প্রতিনিধি ২০ ডিসেম্বর ২০২২ , ৮:১০:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর২৪.কম) ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য বাহিনীটির সদস্যদের শৃঙ্খলা ব্যঘাত না ঘটানোর আহ্বান জানান তিনি। বিজিবি সদস্যদের চেইন অব কমান্ড মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেকোনো বাহিনীর জন্য মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে শৃঙ্খলা, চেইন অব কমান্ড। কখনও শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না। অর্পিত দায়িত্ব মেনে চলবেন ও চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন।’
মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দিবস-২০২২ উপলক্ষে সকালে বিজিবি সদর দফতরের বীরউত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে বক্তব্যে প্রদানকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে সীমান্ত সুরক্ষা ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিজিবিকে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করারও নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবিকে বিশ্ব মানের সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১’ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ। আর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টেলিফোন যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারিত করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তাই সবাইকে সততার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বাহিনীর শৃঙ্খলা, চেইন অব কমান্ড সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে উদ্বৃত করেও কথা বলেন। বলেন, ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস সদস্যদের উদ্দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘ঈমানের সঙ্গে কাজ কর, সৎ পথে থেকে দেশকে ভালোবাস। এই দেশ আমাদের।’দেশ উন্নত হলে, আপনারা সবাই ভালো থাকবেন, উন্নত জীবন পাবেন। চিকিৎসায় পাবেন। এই কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতা বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারতেন। কিন্তু সেটা আমাদের ভাগ্যে জোটেনি। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা এ বাহিনীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে এর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কাজ শুরু করেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০’ প্রণয়নসহ বিজিবিকে একটি বিশ্বমানের আধুনিক, দক্ষ ও শক্তিশালী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১’এর পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় বাহিনীর পুনর্বিন্যাস করে বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে ৫টি রিজিয়নসহ নতুন নতুন সেক্টর ও ইউনিট সৃজন করে কমান্ড স্তরে ভারসাম্য আনাসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করা হয়েছে।
বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশ পথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম এমনটা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, দেশের সীমান্ত এলাকায় নিশ্ছিদ্র নজরদারি ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে ‘স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্যাল বর্ডার রেসপন্স সিস্টেম’ স্থাপন করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে অত্যাধুনিক আর্মাড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি), রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল, অল ট্যারেইন ভেহিক্যাল (এটিভি), আধুনিক ও যুগোপযোগী এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিভিন্ন সিরিজের হাইস্পিড বোট এবং এয়ার বোট সংযোজন করা হয়েছে। বিজিবিতে এসব অত্যাধুনিক ও যুগোপযোগী অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি যুক্ত হওয়ায় এ বাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সৈনিকদের মনোবল ও কর্মোদ্দীপনা বহুগুণ বেড়েছে।
তিনি জানান, ভারত এবং মিয়ানমার সীমান্তে ৪টি ব্যাটালিয়ন এবং সুন্দরবন এলাকায় ২টি ভাসমান বিওপিসহ মোট ৬২টি বিওপি সৃজনের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৫শত কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তের মধ্যে অধিকাংশ সীমান্তই এরই মধ্যে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়াও সীমান্তে বিজিবির সক্ষমতা বৃদ্ধি, অপারেশনাল কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন এবং নজরদারি জোরদার করার জন্য বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকা কমানোর লক্ষ্যে ২৪২টি নতুন বিওপি সৃজন এবং সীমান্ত হতে অধিক দূরত্বে স্থাপিত ১২৬টি বিওপি সীমান্তের সন্নিকটে স্থানান্তরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিজিবি সৈনিকদের জীবনমান উন্নয়নে বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কল্যাণমুখী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।
বিজিবি সদস্য ও তাদের পরিবারের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য বর্ডার গার্ড হাসপাতাল, ঢাকায় ক্যাথ ল্যাব, সিসিইউ, আরটিপিসিআর ল্যাব, ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপনসহ আরও অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সংযোজন করে বিজিবি হাসপাতালসমূহকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হয়েছে বলেও জানান তিনি। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিজিবি প্রধানসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা এবং সামরিক-অসামরিক পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। -ডেস্ক রিপোর্ট