(দিনাজপুর২৪.কম) চাহিদার সঙ্গে গ্যাসের জোগানের ব্যবধান বাড়ায় চট্টগ্রামে কমে গেছে গ্যাসের চাপ। নগরীর বাসাবাড়িতে রান্নাঘরের চুলাগুলোও এখন জ্বলে না। বন্ধ হয়ে গেছে হোটেল রেস্তোরাঁগুলোর রান্নাবান্নাও। শিল্প কারখানা ও সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনেও শুরু হয়েছে হাহাকার।
গ্যাসের ভয়াবহ সংকট শুরু হয়েছে নগরীজুড়ে। একদিকে বৈশ্বিক সংকটের কবলে এলএনজি আমদানি কম, অন্যদিকে ঢাকাসহ সন্নিহিত অঞ্চলে গ্যাসের প্রবাহ মোটামুটি পর্যায়ে রাখতে গিয়ে চট্টগ্রামে গ্যাসের জোগান কমে গেছে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) প্রকৌশলী আমিনুর রহমান এ তথ্য জানান। কেজিডিসিএলের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্যাসের জোগান কমে গেছে। শীতকালে গ্যাস সরবরাহ কিছুটা ব্যাহত হয়। সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে বর্তমানে চাহিদার অর্ধেকের চেয়ে সামান্য বেশি গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হয়। দৈনিক ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে ২৬০ থেকে ২৬৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জোগান পুরো সেক্টরে তীব্র সংকট সৃষ্টি করেছে।
এর মধ্যে কাফকো এবং সিইউএফএল উৎপাদন চালু রাখায় গ্যাসের একটি বড় অংশ তারা ব্যবহার করে। এই দুটি সার কারখানা বর্তমানে প্রতিটি ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট করে দৈনিক ৮২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করে। এর বাইরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেওয়া হয় কেবল ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। বাকি ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিয়ে চট্টগ্রামের শিল্প কারখানা, সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন, বাণিজ্যিক ও আবাসিকসহ সব খাত সামাল দেওয়া হয়। এতে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে সার ও বিদ্যুৎ ছাড়া সব শিল্প কারখানা, সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন, বাণিজ্যিক এবং আবাসিক মিলে নন বাল্ক বা অন্যান্য খাতে ১৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হতো। এই গ্যাস দিয়ে কোনোরকমে জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছিল বিশাল এ কর্মযজ্ঞ। কিন্তু সার উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির অন্যান্য খাতে গ্যাসের জোগান অস্বাভাবিক হারে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, আগে যেখানে দৈনিক ১৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হতো এখন সেখানে ১০০ থেকে ১১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হয়। চাহিদার প্রায় এক-চতুর্থাংশ গ্যাস কমিয়ে দেওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গ্যাসের চাপ খুব বেশি কমে যাওয়ায় শিল্প কারখানাসহ সব খাতই বেকায়দায় পড়েছে। বিশেষ করে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন জমতে দেখা যায়।
সবার বাসাবাড়িতে গ্যাসের জন্য হাহাকার চলছে। হোটেল-রেস্তোরাঁর সব চুলাও বন্ধ হয়ে গেছে। নগরীজুড়ে শুরু হয়েছে গ্যাসের জন্য হাহাকার।
নগরীর খুলশী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আহসান উল্লাহ অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, কী করব কিছু বুঝতে পারছি না। ঘরে চুলা জ্বলে না। রান্নাবান্না বন্ধ। হোটেল থেকে খাবার আনার জন্য ফোন করে সেখানেও চুলা বন্ধের দুঃসংবাদ পেয়েছি। হালিশহর আবাসিক এলাকার একাধিক বাসিন্দা চুলা না জ্বলার কথা জানিয়েছেন।
নগরীর টাইগারপাস মোড়ে অবস্থিত ইন্ট্রাকো ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার আবু জাফর বলেন, ‘সকাল থেকে গ্যাসের চাপ নেই। ফলে সিএনজি অটোরিকশাসহ গ্যাসচালিত যানবাহনগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। অনেক সিএনজি অটোরিকশা দিনভর গ্যাসের অপেক্ষায় লাইন ধরে আছে।’
সিএনজি অটোরিকশাচালক সমশের মুমিন বলেন, ‘গ্যাসের কারণে সারাদিন সিএনজি অটোরিকশা অচল হয়ে পড়ে আছে। ফলে দিনের আয় মাটি হয়ে গেছে। এখন সিএনজি অটোরিকশার দৈনিক জমা কীভাবে দেব এবং সংসারের খরচ কীভাবে চালাব, তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছি।’ -অনলাইন ডেস্ক