প্রতিনিধি ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ , ১১:৫৫:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর২৪.কম) মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ। পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে রোহিঙ্গারা দেশে ফিরবে- এমনটাই শুরু থেকে বলা হচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমারের সদিচ্ছার অভাব ও পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে নানা শর্ত বেঁধে দেওয়ায় প্রত্যাবাসন চেষ্টা একাধিকবার ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া মহামারীর অজুহাত ও মিয়ানমারে জান্তা সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ২ বছর দেশটির সঙ্গে ঢাকা কোনো যোগাযোগ করতে পারেনি। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের পররাষ্ট্র সচিবদের অংশগ্রহণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সর্বশেষ ত্রিপক্ষীয় বৈঠকটি হয় গত বছরের ১৯ জানুয়ারি। দেড় ঘণ্টার ওই ভার্চুয়াল বৈঠকে কবে প্রত্যাবাসন শুরু হবে, সে বিষয়ে সমাধান আসেনি। উল্টো ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব আসে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে। দেশটি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ভেঙেছে বারবার। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নানামুখী সংকট। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালে মিয়ানমার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশটির সেনাবাহিনীর শুরু করা গণহত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতন থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এ ছাড়া গত তিন দশক ধরে মিয়ানমার সরকারের নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে আরও প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। সেই থেকে তারা এ দেশেই বাস করছে। বর্তমানে কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলোতে সব মিলিয়ে অন্তত সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে। বছরের পর বছর ধরে দেশের ওপর চেপে বসে আছে এই সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যেভাবেই হোক, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন শুরু করতে হবে। এ জন্য কূটনীতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে ব্যাপকভাবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবেশীসহ পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশগুলোর সহযোগিতা নিতে হবে। নইলে বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে মানবিক আশ্রয় দিয়ে মারাত্মক বিপর্যয়ে পড়তে হতে পারে বাংলাদেশকে।
অন্যদিকে প্রত্যাবাসনের ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ও জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ক্যাম্পগুলোকে জীবনমান ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, কারিগরি প্রশিক্ষণ, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নানাবিধ বহুবার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে বেশি তৎপর হয়ে উঠছে। এটিও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের জন্য। শরণার্থীদের আশ্রয়দাতা দেশে অন্তর্ভুক্ত করাসহ একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে যে ‘পলিসি রিফর্ম ফ্রেমওয়ার্ক’ প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিশ্বব্যাংক, তা প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ। কারণ বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন স্পষ্ট করে বলেছেন, নির্যাতিত ও বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে এবং স্বদেশে তাদের প্রত্যাবাসন হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র অগ্রাধিকার।
এদিকে রোহিঙ্গারা যাতে স্থায়ীভাবে বসবাসে আগ্রহী না হয়ে ওঠে, সে জন্য ক্যাম্পের জীবনমান ও সুযোগ-সুবিধা যৌক্তিক পর্যায়ে সীমিত করার সুপারিশ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবনমানের ক্রমাগত উন্নয়ন হলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরতরা স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে বসবাসে উৎসাহী হয়ে উঠতে পারে। এতে বলা হয়, স্থায়ীভাবে বসবাসে আগ্রহের ফলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। এ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কথা বললেও গেল ৫ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। এমনকি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা গণহত্যা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াচ্ছে। একে দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে হবে। কাজ না থাকায় রোহিঙ্গারা মাদক বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, যা উদ্বেগজনক। বিনিয়োগের স্থিতিশীল পরিবেশের জন্যও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন জরুরি।-অনলাইন ডেস্ক