• Top News

    তলানিতে ঠেকেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি

      প্রতিনিধি ৩১ অক্টোবর ২০২২ , ১:৪৯:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ

    (দিনাজপুর২৪.কম) উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও নানা শর্তারোপের কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে ঠেকেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সরকার সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৩০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯৬ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ছিল ৮ হাজার ৫৫৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

    সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকে সবচেয়ে নিরাপদ মনে করা হলেও নানা শর্ত আর অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কমেছে বিক্রি। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২১ হাজার ৫১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ২১ হাজার ১৮০ কোটি ৭৮ টাকা। মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর তিন মাসে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৩০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

    খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ মুনাফার সঞ্চয়পত্রে প্রকৃত সুবিধাভোগী বিনিয়োগ নিশ্চিতের পাশাপাশি সুদ ব্যয় কমাতে নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে সরকার। সব শেষ ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে আয়কর রিটার্নের সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সুদহার কমানো হয়। আবার ঘোষণার বাইরে সঞ্চয়পত্র থাকলে জেল-জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এসব কারণে অনেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছেন।

    জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ৬ হাজার ৯৭৩ কোটি ২৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ৭ হাজার ৪৩ কোটি ৮৬ টাকা। সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর সেপ্টেম্বর মাসে এ খাতে সরকারকে কোষাগার থেকে উল্টো ৭০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা দিতে হয়েছে; অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেওয়ার চেয়ে পরিশোধ করেছে বেশি।

    খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা দেয় সরকার। মেয়াদপূর্তির পরে বিনিয়োগকৃত অর্থও ফেরত দেওয়া হয়। প্রতি মাসে বিক্রি হওয়া সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে প্রাপ্ত বিনিয়োগের হিসাব থেকে আগে বিক্রি হওয়া স্কিমগুলোর মূল ও মুনাফা বাদ দিয়ে নিট ঋণ হিসাব করা হয়। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়; অর্থাৎ গত সেপ্টেম্বরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ না নিয়ে উল্টো পরিশোধ করেছে।

    চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে বলে ঠিক করেছে সরকার।

    গত ২০২১-২২ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে ১ লাখ ৮ হাজার ৭০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র জমা বা বিক্রি করে। এর মধ্যে মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয় ৮৮ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর এ খাতে সরকারের নিট ঋণ ছিল ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা; যা বাজেট ঘাটতি মেটাতে এ খাতের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৬২ দশমিক ২৩ শতাংশ কম। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকারের নিট ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা।

    পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ৪২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৪৯ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঋণ নেয় ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঋণ নিয়েছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। -নিউজ ডেস্ক

    মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।