• Top News

    বাংলাদেশে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোকে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

      প্রতিনিধি ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৪:৩২:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেষ্টমেন্ট ফোরাম-২০২৩’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। ছবি: ফোকাস বাংলা

    (দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে অন্যান্য দেশের সঙ্গে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের এই অঞ্চলের ৩ বিলিয়ন মানুষের বাজার পেতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) দু’দিনব্যাপী কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেষ্টমেন্ট ফোরাম-২০২৩’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানান। খবর বাসসের।

    তিনি বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের বাজারের কেন্দ্রস্থলে। এ ছাড়া আমাদের রয়েছে ১৭ কোটি মানুষ। যার বৃহৎ অংশ যুবসমাজ।’

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের স্বচ্ছল জনগোষ্ঠির সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে তিন কোটি। ফলে জার্মানি ও যুক্তরাজ্যকে পেছনে ফেলে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বাজারে পরিণত হবে বাংলাদেশ।’

    সরকারপ্রধান বলেন, ‘এই আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ অন্যান্য কমনওয়েলথভুক্ত দেশের উন্নয়ন যাত্রায় অংশ নিতে আগ্রহী দেশ, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আমরা দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন।’

    শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রায় ৭০ শতাংশই আসে পুনঃবিনিয়োগ থেকে। এ থেকে প্রমাণ হয়, বাংলাদেশে বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ বিদ্যমান।’

    প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করার চেষ্টা করছি, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে নতুন বিনিয়োগ করার পরিবেশকে আরও সহজ করে তুলবে।’

    ‘অন্তর্ভূক্তিমূলক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের ওপর তিনি সর্বদা গুরুত্বারোপ করে থাকেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ কমনওয়েলথের বিজনেস-টু-বিজনেস (বিটুবি) কানেকটিভিটি ক্লাস্টার এর লিড কান্ট্রি হিসেবে নেতৃত্ব প্রদান করছে এবং আন্তঃকমনওয়েলথ বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রা ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জনে কমনওয়েলথ ও সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে।’

    তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য প্রায় সকল খাতই উন্মুক্ত। তবে এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুত, চিকিৎসা উপকরণ, গাড়ি ও জাহাজ নির্মাণ, তথ্য প্রযুক্তিসহ অনেক খাতে অধিক বিনিয়োগ করা যেতে পারে।’

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের কাছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বিডা অনলাইনভিত্তিক ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছে। এর মাধ্যমে ২৬টি সংস্থার ৭৮টি সেবা একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে দেয়া হচ্ছে।’

    ‘বিনিয়োগের পূর্ব শর্ত হচ্ছে অবকাঠামো উন্নয়ন’, উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এ জন্য আমরা সমগ্র দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ১০৯টি হাইটেক পার্ক এবং সফটওয়ার প্রযুক্তি পার্ক এবং আইটি প্রশিক্ষণ এবং ইনকিউবিউশন সেন্টার স্থাপন করছি। যেখানে বৈদেশিক বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে।’

    তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সড়ক, রেল এবং আকাশপথে যোগাযোগ উন্নত হচ্ছে। দেশের প্রায় সকল মহাসড়ক চার বা তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে বা হচ্ছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা সরাসরি রাজধানী ঢাকা এবং দেশের অন্য অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে শিগগিরই ঢাকার সঙ্গে খুলনার রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে, যা মোংলা বন্দর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। পাশাপাশি চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে শুধু বাংলাদেশেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল চালু হবে শিগরিরই।’ চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন শহর কক্সবাজারে রেললাইন নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে বলেও জানান তিনি।

    অনুষ্ঠানে, টেকসই, পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ প্রচারের লক্ষ্যে ২০২২ সালে প্রবর্তিত দ্বিতীয় ‘কমনওয়েলথ-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়।

    উগান্ডার ‘ইকো ব্রিকস’ এই পুরস্কারটি জিতে নেয়। ইকো ব্রিকসের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।

    শুরুতেই বাংলাদেশে কমনওয়েলথ ব্যবসা এবং সুযোগ নিয়ে একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা ১২টিরও বেশি সেশনে অংশ নিচ্ছেন।

    শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকায় গত বছর মেট্রোরেলের একাংশ এবং কয়েকদিন আগে দেশের প্রথম এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ উদ্বোধন করা হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এসব অবকাঠামোর পুরো অংশ চালু হলে ঢাকায় গণপরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। ট্রাফিক জ্যামে আর কাউকে বসে থাকতে হবে না।’

    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সে লক্ষ্য অর্জনের পর আমরা কাজ করছি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের। স্মার্ট সরকার, স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ গড়ে তোলার মাধ্যমে এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা হবে।’

    উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিডব্লিউইআইসি চেয়ারম্যান লর্ড মারল্যান্ড। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া এবং স্ট্র্যাটেজিক এডভাইজার অব কমনওয়েলথ কান্ট্রিস অ্যান্ড বিয়ন্ড জিল্লুর হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

    কমনওয়েলথ হল ৫৬টি দেশের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, যা সাধারণ মূল্যবোধ দ্বারা একত্রিত এবং বিশ্বের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের আবাসস্থল। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে কমনওয়েলথের ৩৪তম সদস্য হিসেবে যোগদান করে। -ডেস্ক রিপোর্ট

    মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।

    আরও খবর

    Sponsered content