প্রতিনিধি ১৯ আগস্ট ২০২৩ , ২:৫২:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) বাবা মায়ের কাছে সব থেকে বড় অবদান তার সন্তান। তাদের ভালোর জন্য সব কিছু ত্যাগ করতে পারেন বাবা মা। এমনকি নিজেদের জীবন বাজি রেখে সন্তানের আবদারগুলো পূরণ করতে সর্বদা তৎপর হন।
তাদের আশীর্বাদ থাকলে যেকোনো সন্তান তার ভবিষ্যতে অবশ্যই সাফল্য অর্জন করবে, তার প্রমাণ ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে ফেরিওয়ালা মিরাজুল হকের বড় ছেলে জাহাঙ্গীর মোল্লা ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার, ছোট ছেলে আলমগীর মোল্লা বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়।
ছেলেদের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে পড়াশোনার খরচ যোগাতে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে বাসষ্ট্যান্ড সহ বাসের ভিতরে বাদাম, তিলের খাজা সহ বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য খেলনা ও প্রসাধনী বিক্রয় করেন মিরাজুল হক। তাদের মা জুলেখা বেগম অগ্রণী ব্যাংকে কার্যালয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করে। শুধুমাত্র ছেলেদের ভবিষ্যত প্রতিষ্ঠা করতেই এমনই এক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন এই দরিদ্র পিতা ও মাতা । চেয়েছিলেন ছেলেদের যেন কখনো এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন না কাটাতে হয়। যত কষ্ট হোক ফেরি করে সংসার চালানোর জন্য কোনো আফসোস না হয়। আজ তার ছেলেরা সু-প্রতিষ্ঠিত।
দুই ছেলেকে পড়া লেখা শেখানোর শখ ছিল বাবার। দারিদ্রতার কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার মতো খরচ যোগাতে পারতেন না তাদের বাবা। ফেরি করে বেড়াতেন ছেলেদের পড়া লেখার জন্য। বাবার সাথে আইসক্রিম ফ্যাক্টরিতে গিয়েছিল ছেলে। ফ্যাক্টরির মালিক ছেলেকে দেখে ফ্যাক্টরিতে কাজ করার প্রস্তাব দেন, কিন্তু বাবা শুনে বলেছিল আমার ছেলেকে পড়া লেখা শিখে অনেক বড় হবে।বাবার কথা শুনে ফ্যাক্টরির মালিক কর্মচারীদের সামনে হেসে অনেক কথা বলে অপমান করেছিল। বাবার চোখের জল পড়েছিল। সেই দিন কষ্ট পেলেও মনের জেদ নিয়ে বাবার সম্মানকে ফিরিয়ে দিতে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবার চেষ্টা করেছেন। শত বাধা ও দারিদ্রতার মধ্যেও জাহাঙ্গীরের চেষ্টা বিফলে যায়নি।
২০১০ সালে মোবারক আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন জাহাঙ্গীর। ২০১২ সালে সরকারি এম ইউ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৩-১৪ ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল ভর্তি হবার পর পড়ার সময়ই বিয়ে করে দুটি ছেলে মেয়ের বাবা হন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে সমাজকল্যাণ বিষয়ে শেষ করে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন কালীগঞ্জ বড় সিমলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিসিএসের জন্য কঠোর পরিশ্রমের ফল ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন জাহাঙ্গীর মোল্লা।
ছোট ছেলে আলমগীর মোল্লা ফুটবল খেলার পাশাপাশি পড়াশোনা করেছেন। ২০১৪ সালে সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ,২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করেন সরকারি এম ইউ ডিগ্রি কলেজ থেকে। ২০১৭-১৮ সেশনে ঢাবিতে ভর্তি হন বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগে।এর মধ্যে ঢাকায় ২০১৯ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্রের হয়ে খেলেছেন। ২০২২ সালে যোগ দেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে। ২০২৩ সাল থেকে আবাহনী ক্রীড়া চক্রের হয়ে খেলেছেন ও মার্চে জাতীয় দলে তাকে ডাকা হয়।
মিরাজুল হকের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, টিনের ছাপড়া ও চাটাইয়ের বেড়া দিয়ে করা দুই রুমের ঝুপড়ি ঘরেই তাদের বসবাস। প্রতি রুমে ২ টি করে খাট রয়েছে। তার একটি রুমেই থাকতেন দুই ছেলে জাহাঙ্গীর ও আলমগীর। বাবা ফেরিওয়ালা মিরাজুল হক জানান, স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে সহ ৬ সদস্যের সংসার তার। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি হকার পেশায় আছেন। তিনি গাড়িতে বাদাম, ছোলা, তিলের খাজাসহ বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী বিক্রি করেন। তার স্ত্রী অগ্রণী ব্যাংকের একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী। স্বামী- স্ত্রীর সামান্য আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। অভাবের কারণে তার দুই মেয়েকে মাধ্যমিক পেরোনোর আগেই বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তার ইচ্ছা ছিল দুই ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। এজন্য তাদের পড়ালেখার খরচ বহনে বিভিন্ন সময়ে এনজিও থেকেও ঋণ নিয়ে দেনাও হতে হয়েছে। তবে তিনি ফেরিয়াওলা হলে সার্থক বাবা বলে জানান। -অনলাইন ডেস্ক