• কৃষি ও কিষাণ

    আমন আবাদে ব্যয় বাড়াচ্ছে দুশ্চিন্তা

      প্রতিনিধি ৩১ আগস্ট ২০২৩ , ২:০৬:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ

    ছবি-সংগ্রহীত

    (দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) গাইবান্ধার সাত উপজেলায় আমন আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। খানিকটা দেরিতে হলেও জেলার সব উপজেলাতেই আমন ধানের ব্যাপক চাষাবাদ শুরু হয়েছে। কিন্তু চলতি মৌসুমে দরকারি সব উপকরণের দাম বেড়েছে। সার-ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অনাবৃষ্টি। সারা দেশেই বৃষ্টি কম হওয়ায় আমন ধানে সেচ বেশি লাগছে। এতে উৎপাদন খরচ আরও বাড়ছে। ফসল বিক্রি করে খরচ উঠবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। কৃষক যদি ফসলের ন্যায্য দাম না পান, তা হলে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হবে।
    কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রোপা আমন চাষাবাদ অনেকটা বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। জুলাইয়ের শুরু থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত আমন মৌসুম। জমিতে পর্যাপ্ত পানি  থাকলে ১৫ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে রোপা আমন লাগানো শেষ হয়। কিন্তু এবার ভরা বর্ষা মৌসুমেও কাক্সিক্ষত বৃষ্টির দেখা মেলেনি। এবার ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আমন চাষের মৌসুম ধরা হয়েছে। চলতি মৌসুমে গাইবান্ধায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৮ শতাংশ বা ১ লাখ ২৪ হাজার ৯১০ দশমিক ৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। চরাঞ্চলের জমি থেকে বর্ষার পানি নেমে গেলে অবশিষ্ট ২ শতাংশ জমিতেও দেশি জাতের ধান রোপণ করবেন চাষিরা। এতে জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলমের।
    কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার আমন মৌসুমে গাইবান্ধার ৭০ শতাংশ জমিতেই সেচের প্রয়োজনে ডিজেল ব্যবহার হচ্ছে। বাকি ৩০ শতাংশ জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে। গত বছর ডিজেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ৯৪ টাকা। এবার সেটি প্রায় ১১০ টাকা। বিদ্যুতের দাম গত ছয় মাসে বেড়েছে অন্তত চারবার। ফলে সব ধরনের সেচ পাম্পের পানি নিতে এবারও
    কৃষককে বাড়তি খরচ গুনতে হবে। এ ছাড়া কীটনাশক, শ্রমিক ও যানবাহনে পরিবহন খরচ বৃদ্ধিতেও উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে। তারা বলছেন, জমি প্রস্তুত করার সময় টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সার দিতে হয়। চারা রোপণের পর জুলাই ও আগস্ট মাসে ইউরিয়ার ব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশি। গত বছর ইউরিয়ার দাম ছিল প্রতি কেজি ২৪ টাকা। এবার সেটি ২৭ টাকা। কিন্তু ডিলাররা সবসময় নির্ধারিত দামে কৃষকের কাছে সার বিক্রি করেন এমন নয়। অনেক
    কৃষককে বাড়তি মূল্যে সার কিনতে হয়।
    সদর উপজেলার গোবিন্দপুর এলাকার কৃষক রিয়াজউদ্দিন বলেন, আমনের সময় আষাঢ় মাসেই সাধারণত বৃষ্টিপাত হয়। এবার শ্রাবণেও বৃষ্টির দেখা মেলেনি। ফলে অনেকেই ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে জমিতে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করছেন। প্রতি ঘণ্টায় গড়ে দেড় লিটার ডিজেল লাগে। এক বিঘা জমিতে একবার সেচ দিতে গড়ে তিন ঘণ্টা সেচযন্ত্র চালাতে হয়। এতে সাড়ে ৪ লিটার ডিজেল লাগে। প্রতি লিটার ডিজেলের দাম প্রায় ১১০ টাকা। সেই হিসাবে এক বিঘা জমিতে একবার সেচ দিতে খরচ গড়ে ৫০০ টাকা। দেড় মাসে গড়ে তিন দফা সেচ দিতে খরচ প্রতি বিঘায় ১ হাজার ৫০০ টাকা।
    জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, ২০১৯-২০ মৌসুমে আমন উৎপাদনে কৃষকের বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছিল ৮ হাজার ৩১৫ টাকা। ২০২০-২১ মৌসুমে বিঘাপ্রতি ৩৫০ টাকা বেড়ে হয় ৮ হাজার ৬৬৫ টাকা, ২০২১-২২ সালে বিঘাপ্রতি ১ হাজার ২২৫ টাকা ব্যয় বেড়ে খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৮৯০ টাকা, ১ হাজার ৩৪৫ টাকা বেড়ে ২০২২-২৩ মৌসুমে বিঘাপ্রতি ব্যয় হয় ১১ হাজার ২৩৫ টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে বিঘাপ্রতি আমন উৎপাদন ব্যয় গতবারের চেয়ে ১ হাজার ৬১০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৮৪৫ টাকা, যা ২০১৯ সালের চেয়ে ৪ হাজার ৫৩০ টাকা বেশি।

    কৃষক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ বলছেন, বাস্তবে বিঘাপ্রতি আমন উৎপাদন ব্যয় সরকারি হিসেবের চেয়ে আরও অনেক বেশি। আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দুর্বিষহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কৃষিপণ্যের দাম। দাম বাড়ায় শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিমসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্য নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এর প্রভাব পড়বে ধানের উৎপাদন ও দামে।
    গাইবান্ধায় রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা, অর্জন ও ফলনের ওপর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের গত পাঁচ বছরে পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, জেলায় ২০১৯-২০ মৌসুমে ১ লাখ ২৭ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ লাখ ২৮ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। এতে ধান উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিকটন। ২০২০-২১ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার ৯০ হেক্টর, আবাদ হয় ১ লাখ ২৮ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে আর উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫৪৯ মেট্রিকটন ধান। ২০২১-২২ মৌসুমে ১ লাখ ২৯ হাজার ২৭৫ হেক্টরের বিপরীতে আবাদ হয় ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৮০ হেক্টর, এ বছর ফলন হয় হয় ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৬৮৩ মেট্রিকটন। ২০২২-২৩ মৌসুমে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ হেক্টর, আবাদ হয় ১ লাখ ২৯ হাজার ৬৯৯ হেক্টর জমিতে, এ মৌসুমে ধান উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৮০ হাজার ১৮ মেট্রিকটন। চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ২৭ হাজার ৪৬০ হেক্টর এবং সম্ভাব্য উৎপাদন ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৪৫৮ মেট্রিকটন।

    গাইবান্ধার প্রবীণ রাজনীতিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য আমিনুল ইসলাম গোলাপ বলেন, প্রান্তিক চাষিরা ফসল উৎপাদন কর্মকাণ্ডের অন্যতম চালিকাশক্তি। তারা ধার-দেনা করে ফসল ফলান। দেনা পরিশোধ ও অভাব-অনটন মেটাতে তাদের মৌসুমের শুরুতেই ধান বিক্রি করতে হয়। সরকারের ধান সংগ্রহ কর্মসূচির দুর্বলতায় ওই সময় চালকল মালিকরা কম দামে ধান কিনে বিপুল মজুদ গড়ে তোলেন।
    বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব ও বাসদ মার্কসবাদী গাইবান্ধা জেলা আহ্বায়ক আহসানুল হাবীব সাঈদ বলেন, কৃষি ও কৃষক বাঁচাতে সরকার নির্ধারিত মূল্যে হাটে হাটে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কিনতে হবে। সেই সঙ্গে কৃষকদের কম দামে বীজ, সার ও কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণ সরবরাহ করতে হবে। -নিউজ ডেস্ক
    মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।

    আরও খবর

    Sponsered content