর্তী ধাপের পদক্ষেপ হওয়া উচিত। বিএনপি বলেছে ডিসেম্বরের বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। কিন্তু তার প্রেস সচিব কিন্তু অন্য দলগুলোর রাজি হওয়ার বিষয়টিও তুলেছেন।”- বলেন মান্না।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, নির্বাচনের আগে পুলিশ, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের সংস্কার ইস্যুটি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এসব বিষয়ে কতটা কী করা হবে তা নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জরুরি সংস্কার বাস্তবায়ন নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ হতে পারে। উল্লেখ্য, বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ব্রিফিংয়ে বলেছেন ১৫ ফেব্রুয়ারি ঐক্যমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে।
‘বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে যেন তাড়াতাড়ি নির্বাচন হয়। ঐক্যমত্য কমিশনের কাজই হবে এটা নিয়ে কাজ করা। আমরা দুটো টাইম দিয়েছিলাম যে এ বছরের মধ্যে ও আগামী বছরের জুনের মধ্যে। এটা নিয়ে সামনে এ বিষয়ে আরও কিছু শুনতে পারবেন।-বলেন তিনি।
ডিসেম্বরে নির্বাচনের আশ্বাসের বিষয়ে বিএনপির দাবির কথা উল্লেখ করে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচন ওনারা চাচ্ছেন ডিসেম্বরের মধ্যে। আমাদের তরফ থেকে চিন্তা আছে। উপদেষ্টা পরিষদ দেখছেন। কোন সিদ্ধান্ত হলে আপনারা জানবেন।’
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে নির্বাচন আয়োজনের পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনা হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে মূলত সরকার যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করেছে তাদের রিপোর্টগুলোতে কী আছে সেটি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে খোলাসা করা হবে।
সরকারের যে উপদেষ্টা বিবিসির সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি অবশ্য বলেছেন যে ওই কমিশনের বৈঠকে কোন কোন বিষয়ে সংস্কার হবে, নির্বাচনের পর কোনগুলো বাস্তবায়ন হবে এবং নির্বাচন কিভাবে হবে তা নিয়ে ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা করা হবে।
অর্থাৎ বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় ডিসেম্বরে নির্বাচনের বিষয়ে একটি ইতিবাচক বার্তা সরকারের দিক থেকে দিলেও এটি আসলে ঠিক হবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই। এখানে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো দ্রুত নির্বাচন চাইলেও জামায়াতে ইসলামী এখনো সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নকেই বেশি গুরুত্ব দেয়ার পক্ষে। তবে ডিসেম্বরে নির্বাচনের বিষয়ে যে আশ্বাসের কথা বলা হচ্ছে সে বিষয়ে জামায়াতের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
যদিও গত ২০ জানুয়ারি ঢাকায় জাতিসংঘের একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার পর জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কথা বলেছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘বিএনপি বাংলাদেশের একটি বড় দল। নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি আছে এবং সে হিসেবে তারা তাদের বক্তব্য রেখেছে। আমরা যেটা বলেছি, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যথা শিগগির সম্ভব নির্বাচন দেওয়ার জন্য। এটাই আমাদের অবস্থান।’ সূত্র: বিবিসি বাংলা।