প্রতিনিধি ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ , ১১:৪৫:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর২৪.কম) ৭১’ পর স্বামীকে হারান জহিরন। সঙ্গে নদী ভাঙ্গনে হারান ভিটামাটি। ২ ছেলে-মেয়কে নিয়ে ভিটামাটি ও স্বামী হারা এই বৃদ্ধা উপজেলার জোড়গাছ বাঁধে প্রায় ৫০ বছর আগে বসত গড়েন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্ছেদ অভিযানে থাকার ঘরটিও হারাতে হয় তাকে। কোন উপায় না থাকায় আবারো বাঁধের নিচেই ঝুপড়ি তুলে শুরু করেন বসবাস।
বয়সের ভারে নুড়ে পড়া গৃহ ও ভূমিহীন এই বৃদ্ধা কষ্টে দিনপাত করলেও নজর পড়েনি জনপ্রতিনিধি ও কোন কর্তার। একটি ঘরের জন্য দারেদারে ঘুরলেও মেলেনি তার ভাগ্যে একটি থাকার স্থান। জমিসহ ঘর চান জহিরন, মৃত্যুর আগে একটু আশ্রয় একটু শান্তি চান তিনি।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা একটি ভাঙ্গন কবলিত এলাকা। প্রতি বছর শত শত পরিবার নিঃস্ব হয় নদী ভাঙ্গনে।
আবারো তারা স্বপ্ন দেখে নতুন করে বাঁচতে। এরকম একজন জহিরন বেওয়া। এক সময় সবই ছিল তার। কিন্তু নদী ভাঙ্গনে নিঃস্ব হয় তিনি। ৭১’ মুক্তিযুদ্ধে শেষ আশ্রয় স্থল হারায় সঙ্গে হারান স্বামীকেও। নিঃস্ব এই জহিরন ছেলে মেয়েকে নিয়ে বসত গড়েন উপজেলার রমনা জোড়গাছ বাঁধে। ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে পাড়ি জমান কাজের উদ্দেশ্যে। মেয়েকেও বিয়ে দিলেও কিছুদিন সংসার করে অন্যত্র বিয়ে করেন মেয়ে জামাই। অসহায় এই জহিরন মেয়ে ও নাতীকে নিয়ে পড়েন বিপাকে। এরই মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্ছেদ অভিযানে থাকার ঘরটিও হারাতে হয় তাকে।
নেই থাকার স্থান ছিলনা যাওয়ারও কোন স্থান অবশেষে উক্ত স্থানে বাঁধের নিচে ঝুড়পি তুলে করছেন বসবাস। আগে নিজেই অন্যের বাড়িতে কাজ করে দিন পার করলেও এখন বয়সের ভাড়ে ঠিক মতো চলতে না পারায় মেয়েই একমাত্র সম্বল। কখনো অন্যের বাড়িতে কখনো মাঠে আবার কখনো বিভিন্ন স্থানে কাজ করেই কষ্টে সংসার চালাচ্ছেন জহিরনের মেয়ে ছকিনা।
কথা হতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বৃদ্ধা জহিরন, তিনি বলেন বাপুরে নদীতে সব হারিয়ে হুজুকের (৭১’ মুক্তিযুদ্ধের) পর এই বানত (বাঁধে) ঘর তুলি তখন থাকি কষ্টে আছি। নেই থাকার নিজের একনা জায়গা, নাই একনা ঘর। বারবার মানুষ আইসে আর কয় ঘর ভাঙ্গি নেও এডেই (এখানে) থাকা যাবার নয়।
তিনি আরো বলেন, হামার এডেই (এখানে) সরকারী ঘর হইলো তবুও হামরা পাইলোম না, আর কত কষ্ট ভুগমো। সরকার তো সবার তাহলে কি হামরা কিছু পাবার নই।
এসময় অসহায় এই বৃদ্ধা থাকার স্থানসহ একটি ঘর দাবি করেন সরকারের কাছে, আর বলেন শেখের বেটি শেখ হাসিনা তো সবাইকে ঘর করি দিবের নাগছে, হামাক একনা দিবের কনরে বাবা।-অনলাইন ডেস্ক