• Top News

    মুহুর্মুহু বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল দুই কিলোমিটার এলাকা

      প্রতিনিধি ৬ মার্চ ২০২৩ , ১১:১০:০২ প্রিন্ট সংস্করণ

    (দিনাজপুর২৪.কম) বিকাল তখন ৪টা ৪০ মিনিট। সীতাকুণ্ডের কদমরসুলপুর বাজারের মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে শ্যালকের দোকানে বসলেন ব্যবসায়ী শামসুল আলম। হঠাৎ  একের পর এক বিস্ফোরণের বিকট শব্দ আসতে থাকে। চেয়ার থেকে উঠতে যাবেন- ঠিক সেই মুহূর্তেই তার মাথার  উপর এসে পড়লো প্রায় ২৫০ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের টুকরো। সেখানেই মৃত্যু হয় তার। শনিবার সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট দুর্ঘটনার একটি চিত্র এটি। দুর্ঘটনায়  ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২০ জন। এরমধ্যে ২ জন আইসিউতে আছেন। তাদের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

    ঘটনায় নিহত  ৬ জনের মধ্যে ৫  জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। তারা হলেন- মো. শামসুল আলম (৫৬), মো. ফরিদ (৩৬), রতন নখরেট (৪৫), আব্দুল কাদের (৫০) ও সালাউদ্দিন (৩৪)। ভয়াবহ এই বিষ্ফোরণে অক্সিজেন প্লান্টটির কয়েক কিলোমিটার এলাকা প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে উঠে। আশেপাশের অনেক বাড়িঘর ও দোকানের গ্লাস ভেঙে পড়ে। কিছু কিছু বিল্ডিংয়ে দেখা দেয় ফাটল।  চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক শ্রমিকের স্বজন আবদুল কাদের মানবজমিনকে বলেন, আমার বাড়ি মাদামবিবি এলাকায়। এটি সীমা ফ্যাক্টরি থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হঠাৎ পুরো ঘর কেঁপে উঠে। ভূমিকম্প ভেবে ঘরের সবাই বের হয়ে পড়ি। বের হতেই শুনি বিষ্ফোরণের আওয়াজ। আমাদের মতো বাড়ির  অন্যদেরও একই অবস্থা। পরে বাসায় এসে দেখি কাঁচের জানালা ফেটে গেছে। টেবিলের এক পাশে রাখা বইপত্র নিচে পড়ে আছে।

    গতকাল সকাল ৭টায়  ঘটনাস্থলে এসে দ্বিতীয়দিনের মতো উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ,  র‍্যাব ও নৌবাহিনীর যৌথ টিম। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লোকজনও অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে নতুন করে কারও লাশ ও আহতদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে ঘটনাস্থলে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

    এদিকে ঠিক কী কারণে এই ভয়ায়হ বিষ্ফোরণ তা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারেননি। এমনকি মালিকপক্ষ এই বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন। তবে গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে আসা বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, প্ল্যান্টে অক্সিজেন ছাড়াও কার্বন ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেনের সিলিন্ডার দেখা গেছে। কাজেই অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমেই যে বিষ্ফোরণ  হয়েছে- তা ঠিক বলা যাচ্ছে না। প্ল্যান্টের ৪টি পয়েন্টে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে প্ল্যান্ট থেকে যে কলামের মাধ্যমে অক্সিজেন সিলিন্ডারে ভরা হয়, সেটি বিস্ফোরিত হয়েছে। বাকিটা তদন্ত করে বলা লাগবে।

    চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কারখানাটির কম্প্রেসার অপারেটর মো. ওসমান বলেন, এখানে বাতাস থেকে অক্সিজেন উৎপাদন করা হতো। অক্সিজেনের অতিরিক্ত চাপের কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে। বিস্ফোরণের সময় আমি ঘটনাস্থলের পাশেই ছিলাম।
    ঘটনার পর থেকে নিরুদ্দেশ থাকলেও গতকাল দুপুরে প্রকাশ্যে আসেন অক্সিজেন প্ল্যান্টটির ম্যানেজার আবদুল আলীম। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সর্বোচ্চ যতেœর সঙ্গে আমাদের কার্যক্রম চলছে। আমাদের কাছে ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক পরিদপ্তরসহ সব সংস্থার ছাড়পত্র, সনদ রয়েছে। কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তা বলতে পারছি না। আমাদের ৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর এখন যারা হতাহত হয়েছেন সবাইকেই কোম্পানির পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের সঙ্গে আমরা সমন্বয় করবো।

    এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানকে প্রধান করে গঠিত এই কমিটিকে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটিতে পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড), ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতিনিধি, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রতিনিধিকে সদস্য করা হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরণে আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে সাড়ে ৭ হাজার টাকা  এবং নিহতদের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা  দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পরবর্তীতে নিহতের পরিবারকে আরও ২ লাখ টাকা দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
    সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন মানবজমিনকে  বলেন, আমাদের উদ্ধার অভিযান শেষ। ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। হাসপাতালে ২০ জন চিকিৎসাধীন আছেন। -ডেস্ক রিপোর্ট

    মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।

    আরও খবর

    Sponsered content