প্রতিনিধি ৯ ডিসেম্বর ২০২১ , ৬:৫৪:১০ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর২৪.কম) সব বাধা অতিক্রম করে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অচলায়তন ভেঙে একবার এগিয়ে যেতে পারলে আর কোন বাধা আসবে না।
বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে বেগম রোকেয়া দিবস-২০২১ ও বেগম রোকেয়া পদক-২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। ওসমানি স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা পদক প্রাপ্তদের হাতে ক্রেস্ট ও মেডেল তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ইসলাম ধর্মে তো মেয়েদের অধিকার দেয়ায়ই আছে। সেখানেই তো সম অধিকারের কথা বলা আছে। কিন্তু তারপরেও তো আমাদের দেশে কিছু বাধা আসে, আসবে। সেই বাধা অতিক্রম করেই এগিয়ে যেতে হবে।’
নারীর অধিকার ও নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় তাঁর সরকারের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রথমবার যখন সরকার গঠন করি নারী শিক্ষা অবৈতনিক করেছি। পাশাপাশি প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৬০ ভাগ নারী শিক্ষক বাধ্যতামূলক করি। এই সিদ্ধান্তের পর অনেক বাবা-মা মেয়েদের বাধা দেয়নি। অন্তত মেয়ে যে একটা চাকরি পাবে সেটা তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে। তাছাড়া কমি্নউটি ক্লিনিকে মেয়েদের কর্মের ব্যবস্থা হয়। সর্বক্ষেত্রে একটা উদ্যোগ নিতে চেষ্টা করেছি।
খেলাধুলায় মেয়েদের তো অংশ গ্রহণই করতে দিত না। যাই হোক দ্বিতীয় বার যখন সরকারে আসলাম, অন্যভাবে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। আমরা প্রাথমিক থেকে স্কুলে স্কুলে প্রতিযোগিতা শুরু করলাম। বঙ্গমাতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফুটবল টিম এবং মাধ্যমিক থেকে উচ্চ পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফুটবল টিম। এভাবে ছোট বেলা থেকে যখন খেলা শুরু করল, এখন আর সেই বাধাটা আসে না। অর্থাৎ অচলায়তন ভেঙে একবার এগিয়ে যেতে পারলে আর কোন বাধা আসবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম রোকেয়া আমাদের আদর্শ। তিনি নারীদের পথ দেখিয়েছেন। তার সময়ে সমাজে নারীদের লেখাপড়া যেন অপরাধ ছিল। সেই অবস্থা থেকে তিনি নারী জাগরণে কাজ করেছেন। এখন মেয়েরা কোন দিক থেকে পিছিয়ে নেই। বরং পুরুষরা যেটা পারে নারীরা তার থেকে আরও ভাল পারে, বেশি পারে; এতে কোন সন্দেহ নেই। সেটাই প্রমাণ হয়েছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী হাস্যরসে বলেন, বেশি বলব না। দেখা যাবে পুরুষরা আবার…আমার ভোট কমে যাবে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ আমাকে তো নির্বাচন করে আসতে হয়। আমাদের সব দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। পুরুষ শাসিত সমাজ বলি কিন্তু মেয়েদের ছাড়া কি পুরুষরা চলতে পারে? পারে না। মায়ের পেটে জন্ম নিতে হবে, বোনের হাত ধরে হাটা শেখে। বড় হয়ে স্ত্রীর ওপর নির্ভশীল হয়ে ওঠে। বৃদ্ধ হয়ে গেলে তো কন্যা সন্তানই বেশি দেখে, সেই যত্ন নেয় বেশি, এটাও তাদের মনে রাখতে হবে।
নারীরা তাদের অধিকার পেলেও এখনও অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবথেকে পিড়াদায়ক মেয়েদের উপর সহিংসতা। যদিও আইন করে দিয়েছি। দর্ষণ বিরোধী আইন করেছি, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন করেছি, পারিবারিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আইন করে দিয়েছি। শুধু আইন করলে হবে না। মানসিকতাটাও বদলাতে হবে। চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন আনতে হবে।
বিশ্বাসটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস। বিশ্বাসটা করতে হবে। নারীরা শুধু ভোগের বস্তু না, নারীরা সহযোদ্ধা, সহযোগী। সহযাত্রায় চলতে হবে। সমান অধিকার দিতে হবে। এটাই হলো বাস্তবতা। সেভাবেই কাজ করতে হবে। সব জায়গায় নারী পুরুষ সমানভাবে কাজ করছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে।-ডেস্ক