• শিক্ষাঙ্গন

    ৪ মাস ক্লাস করে তিন বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলে রেকর্ড

      প্রতিনিধি ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ , ৪:০০:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

    (দিনাজপুর২৪.কম) করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দশম শ্রেণিতে মাত্র চার মাস সরাসরি ক্লাস করার সুযোগ পেয়েছিল এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীরা। এই পরিস্থিতিতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে মাত্র তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। আর ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’ এর মাধ্যমে দেওয়া হয় জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার ভিত্তিতে অন্য বিষয়গুলোর নম্বর। এতে আগের যেকোনো বছরের তুলনায় এবারের ফলাফলে ভালো করেছে পরীক্ষার্থীরা।

    এ বছর পাস করেছে ৯৩.৫৮ শতাংশ পরীক্ষার্থী। জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন। গত বছর পাসের হার ছিল ৮২.৮৭ শতাংশ আর জিপিএ ৫ পেয়েছিল এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন।

    সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কঠিন বিষয় হিসেবে মাধ্যমিকে ইংরেজি ও গণিতকে ধরা হয়। এই দুই বিষয়ে ভালো করলে ফল ভালো হয়, আর খারাপ করলে ফলও খারাপ হয়। এ বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেওয়া হয় তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের পরীক্ষা। যেহেতু ইংরেজি ও গণিত পরীক্ষা নেওয়া হয়নি, ফলে পরীক্ষার্থীরা পাসের হারে অনেক এগিয়ে গেছে।

    এ ছাড়া আবশ্যিক বিষয় বাংলা, আইসিটি ও ধর্ম এবং চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হয়নি এবার। এসব বিষয়ে এসএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি, দাখিলের ক্ষেত্রে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেডিসি) এবং এসএসসি (ভোকেশনাল)-এ জেএসসি ও নবম শ্রেণির ফল মূল্যায়ন করা হয়। যদি জেএসসিতে একই বিষয় না থাকে তাহলে সমগোত্রীয় বিষয়ের নম্বর এসএসসিতে দেওয়া হয়েছে। যেমন—এসএসসিতে যাদের উচ্চতর গণিত ছিল তাদের জেএসসির গণিত বিষয়ের নম্বর উচ্চতর গণিতে দেওয়া হয়েছে।

    এই বছর প্রতিটি বিষয়ে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয়। রচনামূলক অংশে ৩৫ এবং এমসিকিউতে (মাল্টিপল চয়েজ কোয়েশ্চেন) ছিল ১৫ নম্বর। তবে তিন ঘণ্টা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যেভাবে হয় এবারও সেভাবে হয়েছে। সেখান থেকে পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন বাছাই করার সুযোগ ছিল বেশি। অর্থাৎ আগে যেখানে ১১টি প্রশ্নের মধ্য থেকে আটটির উত্তর দিতে হতো, এবার দিতে হয়েছে দুই বা তিনটি প্রশ্নের উত্তর। আবার প্রতি বিষয়ে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হলেও সেটি ১০০ নম্বর ধরে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে।

    ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের পক্ষে যতটা সম্ভব অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেছি। যেহেতু কভিডের কারণে পড়ালেখা ঠিকভাবে হয়নি, তাই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আর শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল বেশি। ফলে সবার প্রশ্ন কমন পড়েছে। কারো কারো ইংরেজিভীতি থাকে, এবার সেটাও ছিল না। সব মিলিয়ে ভালো ফল হয়েছে বলা যায়।’

    বিষয়ভিত্তিক ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯ সালে ঢাকা বোর্ডে ইংরেজিতে পাসের হার ছিল ৯০.৭৯ শতাংশ, গণিতে পাসের হার ছিল ৮৩.৪৭ শতাংশ। ওই বছর গণিতের ফল কিছুটা খারাপ হওয়ায় ঢাকা বোর্ডের পাসের হার ছিল ৭৯.৬২ শতাংশ। গত বছর একই বোর্ডে ইংরেজিতে পাসের হার ছিল ৯৪.০৫ শতাংশ এবং গণিতে পাসের হার ছিল ৮৫.৯৭ শতাংশ। ইংরেজি ও গণিতে পাসের হার কিছুটা বাড়ায় গত বছর বোর্ডে পাসের হার বেড়ে দাঁড়ায় ৮২.৩৪ শতাংশ। আর এ বছর ইংরেজি ও গণিতের পরীক্ষা না হওয়ায় পাসের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩.১৫ শতাংশ।

    এ বছর সর্বোচ্চ পাসের হার ময়মনসিংহ বোর্ডে ৯৭.৫২ শতাংশ। গত বছর এই বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮০.১৩ শতাংশ। এর অন্যতম কারণ গত বছর এই বোর্ডে গণিতে পাসের হার ছিল ৮৪.৮৩ শতাংশ। এবার গণিত পরীক্ষা না হওয়ায় পাসের হার বেড়ে গেছে। অন্যান্য বোর্ডের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।

    বিভাগভিত্তিক ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আগের মতোই এ বছর বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীরা ভালো করেছে। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯৬.০৩ শতাংশ, মানবিকে ৯৩.২৪ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৯৩.৫১ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ৪৭ হাজার ৬৯৭ জন, যা ওই বিভাগের মোট পরীক্ষার্থীর ২৯.২৩ শতাংশ। মানবিকে জিপিএ ৫ পেয়েছে ছয় হাজার ৬১৪ জন, যা ওই বিভাগের পরীক্ষার্থীর ০.৭২ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে আট হাজার ৩১৪ জন, যা ওই বিভাগের মোট পরীক্ষার্থীর ২.২৭ শতাংশ।

    এ বছর ভালো ফলাফলের কারণ জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে। ফলে পরীক্ষার্থীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পেরেছে। এ ছাড়া প্রশ্ন বেছে নেওয়ার সুযোগও এবার বেশি ছিল। ভালো হয়েছে বলে আমরা খুব খুশি। কিন্তু এই ভালো করা মানেই আমাদের এ বছর শিক্ষার মান অনেক ভালো হয়ে গেছে—এমন সরলীকরণ করাটা বোধ হয় ঠিক হবে না। আমাদের শিক্ষার মান নিশ্চয়ই অব্যাহতভাবে বাড়ছে, তবে এটা আমাদের আরো বাড়াতে হবে।’ সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়ার পরও ৬ শতাংশের মতো পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কেউ পরীক্ষার সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে, ভয় পায়।-অনলাইন ডেস্ক

    মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।

    আরও খবর

    Sponsered content