প্রতিনিধি ২৪ মে ২০২৩ , ১:৪৪:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডট কম) নামসর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রতিষ্ঠিত আমদানিকারক দেখিয়ে ৩৫০ কোটি টাকার নন-ফান্ডেড ঋণ অনুমোদন করেছে এবি ব্যাংক। কাগুজে ওই প্রতিষ্ঠানটির নাম ব্র্যান্ডশেয়ার ট্রেডিং লিমিটেড। বিপুল অঙ্কের এ ঋণের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ঋণের বিপরীতে জামানত দিয়েছে তৃতীয় পক্ষ এবং ঋণের বিপরীতে যে সম্পত্তি বন্ধক রাখা হয়েছে, তার মূল্য দেখানো হয়েছে বাজার মূল্যের চেয়েও ১৬ গুণ বেশি।
শুধু তাই নয়, ঋণটির দায় গ্রাহক পরিশোধ না করলে তা এলটিআর ও মেয়াদি ঋণে রূপান্তরের সুযোগও রাখা হয়েছে। তদুপরি ঋণ মঞ্জুরিপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৬ কোটি টাকার পারফরম্যান্স গ্যারান্টি ইস্যু করা হয়েছে। এটি নজিরবিহীন। আর এ কাণ্ডে নাটের গুরু ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানির কর্ণধার আলী হায়দার রতন। এই সেই ব্যক্তি যাকে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে রাত ৮টার পর নগদ ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল এবং সে সময় বিষয়টি সংবাদের খোরাক হয়েছিল।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকের নির্বাহী ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদ এবং আলী হায়দার রতনের পারস্পরিক যোগসাজশে দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে একটি কাগুজে এবং বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৫০ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে। এ ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগী আলী হায়দার রতন। কেননা আলোচ্য ঋণটির আবেদন থেকে শুরু করে সহায়ক জামানত, পার্সোনাল ও করপোরেট গ্যারান্টি প্রদানসহ যাবতীয় কার্যসম্পাদন করেছেন আলী হায়দার রতন নিজেই। এরই মধ্যে ১৬ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা ভোগও করেছেন
তিনি। বিএফআইইউর মতে, বেনামি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণ সুবিধার আওতায় ৩৫০ কোটি টাকা বিতরণ করা হলে তা আদায় করা দুরূহ হবে। তাই ঋণের বাকি অর্থের বিতরণ বন্ধে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট জব্দ করার পাশাপাশি ব্যাংকটির কাছে এ ঋণের বিপরীতে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। এছাড়া বিষয়টির বিশদ তদন্ত সাপেক্ষে কাগুজে প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত মালিক ও সুবিধাভোগী চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরীও মনে করেন, পারস্পরিক যোগসাজশ না থাকলে এ ধরনের ঋণ জালিয়াতি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ঋণ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে অবশ্যই যাচাই করার নিয়ম রয়েছে। আর এখানে তো গ্রাহকের সবকিছু যাচাই করে জেনেশুনে ঋণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ওই গ্রাহকের বিরুদ্ধে আরেকটি ব্যাংক থেকে মধ্যরাতে টাকা উত্তোলনের সুযোগ নেওয়ার ঘটনাও রয়েছে। এটি কি এ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানতেন না? তারপরও কেন এই গ্রাহককে বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলো? প্রশ্ন রাখেন তিনি। এরপর যোগ করেন, এ ধরনের কার্যক্রমে যারা জড়িত, তাদের অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। নয়তো এমন কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি হবে।
প্রসঙ্গত, আলী হায়দার রতনকে ন্যাশনাল ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখা থেকে রাত ৮টার পর নগদ ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। গত ২৮ ডিসেম্বরের চাঞ্চল্যকর এ কা- দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোর সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল। তাই এটি ব্যাংক খাতের কারো অজানা থাকার কথা নয়। এরপরও ওই গ্রাহকেরই বেনামি একটি প্রতিষ্ঠানের নামে তড়িঘড়ি করে ৩৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করেছে এবি ব্যাংক।
এ বিষয়ে এবি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল বলেন, এ ধরনের ঋণে তার কোনো আগ্রহ নেই এবং তিনি দেনও না। ঋণের পুরো বিষয়টি তিনি জানতেন না বলে দাবি করেন। বলেন, সংশ্লিষ্ট শাখার প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ (বোর্ড) থেকে ঋণটি অনুমোদন করা হয়। বিএফআইইউর তদন্তে বিষয়টি সামনে আসার পরই সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে এবং ব্যাংক থেকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যে বোর্ড মিটিংয়ে ঋণটির অনুমোদন হয়, তিনি সেই মিটিংয়ে ছিলেন কিনা? এমন প্রশ্নে তারিক আফজাল বলেন, এমডিরা সব বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিত থাকে এমনটি নয়। তারাও তো অসুস্থ থাকতে পারে কিংবা ছুটিতে থাকতে পারে।
সূত্রগুলো বলছে, আলী হায়দার রতন শুধু এবি ব্যাংক থেকেই নয়, এর আগে আরও ৫টি ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে একই জমি একাধিক ব্যাংকে বন্ধক ও বন্ধকি সম্পত্তির অস্বাভাবিক বেশি মূল্য দেখানোর ঘটনা ঘটেছে। এসব ঋণের মধ্যে এরই মধ্যে ৫২৫ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকে ২০০ কোটি টাকা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে ১৮০ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকে ৭০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকে ৩৫ কোটি টাকা ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ৪০ কোটি টাকার ঋণখেলাপি হয়ে গেছে। বিএফআইইউর কর্মকর্তারা জানান, ওই ৫ ব্যাংকের ঋণের বিষয়ে সংস্থাটির তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা যে একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকেছে, সেটারই আভাস দিচ্ছে এ ধরনের জালিয়াতি। এখানে সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই যোগসাজশ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এ খাতে বড় ধরনের চুরি-জালিয়াতি চলছে। এগুলোর বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ঋণ অনুমোদনের জন্য নতুন প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে প্রতিষ্ঠিত আমদানিকারক বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- আমদানি, রপ্তানি ও সরবরাহকারী হিসেবে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি ও ফার্ম থেকে গত বছরের ৯ জুন ব্র্যান্ডশেয়ার ট্রেডিংয়ের নিবন্ধন নেওয়া হয়। একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। গত বছরের ৭ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির নামে ১০ হাজার টাকা প্রাথমিক জমা দিয়ে এবি ব্যাংকের গুলশান শাখায় একটি চলতি হিসাব (নং-৪০১৯৭৭৮৮২৪০০০) খোলা হয়। হিসাব খোলার প্রায় ২ মাস পর গত ১০ জানুয়ারি ৩৫০ কোটি টাকার কম্পোজিট ঋণ সুবিধা প্রদানে আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে একই তারিখে শাখা ব্যবস্থাপকসহ তিনজন কর্মকর্তা কর্তৃক গ্রাহক প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানায় (মাইডাস সেন্টার, ৭ম ফ্লোর, বাড়ি-০৫, রোড-১৬ (নতুন), ২৭ (পুরাতন), ধানমন্ডি) সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়। এর আগে এবি ব্যাংক বা অন্য কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো ধরনের পণ্য আমদানি করার তথ্য প্রতিষ্ঠানটির না থাকলেও এটি বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য যেমন জ্বালানি ও নির্মাণ সামগ্রী, রাসায়নিক পদার্থ, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী প্রভৃতি প্রচুর পরিমাণে আমদানি করে থাকে মর্মে এবি ব্যাংকের পরিদর্শন দল তাদের সরেজমিনে পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করে। এরপর একদিনের মধ্যেই অর্থাৎ গত ১১ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট শাখা কর্তৃক ঋণ প্রস্তাবটি প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগে (সিআরএমডি) প্রেরণ করা হয়। সিআরএম কর্তৃকও প্রস্তাবিত ঋণে কোনো ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়নি। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকটির ৭৫৫তম বোর্ডসভায় ঋণ প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে ৩৫০ কোটি টাকার নন-ফান্ডেড ঋণ সুবিধা অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে রিভলভিং এলসি সুবিধা ২৫০ কোটি ও ব্যাংক গ্যারান্টি ১০০ কোটি টাকা। এছাড়া এলসি লিমিটের ২৫০ কোটি টাকার মধ্যে ১৫০ কোটি টাকা এলটিআরে এবং ১০০ কোটি টাকা টার্ম ঋণে রূপান্তর করা যাবে মর্মেও ঋণ মঞ্জুরিপত্রে উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ ঋণপত্রের দায় গ্রাহক পরিশোধ না করলে এলটিআর বা টার্ম ঋণে রূপান্তর করারও সুযোগ রাখা হয়েছে।
কাগুজে প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ডশেয়ার ট্রেডিংয়ের মালিক কে?
ব্র্যান্ডশেয়ার ট্রেডিংয়ের ৯০ শতাংশ (১৮,০০০টি) শেয়ারের মালিক প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান। তিনিই জাতীয় পরিচয়পত্রের ভেরিফায়েড কপিতে তার পেশা ‘ছাত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া বাকি ১০ শতাংশ (২০০০টি) শেয়ারের মালিক হিসেবে অপর পরিচালক মো. মামুনুর রশিদের নাম রয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ভেরিফায়েড কপিতে তার পেশা ‘বেসরকারি চাকরিজীবী’। এতে প্রতীয়মান হয়, মোহাম্মদ আতাউর রহমান ও মো. মামুনুর রশিদের নাম ও পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কোম্পানি গঠন এবং আলোচ্য ঋণের আবেদন থেকে শুরু করে যাবতীয় কর্মসম্পাদন আলী হায়দার রতন নিজে করেছেন। তাছাড়া মাইডাস ফাইন্যান্সের যে ঠিকানায় প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধিত সে ঠিকানাও আলী হায়দার রতনের ভাড়া করা জায়গা। অর্থাৎ ব্র্যান্ডশেয়ার ট্রেডিংয়ের অফিস ঠিকানাও ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারের ৮ম তলার ব্র্যান্ডউইন গ্রুপ অব কোম্পানিজের ৪ হাজার বর্গফুটের মধ্যে, মাত্র ৩০০ বর্গফুট নিয়ে। বিএফআইইউ বলছে, ৩৫০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের অবস্থান আরেকটি কোম্পানির অফিসের অভ্যন্তরে ৩০০ বর্গফুটের মধ্যে। এটি সন্দেহজনক। এছাড়া আবেদনপত্রের প্যাডে প্রতিষ্ঠানটির যে ওয়েবসাইট ও ইমেইল অ্যাড্রেস উল্লেখ করা হয়েছে তাও আলী হায়দার রতনের প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ডউইন কোম্পানির মর্মে পরিলক্ষিত হয়েছে। একই ফ্লোরের একটি গ্রুপ অব কোম্পানির অফিস স্পেসের ভিতরে একই ই-মেইল ও ওয়েবসাইট দৃষ্টে প্রতীয়মান হয়, ব্র্যন্ডশেয়ার টেডিং নামীয় প্রতিষ্ঠান মূলত ব্র্যান্ডউইন গ্রুপ অব কোম্পানিজেরই একটি বেনামি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
সহায়ক জামানতের মালিকানা সংক্রান্ত তথ্য
ব্র্যান্ডশেয়ার ট্রেডিংয়ের ৯০ শতাংশ শেয়ারের মালিক এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান হলেও এই ঋণের বিপরীতে তিনি বা অপর পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ কোনো ধরনের সহায়ক জামানত প্রদান করেননি। বরং এই ঋণের সহায়ক জামানত হিসেবে গত ২ মার্চ আলী হায়দার রতন ও স্ত্রীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান টোটাল কেয়ার প্লাটিনাম লিমিটেড এবং আলী হায়দার রতনের মালিকানায় থাকা গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার শৈলাট, গাজীপুর ও বাঁশবাড়ি মৌজায় অবস্থিত ২ হাজার ৪২৯.২৬ শতাংশ জমি তৃতীয় পক্ষীয় বন্ধক প্রদান করা হয়। এমনকি এই ঋণের করপোরেট গ্যারান্টি এবং পার্সোনাল গ্যারান্টিও ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের কাছ থেকে গ্রহণ না করে আলী হায়দার রতন কর্তৃক প্রদান করা হয়েছে।
এক প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ, অন্য প্রতিষ্ঠানে ব্যাংক গ্যারান্টি ইস্যুকরণ :
ব্র্যান্ডশেয়ার ট্রেডিংয়ের মালিকানায় আলী হায়দার রতনের কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও তার ও তার স্ত্রীর মালিকানাধীন কোম্পানি ইনফ্রাটেক কনস্ট্রাকশন কোম্পানির অনুকূলে প্রায় ১৬ কোটি ১৩ লাখ টাকার দুটি পারফরম্যান্স গ্যারান্টি ইস্যু করা হয়েছে। এই ঋণের বন্ধকী সম্পন্ন হওয়ার একদিন আগেই আলী হায়দার রতনের মালিকানাধীন অন্য কোম্পানির অনুকূলে ব্যাংক গ্যারান্টি বা পারফরম্যান্স ইস্যু করার বিষয়টিকে নজিরবিহীন এবং ব্যাংকিং নীতি পরিপন্থি বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে। উপরন্তু, ঋণ মঞ্জুরিপত্রে পারফরম্যান্স গ্যারান্টি ইস্যু করার ক্ষেত্রে ‘অ্যাসাইনমেন্ট অব ওয়ার্ক অর্ডার অ্যাগেইনস্ট পারফরম্যান্স গ্যারান্টি মাস্ট বি এক্সিকিউটেড’ মর্মে উল্লেখ থাকলেও তা লঙ্ঘন করে শাখা কর্তৃক আলী হায়দার রতনের মালিকানাধীন অন্য কোম্পানির অনুকূলে পারফরম্যান্স গ্যারান্টি ইস্যু করা হয়েছে। ঋণমঞ্জুরিপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে অন্য কোম্পানির অনুকূলে পারফরম্যান্স গ্যারান্টি ইস্যু করার ক্ষেত্রে গুলশান শাখা কর্তৃক অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ বা পরিচালনা পর্ষদের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি, যা সন্দেহজনক।
বন্ধকি জমির মূল্য ১৬ গুণ বেশি দেখানো হয়েছে
সার্ভেয়ার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বন্ধকি জমির মূল্য দেখানো হয়েছে ১৭৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। কিন্তু জমিগুলোর দলিল ও আনুষঙ্গিক নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এসব জমি কৃষিচালা, সাইল ও ডোবা শ্রেণিভুক্ত এবং সরকারি মৌজা রেট অনুসারে সর্বসাকুল্যে মূল্য মাত্র ১১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে জমির দাম প্রায় ১৬ গুণ বেশি দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে বিএফআইইউ বলছে, ঋণ গ্রহণের সুবিধার্থে আলী হায়দার রতন কর্তৃক এসব কৃষি জমি ক্রয় করা; সার্ভেয়ার কর্তৃক অতিমূল্যায়ন দেখানো এবং সর্বোপরি অন্যের প্রতিষ্ঠানের নামে গৃহীত ঋণের জন্য ব্যাংকে নিজ স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ও নিজ মালিকানার জমি তৃতীয় পক্ষীয় মর্টগেজ প্রদান করায় প্রতীয়মান হয়, এই ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগী আলী হায়দার রতনই। -নিউজ ডেস্ক