প্রতিনিধি ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ২:৩২:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) ভেজা স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার পরিবেশ। খসে পড়েছে ভবনের ইট-সুরকি। পিলারে ফাটল। ছাদের রডে মরিচা। চারপাশে বেড়ে ওঠা বটগাছসহ আগাছার জঙ্গল ভবনটিকে রীতিমতো পরিণত করেছে পেড়োবাড়িতে। সেই ‘পোড়োবাড়ি’কে এক যুগ আগেই এক দফায় রংপুর সিটি করপোরেশন, আরেক দফায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। অথচ ঝুঁকি জেনেও সেখানে এখনো বসবাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
রংপুর সরকারি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বামনডাঙ্গা কালী ধামের জমিদার গুরু প্রসন্ন লাহিড়ী প্রায় ২০০ বছর আগে এক একর জায়গার ৫৪ শতকের মধ্যে একটি জমিদারবাড়ি গড়ে তোলেন। পরবর্তী সময়ে সেখানে নাইট কলেজ চালানো হয়। ১৯৬৩ সালে রংপুর সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠার পর কলেজ ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহার করা হয় ভবনটি। পরে কলেজটি রাধাবল্লব এলাকায় সরিয়ে নেয়ার পর এই ভবনটি ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়।
গত রোববার গিয়ে দেখা যায়, ভবনের সামনে রংপুর সিটি করপোরেশনের বড় একটি সাইনবোর্ড, যেখানে লেখা ‘ভবনটি বসবাসের জন্য নিরাপদ নয়’। জরাজীর্ণ ভবনটিতে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে হচ্ছে কাদামাটি মাড়িয়ে।
ছাত্রাবাসের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা মাইদুল ইসলাম মাজু বলেন, ‘ছাত্রাবাসের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনো বরাদ্দ নেই। ছাত্রদের টাকায় এটি পরিচালিত হয়। গার্ড না থাকায় ফ্যান-লাইট চুরি হয়। বহিরাগতদের ঝামেলা তো আছেই। আমরা দ্রুত ভালো একটি ছাত্রাবাস চাই।’
মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রাফি ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রাবাসের সব সমস্যা আমাদের নিজেদেরই সমাধান করতে হয়। করোনাকালের বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের ঘানি আমাদের টানতে হচ্ছে। প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল, উন্নয়ন ফি, বুয়ার বেতনসহ সব মিলিয়ে ১৮০০ টাকা দিতে হয়। ছাত্রাবাস শুধু নামেই, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে।’
ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক ও ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসক ও কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাসটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু মানবিক কারণে দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের নিচ তলায় টিনশেডে রাখা হয়েছে।’
ঝুঁকিপূর্ণ পরিত্যক্ত ভবনে শিক্ষার্থীদের রাখাটা নিরাপদ হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে কলেজের উপাধ্যক্ষ ফিরোজ কবির দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ হলেও ছেলেরা সেখানে নিজ দায়িত্বে থাকার প্রয়োজন মনে করে।’ শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জায়গাসংকটের কারণে নতুন ছাত্রাবাস করা যাচ্ছে না। আমাদের চেষ্টা আছে ছাত্রাবাসটি মেরামত করার। এ বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা হচ্ছে আমাদের। জেলা প্রশাসন থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলে আমরা মেরামত করব।’ -অনলাইন ডেস্ক