প্রতিনিধি ৩ জানুয়ারি ২০২২ , ১১:১৭:০২ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর২৪.কম) পশ্চিমবঙ্গে কভিডের তৃতীয় ঢেউ মাথাচাড়া দিতেই গতকাল রবিবার বেশ কিছু বিধি-নিষেধ জারি করেছে নবান্ন। তাতে যেমন স্কুল-কলেজ পুরো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তেমনি বেশ কিছু ক্ষেত্রে রয়েছে ছাড়। যেমন ৫০ শতাংশ গ্রাহক নিয়ে পানশালা বা মদের দোকান চালানোর অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। আর এতেই প্রশ্ন উঠছে, এ কেমন বিধি? পাঠশালা বন্ধ থাকবে আর পানশালা খোলা?
শিক্ষামহলের অনেকেই এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে টিপ্পনীসূচক মিমও। এদিন সরকারের এ সিদ্ধান্তকে হাস্যকর বলে কটাক্ষ করেছেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার। তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত হাস্যকর সিদ্ধান্ত। পাঠশালা বন্ধ রেখে পানশালা খোলা রাখা- সরকারের চক্ষুলজ্জা বলে কিছু নেই। তিনি এ-ও বলেন, গতকাল রাজ্য সরকার যে নির্দেশিকা জারি করেছে তা স্ববিরোধিতায় ভরা। এতে উদ্দেশ্য সফল হবে না। সংক্রমণ রোখার জন্য বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। সেটাই নেই সরকারের।
শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার বলেন, পশ্চিমবঙ্গ একটা নির্দিষ্ট ফর্মুলায় চলছে। দল, ছল আর বল। একটা দল নির্দিষ্ট ছলে রাজ্য চালাচ্ছে যাতে তাদের বল বাড়ে। ফলে এখানে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই স্বাভাবিক। জানি না এর শেষ কোথায়।
নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত বিদ্রুপের সঙ্গে বলেন, এটা একদিক থেকে খুব ভালো সিদ্ধান্ত। কারণ পানশালায় যাঁরা যান তাঁরা সেয়ানা। সব জানেন। আর স্কুল-কলেজে লোকে তো শিখতে যাবে। তাই যারা শিখতে যাবে তাদের দরজা বন্ধ করে দিয়ে পানশালার দরজা খুলে রাখা হয়েছে। খুবই বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত।
রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, সিনেমা হল, থিয়েটার, শপিং মল, বিয়েবাড়ি, যাবতীয় সামাজিক অনুষ্ঠান, গণপরিবহন, পানশালা, রেস্তোরাঁ ৫০ শতাংশ মানুষ নিয়ে চলতে পারে। আর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। গত দুই বছর প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। সব কিছু স্বাভাবিক হলেও ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা থেকে দূরে রেখে শিক্ষার অন্তর্জলী যাত্রাকে নিশ্চিত করা হচ্ছে। সাধারণের শিক্ষার দরজা বন্ধ থাকছেই। কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর এভাবে চলতে পারে না।
অনেকের মতে, পানশালা খোলা রাখার পেছনে অন্য কারণও রয়েছে। তা হলো, সরকারের আর্থিক অবস্থা। সমালোচকদের কেউ কেউ বলছেন, রাজ্য সরকার এখন আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে মদ বিক্রিকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। যে কারণে সম্প্রতি বিদেশি মদের দাম কমানো থেকে দেশি মদের ব্র্যান্ডিং- একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। তা ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজ্যের আবগারি দপ্তরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার কোটি টাকা আয় করা। ডিসেম্বরের মধ্যেই তা হয়ে গেছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকারের যে আর্থিক অবস্থা ভালো নয় তা নিজে মুখেই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জেলায় জেলায় প্রশাসনিক সভায় গিয়ে বলছেন, এখন নতুন কিছু করা যাবে না। টাকা আসবে কোথা থেকে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার করতে কত টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। অনেকের বক্তব্য, পাঠশালা বন্ধ রেখে পানশালা খোলা রাখার সিদ্ধান্তে তারই প্রতিফলন ধরা পড়েছে।-অনলাইন ডেস্ক