
(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) গ্যাস সংকটে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। উৎপাদন ব্যাহত হয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক শিল্প-কারখানা। এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এলএনজি আমদানি, মজুদ ও বিক্রির সুযোগ দিয়ে নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এখন সরাসরি নিজের প্রয়োজনে কিংবা অন্যের চাহিদা পূরণে এলএনজি আনতে পারবে। নিজস্ব পাইপলাইন অথবা পেট্রোবাংলার লাইন ব্যবহার করে এটি সরবরাহ করা যাবে। আর ক্রেতা ও বিক্রেতা আলোচনা করে এলএনজির দাম নির্ধারণ করতে পারবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা সরাসরি এলএনজি আমদানি করতে পারবেন। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের জোগান দিতে ভূমিকা রাখবে আমদানি করা এলএনজি। তবে অর্থ ও ডলার সংকটে এখনই তেল, কয়লা ও গ্যাস আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। আমদানি যত বাড়বে, ঝুঁকিও তত বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নীতিমালা সংশোধনের ফলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। তাদের প্রয়োজনে এলএনজি আমদানি ও মজুদ করবেন। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও তাদের ইচ্ছেমতো দামে বিক্রি করবেন। যেটা এখন হচ্ছে। এতে জনসাধারণের কোনো লাভ হবে না। তবে সরকারের ওপর থেকে চাপ কিছুটা কমবে এবং জ্বালানি সরবরাহ বাড়বে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) যুক্ত হলে ভালো হবে।
জ্বালানি সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার স্বাক্ষরিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, আমদানিকারক কোম্পানিগুলোকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি বা ভারী শিল্প খাতে প্রকল্প নির্মাণ কিংবা পরিচালনার পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অথবা অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কনসোর্টিয়াম করলে সেই কোম্পানির এলএনজি খাতের প্রকল্প নির্মাণ বা পরিচালনার পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নিজেরা পাইপলাইন, জেটি, স্টোরেজ ট্যাঙ্ক ও এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট স্থাপন করতে পারবে। নির্ধারিত মাশুল দিয়ে পেট্রোবাংলার অব্যবহৃত পাইপলাইনও ব্যবহার করতে পারবে। এ জন্য ন্যাশনাল হাইড্রোগ্রাফিক কমিটি, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বন্দর কর্তৃপক্ষ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদফতর, স্থানীয় প্রশাসন, বিস্ফোরক অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনাপত্তি গ্রহণ করতে হবে। লাগবে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সনদও।এতে আরও বলা হয়, বেসরকারি আমদানিকারককে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ব্যবহারের জন্য প্রতি বছর যে পরিমাণ জ্বালানি প্রয়োজন, তার প্রাক্কলন যৌক্তিকতাসহ সরকারকে জানাতে হবে। অন্যদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে গ্রাহকদের নাম, ঠিকানা ও চাহিদাকৃত জ্বালানির পরিমাণ দিতে হবে। নিজেদের ব্যবহার বা বিক্রির পর গ্যাস উদ্বৃত্ত থাকলে তা চাহিদা অনুসারে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পেট্রোবাংলার কাছে বিক্রি করা যাবে। তবে সেটি অবশ্যই আমদানি এলএনজির ২৫ শতাংশের বেশি হবে না। এদিকে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু হতে যাচ্ছে। দুটি কোম্পানি এ কাজ পাচ্ছে। এর একটি মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড, অন্যটি হলো স্থানীয় সামিট গ্রুপের সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানি লিমিটেড। ২০২৬ সাল থেকে ১৫ বছর এলএনজি সরবরাহ করবে তারা।
দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি আমদানির জন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আমিন উল আহসান গণমাধ্যমকে বলেছেন, বছরে এক থেকে দেড় মিলিয়ন (১০-১৫ লাখ টন) এলএনজি সরবরাহ করবে এক্সিলারেট এনার্জি। একইভাবে বছরে দেড় মিলিয়ন (১৫ লাখ) টন এলএনজি সরবরাহ করবে সামিট। কোম্পানি দুটির সঙ্গে ২০২৬ সাল থেকে ১৫ বছরের জন্য এ চুক্তি করা হচ্ছে। এলএনজি আমদানি-সংক্রান্ত চুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করবে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, শিল্প উদ্যোক্তারা সারাক্ষণ গ্যাসের জন্য সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। এখন এ নীতিমালার ফলে সরকারের ঘাড়ের ওপর থেকে চাপ কমবে। তিনি বলেন, এটা মূলত শিল্প-কারখানা ব্যবসায়ীদের জন্য, জনগণের তেমন একটা লাভ হবে না। ব্যবসায়ীরা এলএনজি আমদানি করে যে পরিমাণ সরকারের কাছে বিক্রি করবে তার পুরো টাকাটা তারা নিয়ে যাবে। কিন্তু সেগুলোর যে সিস্টেম লস হবে, সেটা কে বহন করবে? এটা চালু করা যাবে কি না সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বিইআরসির সাবেক সদস্য মকবুল-ই-এলাহী চৌধুরী বলেন, প্রাইভেট সেক্টর তো এলএনজি আমদানি করছিলই। এটা ওপেন হওয়ায় ভালো হয়েছে। এ মুহূর্তে যে অবস্থা, কোনো নতুন কূপ এক্সপ্লোরেশন করা হচ্ছে না। সেই হিসেবে ঠিক আছে। তবে বঙ্গবন্ধুর নীতি এটা ছিল না। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ বর্তমানে ৭০-৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছে আমদানিকৃত এলএনজি থেকে। বঙ্গোপসাগরে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালে (যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি ও সামিট গ্রুপের একটি) সরকারিভাবে কাতার ও ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আসছে। এ ছাড়া ২১টি কোম্পানির মাধ্যমে প্রয়োজন অনুসারে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজির কার্গো কেনে পেট্রোবাংলা। -নিউজ ডেস্ক