মেয়ের চিকিৎসা জন্য প্রয়োজন তিন লাখ টাকা। আর এ টাকা জোগাড় করতে রুটি খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় পানি বিক্রি করছেন অসহায় এক বাবা। সম্প্রতি বরগুনায় ২২ সেকেন্ডের এমন একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভিডিওটিতে বুকফাটা আর্তনাদ এবং বাবার আকুতি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক হওয়ায় মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। তবে এর পেছনের ঘটনা এবং সত্য জানতে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে ভিন্ন এক গল্প।
একজন বাবার এমন অসহায়ত্ববোধ দেখে মুহূর্তেই আপলোড হওয়া ভিডিওটি শেয়ার হতে শুরু করে ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ এবং আইডিতে। এতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে অনেকেই যোগাযোগ শুরু করেন নয়নের সঙ্গে। কিভাবে তাকে সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়া যায়, অনেকে তাও কমেন্টে জানতে চান। এমনকি বিষয়টি নজরে আসায়, খোঁজ নিয়ে উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাও দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
ভিডিওটি নজরে এলে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে প্রকৃত ঘটনা। পানি বিক্রি করে মেয়ের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে চাওয়া নয়ন রাসেল নামের ওই ব্যক্তিটি মূলত একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। নয়ন ফানি টিভি নামে তার একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। যেখানে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে নাটক নির্মাণ করে আপলোড করেন। তার টিমে বর্তমানে আটজন সদস্য রয়েছে। গত পাঁচ দিন আগে বাস্তবতার গল্প মুন্নি নামে একটি ছোট নাটক আপলোড করেন তিনি। যেখানে নয়নকে বাবার চরিত্রে মেয়ের চিকিৎসার জন্য পানি বিক্রির অভিনয় করতে দেখা যায়। আর ওই নাটকটি নির্মাণের সময় কেউ একজন ভাইরাল হওয়া ২২ সেকেন্ডের অংশটুকু মোবাইলে ধারণ করে ফেসবুকের একটি পেজে আপলোড করেন। আর ওই ভিডিওর ক্যাপশনে সহযোগিতা করতে আহ্বান জানানোর ফলে অনেকেই সহযোগিতা পাইয়ে দিতে মানুষের কাছে ভিডিওটি পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে শেয়ার করেন বিভিন্ন ফেসবুক আইডি এবং পেজে। এতেই আলোচনায় আসে ঘটনাটি। বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়েন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর নয়ন রাসেল।
এ বিষয়ে কথা হয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটর নয়ন রাসেলের। তিনি বলেন, পাথরঘাটার আবু সাইদ চত্বরে আমার অভিনয় করা পানি বিক্রির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটিকে কেন্দ্র করে অনেক আলোচনাও চলছে। তবে ভিডিওটি প্রথমে যে পেজ থেকে পোস্ট করা হয়েছে সেখানে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা দেখে সকলের বাস্তব মনে হয়েছে। অসহায় বাবাকে সাহায্য করুন এমন ক্যাপশন লিখেও পোস্ট করা হয়েছে অনেক পেজে। ওই ভিডিওটি দেখার পর রাজনৈতিক বিভিন্ন নেতাকর্মীসহ সমাজের অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ফলে এ বিষয়টি নিয়ে আমি বিব্রতকর একটি পরিস্থিতিতে পড়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমি সকলকেই জানাতে চাই ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটি একটি নাটকের দৃশ্য। আমার নিজস্ব একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে, যেখানে নিয়মিত কন্টেন্ট আপলোড করি। তবে সম্প্রতি সময়ে নাটকের ছোট একটি অংশ ভাইরাল হওয়ায় আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সকলের প্রতি অনুরোধ করছি কোনো ভিডিও শেয়ার করার পূর্বে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে নিবেন। -নিউজ ডেস্ক