প্রতিনিধি ১৩ জানুয়ারি ২০২২ , ৭:২৬:১২ প্রিন্ট সংস্করণ
(দিনাজপুর২৪.কম) গত বছর বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং গুমের প্রমাণ নিয়ে জাতিসংঘ ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর উত্থাপিত উদ্বেগগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২২’–এ কথা বলা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সরকার অধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং এমনকি শিশুদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে, যারা কভিড-১৯ মহামারিতে সরকার বা এর প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২২’ ৭৫২ পৃষ্ঠায় প্রায় ১০০টি দেশের মানবাধিকার চর্চার বিষয় পর্যালোচনা করে।
প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথ প্রচলিত অভিজ্ঞতাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, স্বেচ্ছাচারী কর্তৃত্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। গ্রেপ্তার বা গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশে সম্প্রতি বিপুলসংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। এতে প্রমাণিত হয় যে গণতন্ত্রের আহ্বান এখনো শক্তিশালী রয়েছে। এদিকে স্বৈরাচারীরা তাদের পক্ষে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা আরও কঠিন বলে দেখতে পাচ্ছে।
গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়টিও প্রতিবেদনে তুল ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯ মাস বিচার–পূর্ববর্তী আটকাবস্থার পর কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। ফেসবুকে কোভিড-১৯ নিয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করায় ওই সময় তাকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মে মাসে, কোভিড-১৯ মহামারির প্রতিক্রিয়ায় অসদাচরণের বিষয়ে রিপোর্ট করার পর কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে রাজনৈতিক সমালোচকদের নির্বিচার গ্রেপ্তার ও বিচার করেছে, এমনকি সরকারের সমালোচনাকারী প্রবাসী সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যদেরও টার্গেট করেছে।
রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপজ্জনক আবহাওয়াপ্রবণ পরিস্থিতি রয়েছে এবং পর্যাপ্ত সেবার অভাব রয়েছে সেই ভাসানচর দ্বীপে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য কার্যক্রম শুরু করার উদ্দেশ্যে, সরকার জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা, ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।
বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে দ্বীপের বসবাসযোগ্যতা, নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব এবং সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার মূল্যায়নের জন্য অপেক্ষা করার প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে সেখানে প্রায় ২০ হাজার শরণার্থীকে স্থানান্তর করে ফেলেছে। মিয়ানমারে ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থান রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনাকে আরও সংকীর্ণ করে তুলেছে।
রোহিঙ্গা শিবিরে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা মুহিবুল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা অধিকারকর্মীকে গুলি করে হত্যা করে। আশ্রয়শিবিরের একটি ইসলামিক শিক্ষালয়ে হামলায় সাত শরণার্থীকে হত্যা করা হয়েছিল, যার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল।
গত বছরের দুর্গাপূজার সময় হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িতে হামলা ও হতাহতের ঘটনাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলায় পাঁচ আসামিকে খালাস দেওয়ার প্রসঙ্গটিও আসে এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার উদ্বেগজনক বৃদ্ধি মোকাবিলার জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়ে কর্মীরা সারা দেশে বিক্ষোভ করার এক বছরের বেশি সময় পর এই রায় আসে। কর্তৃপক্ষ এখনো একটি যৌন হয়রানি বিল পাস করতে পারেনি, এ ছাড়া সাক্ষীর সুরক্ষা দিতে বা বৈষম্যমূলক আইন সংশোধন করতে পারেনি। -অনলাইন ডেস্ক