• Top News

    একদিন করে বাবা-মায়ের কাছে থাকবে লায়লা

      প্রতিনিধি ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৫:৩৬:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ

    সংগৃহীত ছবি

    (দিনাজপুর২৪.কম) আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাপানি দুই শিশুর মধ্যে ছোট শিশু নাকানো লায়লা রিনা (০৯) বাবার কাছে একদিন ও মায়ের কাছে একদিন করে থাকবে। অপরদিকে পারিবারিক আদালতের দেওয়া রায় মোতাবেক বড় মেয়ে নাকানো জেসমিন মালিকা (১১) মায়ের হেফাজতেই থাকবে।

    আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ এ আদেশ দেন। দুপুর পৌনে ২টা থেকে আদালতে শুনানি শুরু হয়। এদিন মা নাকানো এরিকোর পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির শুনানি করেন। বাবা ইমরান শরিফের পক্ষে তার আইনজীবী নাসিমা আক্তার লাভলী শুনানি করেন। দুই পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য উপস্থাপন শেষে বিচারক তার খাস কামরায় দুই শিশুর বক্তব্য শুনে এ আদেশ দেন।

    এর আগে, আদালতে শিশু নাকানো লায়লা রিনাসহ আদালতে হাজির হন বাবা ইমরান শরীফ। গুলশান থানা পুলিশ তাদের হাজির করেন। তখন আদালতে উপস্থিত ছিলেন জাপানি মা এরিকো নাকানো এবং তার সঙ্গে ছিলেন তাদের বড় মেয়ে নাকানো জেসমিন মালিকা (১১)।

    শুনানিতে মা নাকানো এরিকোর আইনজীবী শিশির মনির দাবি করেন, ‘পারিবারিক আদালত বাবার মামলা খারিজ করে দিয়েছেন। সেই খারিজের রায় অনুযায়ী উভয় সন্তান মায়ের কাছে থাকবে। রায়ের পর বাবা ছোট মেয়ে নাকানো লায়লা রিনাকে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। তাই জাপানি মা গুলশান থানায় জিডি করেন। সেই জিডির ভিত্তিতে র‌্যাব ওই শিশুকে উদ্ধার করে। মা রায় পেয়েছে। তাই এই শিশু এখন মায়ের কাছেই থাকার অধিকারী। বাবা কোনো অধিকার রাখেন না তার কাছে রাখার।’

    বাবা ইমরান শরিফের আইনজীবী নাসিমা আক্তার বলেন, ‘বাবা সন্তানকে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে যাননি। মিথ্যা তথ্য দিয়ে জিডি করেছেন। পারিবারিক আদালত বাবার মামলা খারিজ করে রায় দিয়েছেন। রায় যথাযথ হয়নি। তাই আমরা জেলা জজ আদালতে আপিল করেছি। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি আপিল শুনানি হবে। লায়লা রিনা ও জেসমিন মালিকাকে নিয়ে মা এরিকো নাকানো জাপান চলে যাওয়ার সময় ইমিগ্রেশন আটকে দেয়। তখন বাবা খবর পেয়ে এয়ারপোর্ট যান। সেখানে ছোট মেয়ে লায়লা রিনা বাবার কাছে ছুটে আসে এবং বলে সে জাপান যেতে চায় না, বাবার কাছে থাকতে চায়। তখন থেকেই সে বাবার কাছে আছে। সে মাকে পছন্দ করে না। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছি। তাই আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই সন্তান বাবার কাছে থাকার আইনগত অধিকার রয়েছে। আপনি (বিচারক) শিশুর বক্তব্য শুনুন সে বাবার কাছে থাকতে চায় কি না। যদি না চায় তাহলে দিয়ে দিন।’

    এরপর বিচারক খাস কামরায় শিশু লায়লা রিনার বক্তব্য শোনেন। বিচারক আদেশ দেওয়ার সময় বলেন, ‘আমি শিশু সন্তানের বক্তব্য শুনলাম, সে বাবার কাছে থাকতে চায়। আমি আর কি করতে পারি।’

    তখন নাকানো এরিকোর আইনজীবী বলেন, ‘উচ্চ আদালত সন্তানদের বাবা-মা উভয়কেই একদিন একদিন করে দেখা করার অনুমতি দিয়ে ছিলেন। আপনি সেভাবে আদেশ দিতে পারেন।’

    তখন ইমরান শরিফের আইনজীবী বলেন, ‘যেখানে এই সন্তান মায়ের কাছে যেতে চান না সেখানে এমন আদেশ দেওয়া বেআইনি হবে। আর এভাবে আদেশ দেওয়ার এখতিয়ার পারিবারিক আদালত ছাড়া এ আদালতের নেই।’

    তখন বিচারক বলেন, ‘আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিশু লায়না রিনা একদিন বাবা এবং একদিন মায়ের কাছে থাকবে।’

    আদালতের আদেশের পর বাবাকে জড়িয়ে ধরে শিশু লায়না রিনাকে কান্না করতে দেখা যায়। এর আগে, এদিন দুপুর পৌনে ১২টার সময় শিশু লায়না রিনা জানায়, ‘আমি বাবার কাছে থাকতে চাই, মায়ের কাছে যাব না।’

    এর আগে, গত ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান বাবার জিম্মা নেওয়ার আবেদন খারিজ করে রায় দেন।

    উল্লেখ্য, মা জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।

    মেয়েদের জিম্মায় পেতে করোনা মহামারির মধ্যে গতবছর জুলাই মাসে বাংলাদেশে আসেন ওই জাপানি নারী। তিনি হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারপতিরা। কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাইকোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেয়। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়। এরপর গত বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে, তার নিষ্পত্তি পারিবারিক আদালতে হবে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দেন আপিল বিভাগ। এরপর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে আসে। -ডেস্ক রিপোর্ট

    মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।

    আরও খবর

    Sponsered content