• Top News

    বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে দায়মুক্তির আইন থাকতে পারে না: মেনন

      প্রতিনিধি ২৯ এপ্রিল ২০২৩ , ৫:৪৯:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ

    শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে নাগরিক সভা করে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ছবি: সংগ্রহীত

    (দিনাজপুর২৪.কম) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ইনডেমনিটি (দায়মুক্তির আইন) থাকতে পারে না উল্লেখ করে সরকারের জোটসঙ্গী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেছেন, অপরাধ করলে বিচার করা যাবে না, এটা কোনো সভ্য সমাজে চলতে পারে না।

    শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক নাগরিক সভায় মেনন এ কথা বলেন। সভায় ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. শামসুল আলম বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ বাতিলসহ ১৩ দফা দাবি পেশ করেন।

    রাশেদ খান মেনন বলেন, এখন বিদ্যুতের উৎপাদন হচ্ছে কিন্তু ব্যবহার করতে পারছি না। বসে থাকলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। ইনডেমনিটি একটি ঘৃণিত শব্দ আমাদের রাজনীতিতে। অথচ ২০২২ সালে এসে আবার (আইনটি) সংশোধিত করে নবায়ন করা হয়েছে। এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে, এলএনজি লবি অনেক ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে। লুণ্ঠনবৃত্তি বিগত সরকারের মতো অব্যাহত। আমাদের সংসদের যে ভূমিকা পালন করার কথা, দুঃখজনক হলেও সত্য সংসদ সঠিকভাবে সে ভূমিকা পালন করতে পারছে না।

    ড. শামসুল আলম বলেন, উইন্ড ম্যাপিং অনুযায়ী বাংলাদেশে বায়ু বিদ্যুতের উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে ৩০ হাজার মেগাওয়াট। ভারতে এখন বায়ু ও সৌর বিদ্যুতের মূল্যহার কমবেশি ৩ রুপি। ভারত তার পরিকল্পনায় বলছে ২০৩০ সাল নাগাদ সৌর বিদ্যুতের মূল্যহার ১.৯ থেকে ২.৬ রুপিতে নেমে আসবে। আর বায়ু বিদ্যুৎ ২.৩ থেকে ২.৬ রুপিতে পাওয়া যাবে। সেখানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ২০২২-২৩ অর্থবছরে সৌর বিদ্যুৎ ৯.৯৯ টাকা আর বায়ু বিদ্যুতের চুক্তি করেছে ১৩.২০ টাকায়। কারিগরি সক্ষমতার উন্নয়ন ও বিনিয়োগ ব্যয়ের ন্যায্যতা নিশ্চিত হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দাম ভারতের মতো হতো।

    তিনি বলেন, বিদ্যুতের কমবেশি ৭ শতাংশ হারে সরবরাহ বৃদ্ধি হলেও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে ১২ শতাংশ। জ্বালানির অভাবে বিদ্যুতের উৎপাদন কম হচ্ছে। এতে ভোক্তারা অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির কবলে পড়ছে। গ্যাস বণ্টনে সরকারি খাত বৈষম্যের শিকার। দেশীয় কোম্পানির কাছ থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কেনা হচ্ছে ১.০৩ টাকায়, আর সমপরিমাণ এলএনজি আমদানিতে ব্যায় করা হচ্ছে ৮৩ টাকা। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে গ্যাসের মজুদ ও উৎপাদন প্রবৃদ্ধি নেই বললেই চলে। অথচ তহবিলের ৬৫ শতাংশ অর্থ অব্যবহৃত রয়ে গেছে।

    সভায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরুল ইমাম বলেন, সম্প্রতি যেসব গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার হয়েছে সবগুলো করেছে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বাপেক্স। সেই প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। ইউএসজিএস তাদের এক সার্ভে রিপোর্টে বলেছে, বাংলাদেশে আরও ৩২ টিসিএফ গ্যাস অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। বর্তমানে বছরে ১ টিসিএফ গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে, সে হিসেবে আরও ৩২ বছরের মজুদ রয়েছে। দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান কার্যক্রম সঠিক গতিতে না হওয়ায় আজকের এই সংকট। অচলাবস্থার কারণেই আজকে চড়াদামে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে।

    অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, জ্বালানি প্রাকৃতিক সম্পদ আর যেহেতু সংবিধান অনুযায়ী প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক জনগণ, সংবিধান বলেছে তিন ধরনের মালিকানা অনুমোদনযোগ্য। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান হতে হবে দেশীয় উদ্যোগ, বিদেশি থাকতে পারে সম্পূরক হিসেবে। সমুদ্রে খনিজ সম্পদ আহরণে জাতীয় স্বার্থকে অক্ষুন্ন রেখে চুক্তি হতে হবে।

    তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে প্রতি বছর বিদ্যুতের ব্যবহার ৭ শতাংশ হারে বেড়েছে, আর উৎপাদন বেড়েছে ১২ শতাংশ হারে। এতে করে অনেক বিদ্যুৎ অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। যার ফলে বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে। সরকার সম্প্রতি বিইআরসির ক্ষমতা খর্ব করেছে। বিইআরসি যখন দাম নির্ধারণ করে সেখানে কিছুটা হলেও স্বচ্ছতা থাকে, জবাবদিহিতা থাকে।

    স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, রাষ্ট্রের আইন বলছে ইআইএ ছাড়া কোনো কিছু করা যাবে না। অথচ প্রতিনিয়ত করে যাওয়া হচ্ছে। আর আমরা শুধু আন্দোলন করেই যাবো! পরিবেশ প্রতিবেশ ধ্বংস করে আপনি ভবিষ্যতে টাকা খেয়ে বাঁচতে পারবেন না।

    সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, কাফকোকে দেশীয় দামে গ্যাস দিতে হতো, আর তার কাছ থেকে সার কিনতে হতো সিঙ্গাপুরের দরে। সরকার বঙ্গবন্ধুর নীতি কথার কথা বলে, কিন্তু কাজ করছে তার নীতির বাইরে। কারণ তারা রাতারাতি ধনী হতে চাচ্ছে। আমরা লুটপাটকে আর বেশি প্রসারিত করেছি। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। আন্দোলন-সংগ্রাম ছাড়া এখান থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই।

    জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আমি জ্বালানির বিষয়টি বেশি বুঝি না, তবে এখানে যে দুর্নীতি চলছে সেটি বুঝতে হলে বোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই। আনেক আমলা নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাজ করছে। এটা খুবই দুঃখজনক।

    সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি নীতিমালা করার জন্য জাইকাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশ্বে আর কোনো দেশ এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে বিদেশিদের দায়িত্ব দিয়েছে বলে নজির নেই। এই তথ্য পাচার হবে না তার গ্যারান্টি কী? বিইআরসিকে বিলুপ্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। বিইআরসির কোনো সীমাবদ্ধ থাকলে সেগুলো দূর করতে হবে। আমরা চাই বিইআরসি জনগণের কথা বলুক।

    সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা পদ্মা সেতু করলাম, অনেক কিছুই করলাম। বিশেষজ্ঞ এনে কেনো গ্যাস তুলতে পারছি না। জ্বালানি মন্ত্রণালয় বহুজাতিক কোম্পানির পিআরও হিসেবে কাজ করে। তাদের আর কোনো ভূমিকা চোখে পড়ে না। এ কথা স্বীকার করে নিচ্ছি, রাজনীতিবীদ হিসেবে আমাদের কণ্ঠস্বর সেভাবে জোরালো করা যায়নি।

    বাসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, আমরা একটি দুষ্টুচক্রে আটকে গেছি। একজন দুর্নীতি করবে আর দাম বাড়বে, আমরা এমন একটি প্রক্রিয়ায় আটকে গেছি। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভারতের চেয়ে এত বেশি কেন? আমরা বেশি দামে উৎপাদন করে ভাব নিতে চাই। কিন্তু সেই ভাবের ভারে জনগণ এখন চিড়ে চ্যাপ্টা। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দায় চাপিয়ে জনগণের কীভাবে পকেট কাটা হচ্ছে বিদ্যুৎ খাত তার জলন্ত উদাহরণ ।

    ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান সভায় সভাপতিত্ব করেন। ক্যাবের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক মিজানুর রহমান রাজুর সঞ্চালনায় সমাপনী বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া। -অনলাইন ডেস্ক

    মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।

    আরও খবর

    Sponsered content