প্রতিনিধি ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ , ১০:৪৫:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর২৪.কম) দেশে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে মেট্রোরেল। এর ফলে গণপরিবহনে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর মানুষ অপেক্ষা করে আছে মেট্রোরেলের। সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটছে আগামী ২৮ ডিসেম্বর। রাজধানীতে ছুটে চলবে নতুন বাহন বৈদ্যুতিক ট্রেন। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকা শহরে মূলত সড়কপথের ওপরই নির্ভর করতে হয়। বাস সার্ভিস সীমিত হওয়ায় ব্যক্তিগত গাড়িতে ভরসা করতে হচ্ছে। এতে করে যানজট বাড়ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে পথে। এমন অবস্থা থেকে নিস্তার মিলছে। রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। সাধারণ যাত্রীরা এটিতে চড়তে পারবেন ২৯ ডিসেম্বর থেকে।
উদ্বোধনের পর শুরুর দিকে চার ঘণ্টা করে চালানোর জন্য পাঁচটি ট্রেন থাকবে। তবে ১২টি ট্রেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রথম তিন মাসের পর সব কটি ট্রেন চলতে শুরু করবে। মেট্রোরেল চালু হলে উত্তরা থেকে মিরপুর হয়ে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে গণপরিবহনে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।
প্রথম পর্যায়ে মেট্রোরেল যে অংশে চলাচল শুরু করবে, সেই উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া হবে ৬০ টাকা। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার (মধ্য) ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ভাড়া ২০ টাকা। এ ছাড়া প্রথম স্টেশন উত্তরা উত্তর থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দূরত্বভেদে ভাড়া ভিন্ন হবে। স্থায়ী কার্ড কিনে মেট্রোরেলের টিকিট কাটা যাবে। এ জন্য সময় সময় টাকা ঢোকাতে (রিচার্জ) হবে। এ ছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে স্টেশন থেকেও টিকিট কাটা যাবে।
প্রতি ট্রেনে ২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রী পরিবহনের কথা বলা হলেও প্রাথমিকভাবে ২০০ যাত্রী তোলা হবে। প্রথম তিন মাস এভাবে চলতে পারে। এর কারণও আছে। সাধারণ মানুষ মেট্রোরেলে অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে। স্টেশনের ভেতরে ঢুকে কোথায় টিকিট কাটবে, কীভাবে ট্রেনে ওঠবে এবং নামবে, তা প্রথম দিকে বুঝে ওঠা সময়সাপেক্ষ। এ কারণে সব স্টেশনে এখন যাত্রী ওঠানামার সুযোগ থাকবে না। প্রথম দিকে এই রুটের ৯টি স্টেশনের তিনটি দিয়াবাড়ী, পল্লবী ও আগারগাঁওয়ে যাত্রী ওঠানামা করবে। মাঝের স্টেশনগুলোয় ট্রেন থামানোর কার্যক্রম শুরু হবে পরে। মেট্রোরেলের স্টেশনে লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যাবে। তিনতলা স্টেশন ভবনের দ্বিতীয় তলায় টিকিট কাটার ব্যবস্থা, অফিস ও নানা সরঞ্জাম থাকবে, যাকে বলা হচ্ছে কনকোর্স হল। তিন তলায় থাকবে রেললাইন ও প্ল্যাটফর্ম। শুধু টিকিটধারী ব্যক্তিরা ওই তলায় যেতে পারবেন। দুর্ঘটনা এড়াতে রেললাইনের পাশে বেড়া থাকবে। স্টেশনে ট্রেন থামার পর বেড়া ও ট্রেনের দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে। আবার নির্দিষ্ট সময় পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হবে।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানায়, শুরুর দিকে রাজধানীর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও যেতে সময় লাগবে প্রায় ২০ মিনিট। পরে সময় ১৬ থেকে ১৭ মিনিটে নেমে আসবে। মেট্রোরেলের প্রতিটি ট্রেনে ছয়টি কোচ রয়েছে। এর মধ্যে দুই প্রান্তের দুটি কোচকে বলা হচ্ছে ‘ট্রেইলর কার’। এতে চালক থাকবেন। এসব কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। প্রতিটিতে যাত্রী উঠতে পারবেন সর্বোচ্চ ৩৭৪ জন। আর মাঝখানের চারটি কোচ হচ্ছে মোটরকার। এতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সেখানে প্রতিটিতে চড়তে পারবেন ৩৯০ জন। প্রথম দিকে সকাল ও বিকালে মেট্রোরেল চলবে। মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সূত্র জানিয়েছে, শুরুতে কম সময় চালানো এবং কম যাত্রীকে সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞরা একমত হয়েছেন। মেট্রোরেল ছুটবে সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে। মেট্রোরেল পুরোপুরি চালু হলে দৈনিক ৪ লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক বলেন, শুরুতে মেট্রোরেল চলাচলের সময় ও যাত্রীসংখ্যা সীমিত হবে। আস্তে আস্তে ট্রেনের চলাচল বাড়বে, যাত্রীও বেশি করে তোলা যাবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মেট্রোরেলের যাত্রীরা চাইলে নিজের গাড়ি একেবারে স্টেশনের সিঁড়ি বা লিফটের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারবেন। যেখানে স্টেশন প্লাজা থাকবে, সেসব স্থানে থাকবে এ সুযোগ। এ ছাড়া বাস, ট্যাক্সি, অটোরিকশা এসব গণপরিবহনে আসা যাত্রীরাও স্টেশনের কাছে এসে নামতে পারবেন। মেট্রোরেলের দুই প্রান্ত থেকে নামা যাত্রীদের শাটল বাস সার্ভিস দেবে বিআরটিসি। আগারগাঁও এবং উত্তরা থেকে দুটি রুটে মেট্রোরেলের যাত্রী পরিবহনের জন্য বিআরটিসির ৫০টি বাস চলবে। ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশন ও উত্তরা উত্তর স্টেশনে বিআরটিসির গাড়ি রাখার জায়গা করা হয়েছে। দুই স্টেশন থেকে যাত্রী নিয়ে গাড়িগুলো ছাড়বে। যদিও ভবিষ্যতে এসব জায়গার স্টেশন প্লাজা নির্মাণ করা হবে। বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ বলছে, উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় বিআরটিসির ১০টি বাস থাকবে। আর আগারগাঁও থাকবে ৪০টি।
সূত্রমতে, এমআরটি-৬ প্রকল্পের আওতায় উত্তরা (দিয়াবাড়ী) থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল করা হবে। পুরো পথের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটারের কিছু বেশি। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পথের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এ পথে ৯টি স্টেশন রয়েছে। উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ী), উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশন রয়েছে সাতটি- বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, শাহবাগ, টিএসসি, প্রেসক্লাব ও মতিঝিল। অবশ্য মেট্রোরেল কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার সম্প্রসারণ করা হবে। মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল আগামী বছরের শেষ দিকে চালুর কথা রয়েছে। কমলাপুর পর্যন্ত চালু হতে ২০২৫ সাল লেগে যেতে পারে। ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে জাইকা ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে। সরকার খরচ করছে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। -ডেস্ক রিপোর্ট