আব্দুস সালাম, হেড অব নিউজ (দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায় মেসার্স সোনালী ট্রেডার্স নামক এক সার ডিলারের মৃত্যুর পরও তার নাম ব্যবহার করে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা তিন মাস সার উত্তোলন ও বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। কৃষি বিভাগকে ম্যানেজ করে মৃত ব্যক্তির স্বাক্ষর জাল করে এই বিশাল অঙ্কের সার উত্তোলন করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, মেসার্স সোনালী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ও বিসিআইসি-বিএডিসি সার ডিলার মোঃ ফারুক মিয়া গত ৭ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে সৌদি আরবে থাকাকালীন মৃত্যুবরণ করেন। নিয়ম অনুযায়ী ডিলারের মৃত্যুতে লাইসেন্সের কার্যকারিতা স্থগিত হওয়ার কথা থাকলেও, রহস্যজনকভাবে তার নামে সার বরাদ্দ অব্যাহত থাকে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ফারুক মিয়ার দুই ছেলে মোঃ জুবায়ের খান ও ডা. মোঃ তৌহিদ খান দুজনেই দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। বর্তমানে ছোট ছেলে ডা. তৌহিদ খান বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। অভিযোগ উঠেছে তৌহিদ খান তার বাবার লাইসেন্সটি নিজের নামে হস্তান্তরের আবেদন করেছেন। কৃষকদের দাবি, বাবার মৃত্যুর পর অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের সারের বরাদ্দপত্রে মৃত ব্যক্তির জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে সার উত্তোলন করা হয়েছে। বর্তমানে এই ব্যবসাটি অন্য কাউকে দিয়ে পরিচালনা করিয়ে তারা বিদেশে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
২০২৫ সালের সার নীতিমালা অনুযায়ী, একই পরিবারের একাধিক সদস্য ডিলারশিপ পেতে পারেন না। কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র, মৃত ফারুক মিয়ার স্ত্রী হেলেনা খানমের নামেও বীরগঞ্জ উপজেলায় ‘মেসার্স শতরূপা এন্টারপ্রাইজ’ নামে বিসিআইসি ও বিএডিসি সারের ডিলারশিপ রয়েছে। একই পরিবারের দুটি লাইসেন্স থাকা এবং মৃত ব্যক্তির নামে বরাদ্দ বজায় রাখা সরকারি নীতিমালার চরম লঙ্ঘন বলে অভিযোগ করছেন কৃষকরা। একজন মৃত ব্যক্তির নামে কীভাবে কৃষি বিভাগ সারের বরাদ্দ প্রদান ও প্রতিস্বাক্ষর করল, তা নিয়ে কাহারোল উপজেলার সাধারণ কৃষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকদের দাবি, এর পেছনে কৃষি বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের
যোগসাজশ রয়েছে।
গত ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ স্থানীয় কৃষকদের পক্ষ থেকে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক ও সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতির কাছে এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের অনুলিপি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং কৃষি অধিদপ্তরের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
কৃষকরা এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।