(দিনাজপুর২৪.কম) রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২৭ ডিসেম্বর এই সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও স্টিকার লাগিয়ে নিজেদের জানান দিচ্ছে প্রার্থীরা। রংপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, জাসদ, বাসদ ও স্বতস্ত্রসহ বিভিন্ন রাজনৈতি দলের প্রায় ২১ জন প্রার্থী প্রচারণায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে শুধু আওয়ামী লীগ থেকেই রয়েছে ছয়জন। দল থেকে কোনো ইঙ্গিত না পেলেও মাঠ প্রচারণায় রয়েছে বিএনপির প্রার্থী। আলোচনায় আছে জামায়াতও।
সোমবার তফসিল ঘোষণার পর প্রচার-প্রচারণার অংশ হিসেবে সভা-সমাবেশ, মোটরসাইকেলে শোভাযাত্রা ও পথসভা শুরু করেছে অনেক প্রার্থী। কেউ কেউ আবার হাটবাজার ও বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। এ ছাড়া খেলাধুলা, পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয়সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন ভোট ও দোয়া চাচ্ছেন। তবে প্রার্থী নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে জোর আলোচনা। রংপুর সিটিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলের প্রায় একডজন নেতার নাম আলোচনায় রয়েছে।
দলের হাই কমান্ডের অপেক্ষায় রয়েছে রংপুর মহানগর বিএনপির সিনিয়র সদস্য ও মহানগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি কাওছার জামান বাবলা। সময়ের আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছি। তবে দল থেকে এখনও কোনো ইঙ্গিত পাইনি।’ দল না চাইলেও স্বতন্ত্রভাবে করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনই কোনো কিছু বলতে পারছি না।’
এ নির্বাচেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার মনোনয়ন নিশ্চিত করেছে জাপা। গত ২৫ অক্টোবর রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে তার নাম ঘোষণা করেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের। মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং মহানগর কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। সময়ের আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার সময়ে নগরীর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং দৃষ্টিনন্দন আধুনিক নগরী গড়তে রংপুরবাসী আবারও আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।’
মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছে একাধিক প্রার্থী। এদের মধ্যে রয়েছে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আবুল কাশেম। রংপুর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এমএ মজিদ ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউর জামান বাবু।
এ ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছেন রংপুর মহানগর যুবলীগের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার লতিফুর রহমান মিলন, হোমিও চিকিৎসক ডা. আখতার হোসেন বাদল, সাবেক মেয়র আবদুর রউফ মানিক, তরুণ ব্যবসায়ী ও সংগঠক তানভীর হোসেন আশরাফি, ব্যবসায়ী ও সংগঠক মেহেদী হাসান বনি ও নারী নেত্রী সুইটি আনজুম।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন আনোয়ার হোসেন বাবলু ও আবদুল কুদ্দুস, ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে কাজী মাজহারুল ইসলাম লিটন, ইসলামী আন্দোলন থেকে এটিএম গোলাম মোস্তফা বাবু, খেলাফত মজলিস থেকে উপাধ্যক্ষ তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু এবং এনপিপির শফিকুল ইসলাম রাকুর নাম শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির মাহবুবুর রহমান বেলাল নগরবাসীর দোয়া ও সমর্থন কামনা করে পোস্টার সাঁটিয়েছেন। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়ন পেতে একাধিক প্রার্থী দৌড়ঝাপ করছে। বর্তমানে তারা ঢাকায় অবস্থান করছে অনেকে।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল সময়ের আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রংপুর সিটি করপোরেশনের নেতৃত্বে রয়েছে জাতীয় পার্টি। এখন দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা আওয়ামী লীগের মেয়র চায়। আমি গত চার বছর ধরে মাঠে রয়েছি। জনগণের চাওয়াটা বুঝি। জনগণ আমার সঙ্গে আছে।
তফসিল ঘোষণার পর যারা প্রচার-প্রচারণা করছে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির যুগ্ম সচিব (নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা-২) ফরহাদ আহম্মদ খান সময়ের আলোকে বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রার্থী নির্বাচনি প্রচারণা করতে পারবে না।’
সোমবার রংপুর সিটি নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন দাখিলের শেষদিন ২৯ নভেম্বর, বাছাই ১ ডিসেম্বর, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ৮ ডিসেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ৯ ডিসেম্বর এবং ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ২৭ ডিসেম্বর। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে এ সিটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে এই সিটির জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। আর ভোটার রয়েছে চার লাখের বেশি। -নিউজ ডেস্ক