প্রতিনিধি ১১ জানুয়ারি ২০২২ , ১২:২৩:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর২৪.কম) আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে কক্সবাজারের উখিয়ার ১৬ নম্বর শফিউল্লাহ কাটা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বসতবাড়ি, লার্নিং সেন্টার, শিশু পার্কসহ ৬ শতাধিক স্থাপনা। সবকিছু হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিন কাটছে আড়াই হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের। একে তো প্রচণ্ড শীত, তার ওপর বসতি হারিয়ে চরম কষ্টে পড়েছেন এসব রোহিঙ্গা। তবে দ্রুত রোহিঙ্গাদের শেল্টার নির্মাণ করে দেওয়ার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াত। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে একটি কমিটি গঠন করেছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর ক্ষতিগ্রস্ত বসতি ও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানানো হবে বলে তিনি জানান। সোমবার সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারসহ প্রশাসনের পদস্হ কর্মকর্তা ও এনজিও প্রতিনিধিগণ পোড়া স্থান পরিদর্শন করেছেন।
সূত্র জানায়, আগুন লাগার পর কোনো রকম পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন রোহিঙ্গারা। বসতি ছাই হবার পাশাপাশি পুড়ে গেছে কাপড়চোপড়, আসবাবপত্র ও খাদ্যসামগ্রী। সোমবার সকাল না হতেই আত্মরক্ষার্থে যাওয়া রোহিঙ্গারা ফিরছেন পুড়ে যাওয়া বসতিতে। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া বসতিতে খুঁজে বেড়াচ্ছেন সংসারের কিছু পাওয়া যায় কি না। কিন্তু কিছুই মিলছে না। আগুন কেড়ে নিয়েছে তাদের সব সম্বল। শুধু দাঁড়িয়ে আছে বসতির পিলারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্ত শাহিনা আক্তার বলেন, ‘বিকালে হঠাত্ আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যায়। মুহূর্তে চারিদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। নগদ টাকা, আসবাবপত্র, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, পাসপোর্টসহ সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। গতকাল থেকে সকাল পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাইনি।’ আরেক ক্ষতিগ্রস্ত সাবেকুন নাহার বলেন, ‘হঠাত্ আগুনের লেলিহান শিখা দেখে বাচ্চাদের নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। বাড়ির সব পুড়ে গেছে। নিঃস্ব অবস্থায় আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’
৮ নম্বর এপিবিএন-এর অধিনায়ক পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার খান জানিয়েছেন, শফিউল্লাহকাটা পুলিশ ক্যাম্প-১৬-এর আওতাধীন এফডিএমএন ক্যাম্প-১৬-এর ব্লক বি-১-এ রবিবার রান্না করার সময় চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিক তদন্েত উঠে এসেছে। এতে ৬ শতাধিক স্থাপনা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আনুমানিক অর্ধশত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি জানান, ভুক্তভোগীদের ক্যাম্প-১৬-এর অন্তভুর্ক্ত সব লার্নিং সেন্টার, মাদ্রাসা ও মক্তব, ওমেন ফ্রেন্ডলি স্পেস, আত্মীয়স্বজন এবং পাশের ক্যাম্পে রাতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্তদের রাতে শুকনো খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছে এনজিও সংস্থা ব্র্যাক ও রিক। সকালে খাবার সরবরাহ করেছে এনজিও সংস্থা এমএসআই। ক্যাম্পে কাজ করা তুরস্কের টিকা এনজিওর কো-অর্ডিনেটর মো. ফারুক জানিয়েছেন, তাদের পরিচালিত রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য স্থাপিত একমাত্র শিশুপার্ক, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র, অফিস কক্ষ ও স্থাপনা পুড়ে যায়।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে রোহিঙ্গা নিবাসের পাশাপাশি পুড়েছে স্থানীয় বসতিও। বসতি হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে দিন কাটছে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় পরিবারগুলোর। শীতের কাপড়, খাদ্য ও পানিসংকটে চরম কষ্টে রয়েছেন তারা।
আইওএম-এর ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ বলেন, কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার মো. শামছুদ্দৌজা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইউএনএইচসিআর-এর পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে তাঁবু। রাতের আশ্রয় তৈরির কাজ করছে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে।
সূত্র জানায়, গত এক বছরে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এখন পর্যন্ত তিনটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গত বছরের ২২ মার্চ রাতে উখিয়ার ৮ ও ৯ নম্বর ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনে বহু বসতি পুড়ে যায় এবং ১১ জন নিহত হয়। গত ২ জানুয়ারি অগ্নিকাণ্ডে আইওএম পরিচালিত একটি করোনা হাসপাতাল ও তার পাশের কয়েকটি বসতি পুড়ে যায়। -অনলাইন ডেস্ক