প্রতিনিধি ২২ অক্টোবর ২০২২ , ১০:৩৫:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর২৪.কম) খুলনার বিভাগীয় সমাবেশে কোনো অঘটন হলে এর সম্পূর্ণ দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শুক্রবার সকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই হুশিয়ারি দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, খুলনায় আমাদের বিভাগীয় সমাবেশ হবে। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার ইতোমধ্যে একটা সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে। সরকারি দল পথে পথে নেতা-কর্মীদের, সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করছে। খুলনার সমাবেশে বাধা সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যদি কোনো রকম সমস্যা তৈরি হয় তার সব দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সরকারকে নিতে হবে। এটা আবারো প্রমাণিত হবে যে, এ সরকার আসলে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, আমাদের সভা-সমাবেশ তারা করতে দিতে চায় না।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, খুলনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যে বাসায় অবস্থান করছেন সেখানে পুলিশ রেইড করেছে এবং সেখান থেকে ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। সেখানে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, পথে পথে যাকে যেখানে পাওয়া যাবে তাকে গ্রেফতার করার জন্য। সরকারি দলের লোকজন রামদা, লাঠিসোটা ও অস্ত্র নিয়ে শোডাউন দিচ্ছে।
জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, ভোলা-মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ- যশোরের পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত এবং সারা দেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে আজ শনিবার দুপুরে খুলনায় সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিভাগীয় সমাবেশ হবে।
সমাবেশ উপলক্ষে শুক্রবার ও শনিবার গণপরিবহন ধর্মঘটের পেছনে সরকারের হাত রয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সব গণপরিবহন তারা বন্ধ করে দিয়েছে । লঞ্চও বন্ধ করছে। কিন্তু এটাতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এখানে প্রমাণিত হয়েছে যে, সরকার চায় না যে, মানুষ একটা গণতান্ত্রিক উপায়ে তাদের যে প্রতিবাদ সেটা প্রকাশ করুক। তারা একটা সংঘাতের দিকে চলে যাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা সরকারকে এই রাস্তা থেকে ফিরে এসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
‘সরকার জনভীতি রোগে আক্রান্ত’
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার জনভীতি রোগে ভুগছে। এটা হচ্ছে পিপলস ফোবিয়া । মানুষ দেখলেই ভয় পায়। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ভয়টা কিসের তাদের? কী কারণে তারা সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে সমাবেশগুলো বন্ধ করতে চাচ্ছে? কারণ মানুষ যদি বাড়তে থাকে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে না। জনগণের উত্তাল তরঙ্গে তাদের ভেসে যেতে হবে, এভাবে যদি জনগণ জেগে উঠে, গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হবে তখন তাদের অত্যন্ত ধিকৃত অবস্থায় সরে যেতে হবে। এটাই তাদের ভয়। সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্ভিক্ষের আগাম পদধবনি শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলছেন সেটা। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তারা যে ব্যর্থ তা এখন প্রমাণিত হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের বাংলাদেশের কৃষকদের প্রত্যেককে একটা করে সোনার মেডেল দেয়া উচিত। তারা দিনরাত পরিশ্রম করে যে ফসল ফলায় তার জন্য বাংলাদেশের মানুষ কোনো রকমের খেয়ে বেঁচে থাকে। এরা মুখে বলে যে, আমরা খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে গেছি। আর অন্যদিকে লাখ লাখ টাকার খাদ্য বিদেশ থেকে আমদানি করছে। কয়েক দিন আগেও দেখেছেন বিদেশ থেকে আমদানি করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদের পুরো লক্ষ্যটা হচ্ছে- লুট করা, চুরি করা সবখানে।
সরকার প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী যাদেরকে বাধ্যতামূলক অবসর দিচ্ছে তাদের প্রতি যদি অবিচার করা হয় তাহলে আপনারা ক্ষমতায় গেলে তারা ন্যায়বিচার পাবেন কি না প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সবসময় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কথা বলছি। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, আমরা সামাজিক ন্যায়বিচার, মূল্যবোধ, মানবিক মূল্যবোধ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করব। অবশ্যই সবাই যাতে সমান বিচার পায় এটা আমরা দেখব। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন। -নিউজ ডেস্ক