ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন আগামী শনিবার। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটির কাছে এ সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে দলের সাধারণ সম্পাদককেই। তাই ত্যাগী, যোগ্য, তৃণমূলের গ্রহণযোগ্য, সৎ, সাহসী ও গুণের অধিকারী, যার বিরুদ্ধে নেই কোনও ধরণের বিতর্ক, যিনি আন্তর্জাতিক লবিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন, তেমনি একজন নেতাকে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিয়ে আসার কথা ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে দলটির সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে আলোচনায় রয়েছেন অনেকেই।
গত টানা ১০ বারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা ছাড়া বিকল্প কাউকে ভাবতে পারছেন না তৃণমূলসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক? ইতোমধ্যে সাধারণ সম্পাদক নিয়ে রয়েছে নানা ধরণের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, দলটির সাধারণ সম্পাদক পদে চমক নিয়ে আসছেন শেখ হাসিনা। তবে কেউ কেউ বলছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন।
দলীয় সূত্র বলছে, পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে। তাদের মধ্য থেকে শেখ হাসিনা আগামী কাউন্সিলে চমক নিয়ে আসছেন। এসব নেতাদের মধ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন। তবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, কাজী জাফর উল্যাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদা মাহমুদ চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সব কিছু নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সবার দৃষ্টি দলের সাধারণ সম্পাদক পদের দিকে। এ পদে প্রার্থীদের অনেকের ইচ্ছা থাকতে পারে। অন্তত গণতান্ত্রিক দল হিসেবে। আমার জানা মতে, এখানে অন্তত ওই পদের ১০ জন প্রার্থী আছেন। এই পদে আসতে চান। কে হবেন, এটা নেত্রীর ইচ্ছা এবং কাউন্সিলরদের মতামতের ওপর নির্ভর করছে। সবকিছু প্রতিফলন ঘটবে দ্বিতীয় অধিবেশনে, তিনটার পর যেটা শুরু হবে, সেখানে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আপনি হচ্ছেন এমন গুঞ্জন রয়েছে, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘গুঞ্জন, সব সময় গুঞ্জনই। সম্মেলনে সমস্ত বিচার বিবেচনা করে শেখ হাসিনাই ঠিক করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক কে হবেন? এ বিষয়ে ডেলিগেটরাও শেখ হাসিনার কাছে আস্থা রেখে তাকেই দায়িত্ব দেন। তাই তিনিই ঠিক করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক: সম্মেলনে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদেও আসতে পারে ব্যাপক পরিবর্তন। এই পদ থেকেও সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য পদে কেউ কেউ যেতে পারেন। একই সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে প্রোমোশন দিয়ে দুই একজনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আনা হতে পারে। এরমধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন-যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে এই পদেই রাখা হতে পারে। এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এ কে এম এনামুল হক শামীম , এস এম কামাল হোসেন ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আনা হতে পারে।
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দলে শেখ হাসিনার কোনও বিকল্প নেই। প্রত্যেক কর্মী সমর্থক চায় শেখ হাসিনা যতদিন বেঁচে আছেন, ততদিন দলকে নেতৃত্ব দেবেন। তবে অন্যান্য পদে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সুপ্রিম লিডার, তিনি ঠিক করবেন কে কোন পদে থাকবেন।’
সাংগঠনিক সম্পাদক: সাংগঠনিক পদেও পরিবর্তন আসছে। যারা এই পদে আছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে পদোন্নতি পাবেন। আর বাকি পদগুলো সম্পাদকীয় পদ থেকে পদোন্নতি দেওয়া হবে। এরমধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন-দলের বর্তমান বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, শেখ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের পুত্র, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ও সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়কে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আনা হতে পারে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সম্মেলনে দলে বেশ কিছু চমক আসবে। কারণ বঙ্গবন্ধু কন্যা সব সময়ই চমক পছন্দ করেন। আগামীতে দলে তারাই নেতৃত্বে আসবেন, যারা আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত, ত্যাগী, যোগ্য, সৎ। একই সঙ্গে যেসব নেতাদের সঙ্গে তৃণমূলের নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে, সুসম্পর্ক রয়েছে। যারা নেতাকর্মীদের কথা ভাবেন। সময় দেন। তাদের সমস্যা সমাধান করেন, তারাই নেতৃত্বে আসবেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে সম্পাদকীয় পদে আলোচনা রয়েছে শেখ পরিবার নিয়েও। রীতি অনুযায়ী আওয়ামী লীগের কাউন্সিলররা দলীয় সভাপতিকেই সর্বসম্মতিক্রমে দায়িত্ব দেন সাধারণ সম্পাদকসহ দলের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের। ফলে সবাই তাকিয়ে আছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। এদিকে আওয়ামী লীগের আগের কয়েকটি জাতীয় সম্মেলনের মতো এবারও বঙ্গবন্ধু পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। বিশেষ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোতে আসছেন কি না, এ নিয়ে নেতাকর্মীদের কৌতূহল রয়েছে।’
আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের জন্য নেত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। এর বাইরে নেত্রী যাকে মনে করবেন তাকে কমিটিতে রাখবেন। সব সিদ্ধান্ত নেত্রীর। তাই তিনি যেখানে রাখবেন সেখানেই থাকবো।’
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক: প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন-ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এই পদেই থাকছেন। তবে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন আমিনুল ইসলাম, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
দপ্তর সম্পাদক: সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন, তারা হলেন- ইকবাল হোসেন অপু ও সায়েম খান।
বন ও পরিবেশ সম্পাদক: বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদে যারা আলোচনায় রয়েছেন তারা হলেন-দেলোয়ার হোসেন, হারুনুর রশিদ, শামসুন নাহার চাঁপা, রিয়াজুল কবির কাওসার।
আইন সম্পাদক: আইন সম্পাদক পদে নজিবুল্লাহ হিরুই থাকছেন এমন শোনা যাচ্ছে। তবে সাবেক ছাত্র নেতা এডভোকেট বলরাম পোদ্দার ও এডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসের নাম শোনা যাচ্ছে।
মহিলা বিষয়ক সম্পাদক: মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পদে আসতে পারেন মারুফা আক্তার পপি অথবা যুব মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল।
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক: আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ড. সাম্মি আহমেদই থাকছেন এমনটা শোনা যাচ্ছে। তবে অসীম কুমার উকিলেরও নাম শোনা যাচ্ছে।
কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক: কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক পদে ফরিদুন্নাহার লাইলী থাকতে পারেন। অথবা অসীম কুমার উকিলও আসতে পারেন।
ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক: ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদেও আসবে পরিবর্তন। এই পদে ইকবাল হোসেন অপু ও হারুনুর রশিদের নাম শোনা যাচ্ছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুরই থাকছেন এমন শোনা যাচ্ছে। তবে এর বাইরেও সদস্য পদে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে যারা যোগ্য সেখান থেকে কাউকে আনা হতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে আসতে পারেন অসীম কুমার উকিল। এছাড়া শামসুন নাহার চাঁপার নামও শোনা যাচ্ছে।
যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক: যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে হারুনুর রশিদই থাকছেন। তবে যুব ও ক্রিয়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ হাসান রাসেলের নামও শোনা যাচ্ছে।
শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক: শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক পদে গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণার নাম শোনা যাচ্ছে। এই পদে মারুফা আক্তার পপির নামও শোনা যাচ্ছে।
সাংস্কৃতিক সম্পাদক: সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে আসছে পরিবর্তন এ ক্ষেত্রে শিল্পী ডা. অরুপ রতন চৌধুরী, দীপঙ্কর তালুকদার ও সানজিদা খানমের নাম শোনা যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক: স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক পদে ডা. রোকেয়া সুলতানাই থাকছেন। তবে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের নামও শোনা যাচ্ছে।
সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য: সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য পদে যারা রয়েছেন তাদের বেশিরভাগই থাকছে। তবে বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য করা হতে পারে। -অনলাইন ডেস্ক