প্রতিপক্ষ নয়, ৩৬ বছরের বিরোধ ‘জিততে’ মাকে খুন করে ছেলে!

(দিনাজপুর২৪.কম) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকার শান্তিনগরের বাসিন্দা জোহারা খাতুনকে (৭৮) কুপিয়ে খুন করে তাঁরই ছোট ছেলে জামির খাঁ । জমি নিয়ে ৩৬ বছর ধরে চলা বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়ে নিজেরা সুবিধা নিতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। পুলিশের হাতে আটকের পর জামির হত্যার কথা স্বীকার করেছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা জামিরের ঘর থেকে উদ্ধারের পর সন্দেহ হলে পুলিশ তাকে আটক করে। পরিবারের লোকজনদের সামনে মুখোমুখি করার পর জামির হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত জানায়। বিরোধে অতিষ্ঠ হয়ে রাগের মাথায় সে এ কাণ্ড ঘটিয়েছ বলে জানায়।

গতকাল রবিবার দুপুরে বৃদ্ধা জোহরা খাতুনকে নিজ বাড়িতে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি শান্তিনগর এলাকার প্রয়াত রশিদ খাঁর স্ত্রী। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনার জামিরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।

তখন পরিবারের লোকজন অভিযোগ করে, জমি নিয়ে বিরোধে প্রতিবেশি আত্মীয়রা এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিপক্ষের তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে রাতে পুলিশ জামিরকে আটক করে।

স্থানীয় লোকজন জানান, রশিদ খাঁর সঙ্গে প্রতিবেশি আত্মীয় বজলু খাঁর পরিবারের জায়গা নিয়ে বিরোধ ছিল। আদালতের রায়ে রশিদ খাঁর পক্ষ জায়গাটি দখলে নেয়। গতকাল রবিবার দুপুরে ওই জায়গার সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে দেওয়ায় রশিদ খাঁ পরিবারের উপর হামলা চালানো হয়।

বৃদ্ধার ছেলে জাহাঙ্গীর খাঁ তাৎক্ষণিকভাবে জানান, জায়য়গা নিয়ে বিরোধে ফজল খা, ইয়াছিন খাঁসহ আরো কয়েকজন হামলা চালায়। বাড়িতে ঢুকে তারা এ হত্যাকাণ্ড চালায়।

শান্তিনগরের বাসিন্দা মো. মোসলেম উদ্দিন জানান, পারিবারিক বিরোধে মারামারির খবর পেয়ে সেখানে তিনি ছুটে যান। হামলায় এক বৃদ্ধা মারা গেছেন বলে জানতে পেরেছেন।

ঘটনাস্থলে থাকা ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শিপন হায়দার জানান, জমি নিয়ে বিরোধে চাচাতো নাতিসহ অন্যরা এ হামলা চালায় বলে পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেছেন। পুলিশ তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে রাতে আরেক পক্ষের দু’জনকে আটক করে নিয়ে যায় বলে জানতে পেরেছি।

এদিকে বিশ্বস্থ একটি সূত্র জানায়, বিভিন্নভাবে তদন্ত করে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে মাঠে নামে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা নিহতের বাড়িতে পাওয়া গেলে সন্দেহ পাকাপোক্ত হয় পুলিশের। জামিরকে আটকের পরই ঘটনার মোড় ভিন্ন দিকে ঘুরে যায়। এক পর্যায়ে পুলিশ কখনো কঠোর হয়ে কখনো কৌশলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। তাকে পরিবারের লোকজনের সামনে এনে বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইলে এক পর্যায়ে সে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে।

জামির পুলিশকে জানায়, জায়গা নিয়ে বিরোধে তারা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে উঠে। আদালতের রায় পেলেও তারা ভোগদখল করতে পারছিলেন না। রবিবার প্রতিপক্ষ বাড়ির দেয়াল ভাঙ্গলে তাদেরকে ফাঁসানোর জন্য হুট করে রাগের মাথায় মাকে হত্যা করেন।

আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মিজানুর রহমান সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে জানান, সন্দেহ হলে জামিরকে থানায় আনা হয়। পরবর্তীতে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির জন্য জামিরকে সোমবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো জানান, আটক প্রতিপক্ষের তিনজনের বিরুদ্ধে দলবদ্ধ হয়ে বেআইনী আক্রমনের অভিযোগে মামলা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জহিরুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে ঘাতক জামির। আখাউড়া থানার ওসি বেলা পাঁচটার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।-অনলাইন ডেস্ক