প্রতিনিধি ২৬ মে ২০২৩ , ১১:৩৪:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর২৪.কম) মানিকগঞ্জের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা-যমুনা ও কালীগঙ্গা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের বালু তুলতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালুমহাল ইজারা দেয়া শুরু হয়েছে। এ নিয়ে আতঙ্কে দিন পার করছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। বলছেন, শুষ্ক মৌসুমে নদী থেকে বালু তোলা হলে নদীপাড়ের খেটে খাওয়া দিনমজুর ও কৃষকের ঘরবাড়ি আর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যার ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২১ সালের দুর্যোগসংক্রান্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে গত ছয় বছরে বন্যায় ১ লাখ ১৩ হাজার ১২০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ১৪ হাজার ২৪১ একর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলার ৬০ শতাংশ ফসলি জমির ক্ষয়ক্ষতি হয়, যাতে প্রায় ১ হাজার ২৫ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জয়নগর এলাকার হাজেরা বেগম বলেন, ‘গত বছর নদীতে বালু তোলার কারণে বাড়িঘর ভাঙন শুরু হয়। পরে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে মানববন্ধন করে ডিসিকে (জেলা প্রশাসক) স্মারকলিপি দেই। ডিসি এসে সব দেখে বালু তোলা বন্ধ করে দেন। আমাদের মুখে হাসি ফুটেছিল। কিন্তু আবার বালুমহাল ইজারার কথা শুনে আমরা আতঙ্কে আছি।’
ঘিওর উপজেলার তরা এলাকার শীতানাথ রাজবংশী বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘর-ফসলি জমি ভেঙে যাওয়ার জন্য সরকার ও প্রশাসন দায়ী। কারণ তারা নদী ইজারা না দিলে পাড় ভাঙত না। নদী ইজারা দেয়ায় প্রতিবছরই জমিজমা ভাঙে। আর যারা বালু তোলে, তাদের সঙ্গে আমাদের ঝামেলা হয়। জনগণের ক্ষতি হলেও সরকারের তো লাভ হয়।’
একই এলাকার আতাউল ইসলাম বলেন, ‘নদী ইজারা না দেয়া হলে নদীতে চর ওঠে। আর চরের মানুষ ফসল বুনতে ও গরু-বাছুর পালন করতে পারেন। আমাদের বাড়িঘর-জমিজমা আর ভাঙে না। আসলে নদীপাড়ের মানুষ গরিব ও দুর্বল হওয়ায় আমাদের কথা কেউ শুনে না। তাই আপনার (সাংবাদিক) মাধ্যমে সরকারের কাছে আবেদন করি, আমাদের এলাকার বালুমহাল যেন ইজারা না দেয়া হয়।’
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও বিআইডব্লিউটিএর মাধ্যমে আলোচনা করে নকশা তৈরির পর বালুমহাল ইজারা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। নদীভাঙনের সম্ভাবনা থাকবে না। যদি বালুমহালের কারণে ভাঙন দেখা দেয় অথবা বালু তোলার শর্ত মানা না হয়, তাহলে ইজারা বাদ করে দেয়া হবে।
‘গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কালীগঙ্গা নদী খননের কথা ছিল। এ কারণে বোর্ডের প্রকৌশলীদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই তখন বালুমহাল ইজারা বন্ধ ছিল,’ যোগ করেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ। -নিউজ ডেস্ক