• Top News

    বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম শহর, মেয়রের বাড়িতেও হাঁটুপানি

      প্রতিনিধি ৪ আগস্ট ২০২৩ , ৬:৫৯:১১ প্রিন্ট সংস্করণ

    বৃষ্টিতে চসিক মেয়র রেজাউল করিমের বাড়িতেও হাঁটুপানি জমেছে। ছবি: সংগ্রহীত

    (দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে পানির নিচে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম শহরের নিম্নাঞ্চল। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এ জেলায় ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। কখনো থেমে থেমে আবার কখনো টানা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাটের পাশাপাশি নগরীর বাসা-বাড়িতেও ঢুকে পড়েছে পানি। ফলে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরীর বাসিন্দাদের। টানা বৃষ্টিতে এমন দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাননি খোদ নগরপিতা রেজাউল করিমের বাড়িও। তার বাড়িতে এখনো থৈ থৈ করছে হাঁটুপানি।

    এদিকে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সুমন সাহা বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

    সরেজমিনে দেখা যায়, টানা বৃষ্টিতে নগরীর মোহরা, হামিদচর, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, বহদ্দারহাট, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, খাজা রোড, মিয়াখান নগর, প্রবর্তক মোড়, আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, শান্তিবাগ আবাসিক, বাকলিয়া, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, রিয়াজ উদ্দিন বাজারসহ নগরীর নিচু এলাকায় পানি উঠেছে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে মেহেদীবাগ, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, ছোটপুল-বড়পুল, গোসাইলডাঙ্গা ও হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায়।

    এসব এলাকার প্রধান সড়কের কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর, আবার কোথাও প্রায় বুক সমান পানি। ফলে ইঞ্জিনচালিত গাড়ি সেসব সড়ক দিয়ে চলাচল করতে পারছে না। এতে করে কয়েক গুণ বেশি রিকশা ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

    পানির কারণে বাড়িতে আটকা পড়েছেন সিটি মেয়রও। মেয়রের বাড়ি যেখানে অবস্থিত, সেই এলাকাটি বহদ্দারবাড়ি নামেই পরিচিত। শুক্রবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, হাঁটু সমান পানি উঠে গেছে বহদ্দারবাড়ির সড়কে। মেয়রের বাড়ির প্রবেশপথ থেকে সামনে যত দূর সড়কটি এগিয়েছে, পুরোটাই জলাবদ্ধ। সড়ক পেরিয়ে পানি ঢুকে পড়েছে মেয়রের বাড়ির উঠান আর নিচ তলায়। বাড়ির উঠোনে রাখা মেয়রের গাড়ির চাকাও পানির নিচে ডুবে আছে।

    আগে মেয়র বাড়ির নিচ তলার কক্ষে থাকতেন। তবে নিয়মিত পানি ওঠার কারণে এখন তিনি দ্বিতীয় তলায় থাকেন।

    মেয়রের বাড়ির সামনে দিয়ে প্যান্ট উঁচিয়ে ও জুতা হাতে প্রবেশ করছিলেন সাহাব উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের কথা বাদ দিন, মেয়রও পানিবন্দি হয়ে আছেন। কবে যে এ থেকে চট্টগ্রামবাসীর মুক্তি মিলবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।’

    গত বছরের জুনে টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম শহরের অন্যান্য নিম্নাঞ্চলের মতো বেশ কিছুদিন ডুবে ছিল মেয়র মো. রেজাউর করিমের বাড়িও। বাড়ির নিচতলা ও উঠানে হাঁটুপানির কারণে তখন আটকা পড়েছিলেন মেয়র। এরপর শুষ্ক মৌসুমে বাড়ির সামনের সড়কটি আরেক দফা উঁচু করা হয়। আশা করা হয়েছিল, আর পানি ঢুকবে না মেয়রের বাড়িতে। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি। গত জুন মাসে এক পশলা বৃষ্টিতে ডুবেছি মেয়রের বাড়ি। এবার তো ভারী বৃষ্টিতে তিনি আটকাই পড়েছেন।

    পানির স্রোতের কারণে চকবাজার-বহদ্দারহাট সড়কটি দেখে স্রোতস্বিনী নদী ভেবে ভুল হতে পারে যে কারও! সেখানে হাঁটুপানির কারণে রাস্তা দিয়ে হাঁটার অবস্থাও নেই। উন্মুক্ত নালায় পড়ার ভয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটারও জো নেই। পথচারীদের অনেকে তাই গন্তব্যে ফিরছিলেন আইল্যান্ড আর উড়াল সড়কের নিচের খোলা জায়গা ধরে। আবার যেখানে আইল্যান্ড ধরে হাঁটা যাচ্ছে না, সেখানে ভোগান্তির শিকার হতে হয় মানুষজনকে।

    এই সড়কের জঙ্গি শাহ মাজার এলাকার বাসিন্দা সরোয়ার কামাল দৈনিক বাংলাকে বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে ছাদে গিয়ে দিকে পুরো এলাকা ডুবে গেছে।

    অবশ্য সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি কিছুটা কমেছে। কারণ বেশির ভাগ মানুষই বাসায় অবস্থান করছেন। তবে কাজের জন্য যারা বেরিয়েছেন তাদের প্রায় সবাই ভোগান্তিতে পড়েছেন।

    চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) দুটি, পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি ও সিটি করপোরেশন একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে। ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনর্খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক সবচেয়ে বড় ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সিডিএ।

    ২০১৭ সালে অনুমোদিত এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০-এর জুনে শেষ হয়। তবে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এখনো কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হচ্ছে। প্রকল্পের পরও জলাবদ্ধতা না কমায় পরস্পরকে দায়ী করে আসছে সিটি করপোরেশন ও সিডিএ।

    নগরীর বেশ কিছু জায়গায় নালা-খাল জ্যাম হয়ে থাকায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে বলে মনে করেন সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস। তিনি বলেন, মূলত অনেক দিন বৃষ্টি না হওয়ায় খাল-নালাগুলো জ্যাম হয়ে আছে। এখন ভারী বৃষ্টি হওয়ার কারণে পানি আটকে গিয়ে জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে। -নিউজ ডেস্ক

    মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।

    আরও খবর

    Sponsered content