• Top News

    যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনো দেশের ক্ষমতা উল্টাতে-পাল্টাতে পারে: প্রধানমন্ত্রী

      প্রতিনিধি ১০ এপ্রিল ২০২৩ , ৯:৩১:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ

    সোমবার জাতীয় সংসদে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

    (দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডট কম) যুক্তরাষ্ট্র চাইলে যেকোনো দেশের ক্ষমতা উল্টাতে-পাল্টাতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেছেন, তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, আবার দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্তদের পক্ষ হয়েই তারা ওকালতি করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে এখানে এমন একটা সরকার আনতে চাচ্ছে— তার গণতান্ত্রিক কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। অগণতান্ত্রিক ধারা। আর সেই ক্ষেত্রে আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী, সামান্য কিছু পয়সার লোভে এদের তাঁবেদারি করে। পদলেহন করে।’

    সোমবার জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশনে আনা ১৪৭ বিধির সাধারণ প্রস্তাব ও অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

    সংসদ নেতা তার বক্তব্যের বড় অংশে বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান, বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরত না দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। কথা বলেন সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধনী প্রস্তাবের দাবি, জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি খবর নিয়েও।

    একইসঙ্গে ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়ন’ প্রসঙ্গ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা খুবই বিচিত্র। আমরা আইয়ুব আমল দেখেছি। ইয়াহিয়া আমল দেখেছি। জিয়ার আমল দেখেছি। জেনারেল এরশাদের আমল দেখেছি। খালেদা জিয়ার আমলও দেখেছি।’

    এ সময় যুক্তরাষ্ট্র সফরে একটি বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমেরিকায় যখন প্রথমবার যাই, সেখানকার আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে আমার মিটিং হয়েছিল। বলেছিলাম, আমি একটি মনুমেন্ট দেখে এসেছি। সেখানে লেখা আছে— গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল। আমি এমন একটি দেশ থেকে এসেছি, সেদেশটি হচ্ছে গভর্নমেন্ট অব দ্য আর্মি, বাই দ্য আর্মি, ফর দ্য জেনারেল। বলেছিলাম, আমেরিকা গণতন্ত্র চর্চা করে তাদের আটলান্টিকের পাড় পর্যন্ত। এটা যখন পার হয়ে যায়, তখন কি আপনাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞাটা বদলে যায়? কেন আপনারা একটা মিলিটারি ডিকটেটরকে সমর্থন দিচ্ছেন? আমি এই প্রশ্নটি করেছিলাম।’

    বিভিন্ন দেশের বিষয়ে বর্তমানে মার্কিন অবস্থানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকেও আমি বলি, যে দেশটা আমাদের কথায় কথায় গণতন্ত্রের ছবক দেয়। আর আমাদের বিরোধী দল থেকে শুরু করে কিছু কিছু লোক তাদের কথায় খুব নাচন-কোদন করছেন, উঠবস করছেন, উৎফুল্ল হচ্ছেন। হ্যাঁ, তারা যেকোনো দেশের ক্ষমতা ওল্টাতে পারেন, পাল্টাতে পারেন। বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলো তো আরও বেশি কঠিন অবস্থার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। আরব স্প্রিং (আরব বসন্ত), ডেমোক্রেসি সব বলে বলে যেসব ঘটনা ঘটাতে ঘটাতে— এখন নিজেরা নিজেদের মধ্যে একটা প্যাঁচে পড়ে গেছে। যতদিন ইসলামিক কান্ট্রিগুলোর ওপর চলছিল, ততদিন কিছু হয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে এখন সারা বিশ্বই আজকে অর্থনতিক মন্দার কবলে পড়ে গেছে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’

    যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তারা আমাদেরকে এখন গণতন্ত্রের জ্ঞান দিচ্ছে। কথায় কথায় ডেমোক্রেসি আর হিউম্যান রাইটসের কথা বলছে। তাদের দেশের অবস্থাটা কী? কয়েকদিন আগের কথা, আমেরিকার টেনেসিস রাজ্যে তিন জন কংগ্রেসম্যান—এই তিন জনের অপরাধ হচ্ছে, তারা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য আবেদন করেছিল। তারা ডেমোনেস্ট্রেশন দিয়েছিল যে, এভাবে যার তার হাতে অস্ত্র থাকা, আর এভাবে গুলি করে শিশুহত্যা বন্ধ করতে হবে। এটাই ছিল তাদের অপরাধ। আর এই অপরাধে দুই জনকে কংগ্রেস থেকে এক্সপেলড করা হয়। জাস্টিস জন ও জাস্টিস পিয়ারসন। একজন সাদা চামড়া ছিল বলে বেঁচে যান। তাদের অপরাধ হলো— তারা কালো চামড়া। সেই কারণে তাদের সিট আনসিট হয়ে যায়। তো এখানে মানবাধিকার কোথায়? এখানে গণতন্ত্র কোথায়? এটা আমরা প্রশ্ন।’

    শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমেরিকায় প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায়, অস্ত্র নিয়ে স্কুলে ঢুকে যায়। বাচ্চাদের গুলি করে হত্যা করছে। শিক্ষকদের হত্যা করছে। শপিং মলে ঢুকে যাচ্ছে। হত্যা করছে। ক্লবে যাচ্ছে সেখানে হত্যা করছে। এটা প্রতিনিয়ত, প্রতি দিনেরই ব্যাপার। কোনো না কোনো রাজ্যে অনবরত এই ঘটনা ঘটছে।’

    আমেরিকা খুনিদের লালন-পালন করেই রেখে দিচ্ছে
    সরকারপ্রধান বলেন, ‘১৫ আগস্টে যারা হত্যা করেছে, সেই খুনি রাশেদ (রাশেদ চৌধুরী) আমেরিকায় আশ্রয় নিয়ে আছে। সেখানে যতটা প্রেসিডেন্ট এসেছে, সবার কাছে আমি আবেদন করেছি। আইনগতভাবে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়েছি। আমরা ডিপ্লোম্যাসির মাধ্যমে প্রচেষ্টা চালিয়েছি। রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছি যে, এই খুনি সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তাকে আপনারা আশ্রয় দেবেন না। শিশু হত্যাকারী, নারী হত্যাকারী, রাষ্ট্রপতির হত্যাকারী, মন্ত্রীর হত্যাকারী। এটা মানবতা লঙ্ঘনকারী। এদের আপনারা আশ্রয় দিয়েন না। ফেরত দেন। কই তারা তো তাকে ফেরত দিচ্ছে না। খুনিদের লালন-পালন করেই রেখে দিচ্ছে।’

    তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে। এখন দেখা যায়— দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্তদের পক্ষ হয়েই তারা ওকালতি করে যাচ্ছে। আর গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে এখানে এমন একটা সরকার আনতে চাচ্ছে— যার গণতান্ত্রিক কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। অগণতান্ত্রিক ধারা। আর সেই ক্ষেত্রে আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী, বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। সামান্য কিছু পয়সার লোভে এদের তাঁবেদারি করে। পদলেহন করে।’ -অনলাইন ডেস্ক

    মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।

    আরও খবর

    Sponsered content